Ajker Patrika

ট্রেনের ধীরগতিতে শিডিউল বিপর্যয়

শাহীন রহমান, পাবনা 
ট্রেনের ধীরগতিতে শিডিউল বিপর্যয়

নির্বাচনের আগে কয়েক জায়গায় ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করেছিল দুর্বৃত্তরা। ওই অবস্থায় নাশকতা রোধে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে রেলের পশ্চিমাঞ্চলের পাকশী বিভাগের আওতায় চলাচল করা ট্রেনগুলোর গতি কমিয়ে প্রায় অর্ধেক করা হয়। সেই ধীরগতির কারণে দেখা দিয়েছে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়। এতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।

স্বাভাবিকের তুলনায় দিনে এক-তৃতীয়াংশ এবং রাতে প্রায় অর্ধেক গতি কমিয়ে চলাচল করায় এমন শিডিউল বিপর্যয় বলে জানিয়েছে 
রেল কর্তৃপক্ষ। পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহ সুফি নূর মোহাম্মদ বলেন, সম্প্রতি ট্রেনে বেশ কয়েকটি নাশকতা হয়েছে। তাই নাশকতার শঙ্কায় সব ট্রেনকে ধীরগতিতে চলাচলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি ঠিক হলে শিডিউল বিপর্যয় কেটে যাবে।

গতি কমিয়ে চলার কারণে গন্তব্যে পৌঁছাতে ট্রেনগুলোর সময় বেশি লাগছে ৪ থেকে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, খুলনা থেকে রাত ৯টা ১৫ মিনিটের ‘সীমান্ত এক্সপ্রেস’ এক সপ্তাহ ধরে ছাড়ছে রাত ১২টার পর। একইভাবে চিলাহাটি থেকে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার সীমান্ত এক্সপ্রেস ছাড়ছে রাত ১১টার পর। ‘রূপসা এক্সপ্রেস’ খুলনা থেকে সকাল সোয়া ৭টার স্থলে ছাড়ছে দুপুর ১২টার দিকে এবং চিলাহাটি থেকে সকাল সাড়ে ৮টার ট্রেন ছাড়ছে বেলা ১টা ৩০ মিনিটে।

একইভাবে পাকশী দিয়ে চলাচল করা একতা এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, চিলাহাটি এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেসসহ সব ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছেছে অস্বাভাবিক দেরিতে। ঈশ্বরদী থেকে ঢালারচর পর্যন্ত চলাচলকারী ‘ঢালারচর এক্সপ্রেস’ ট্রেনও ধীরগতিতে চলাচল করায় শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে। এতে প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাজারো যাত্রীকে।

রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সাধারণ নিয়মে এসব ট্রেন ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯৫ কিলোমিটার বেগে চলাচল করে। তবে রেলপথে নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় দিনে গতি কমিয়ে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার এবং রাতে ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার করা হয়েছে। এ কারণে প্রতিটি ট্রেনই গন্তব্যে পৌঁছাতে বিলম্ব করছে।

গতকাল শনিবার রেলওয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও বিভাগীয় কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যেও ট্রেনগুলোকে দেরিতে চলাচল করতে দেখা গেছে। ঢাকা থেকে পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস এ দিন সকাল ১০টার স্থলে বেলা ২টা ৩০ মিনিটে, ঢাকা থেকে সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটের নীলসাগর এক্সপ্রেস বেলা ২টায়, রংপুর এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে সকাল ৮টার পরিবর্তে দুপুর ১২টায় এবং ঢাকাগামী চিলাহাটি এক্সপ্রেস সকাল ৬টার পরিবর্তে দুপুর সাড়ে ১২টায় স্টেশন ছেড়েছে।

ঈশ্বরদী স্টেশনে ঢাকাগামী যাত্রী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) ঢাকা থেকে আসতে ট্রেন অনেক দেরি করে ছেড়েছে। আজ (শনিবার) ঢাকা যাওয়ার সময়ও ট্রেন ৫ ঘণ্টা দেরি। এভাবে আমাদের খুব সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’

ঈশ্বরদী স্টেশনে কথা হয় নাকিব হোসেন নামের আরেক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, নাশকতার শঙ্কায় যদি ট্রেন দেরি করে চালাতে হয়, তাহলে নিরাপত্তা বাড়ানো হোক ট্রেনে ও স্টেশনগুলোতে। সব ট্রেনের সব যাত্রীকে কষ্ট দেওয়ার মানে হয় না।

ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট মহিবুল ইসলাম বলেন, রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় ট্রেন ধীরগতিতে চলাচলের নির্দেশনা দেওয়ায় ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছাতে বিলম্ব করছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে শিডিউল ঠিক হয়ে যাবে।

৫ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডে দুই নারী ও এক শিশুসহ চারজন মারা যায়। এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর ভোরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন লেগে মা-শিশুসহ চারজনের মৃত্যু হয়। রেললাইন কেটে ফেলায় গত ১৩ ডিসেম্বর গাজীপুরের ভাওয়াল রেলস্টেশন এলাকায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে এক যাত্রী নিহত ও সাতজন আহত হন।

তবে রেলপথে সরাসরি আক্রমণের প্রথম ঘটনা ঘটে ১৬ নভেম্বর। টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের দুটি কোচে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এরপর ১৯ নভেম্বর জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেন পরিকল্পিত নাশকতার শিকার হয়। এ দুই ঘটনায় কোনো প্রাণহানি না হলেও বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত