Ajker Patrika

আবার ঢল, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জ
আপডেট : ১৭ মে ২০২২, ১৫: ৪৮
আবার ঢল, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি বেড়েছে। গতকাল সোমবার বেলা ৩টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এমন অবস্থায় নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

সুরমা নদীর তীরবর্তী ইব্রাহিমপুর, সদরগড় ও মল্লিকপুর এলাকার নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এসব এলাকার অভ্যন্তরীণ সড়কে পানি ওঠায়. চলাচল করতে পারছে না সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা।

ইব্রাহিমপুর গ্রামের মঙ্গল দাস বলেন, ‘বন্যার পানি আইয়া রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। ওখন আমরা ঘর থাইকা বাইর হইতাম পারতাছি না।’

একই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মতিন বলেন, ‘রাস্তায় পানি আইসা সবচেয়ে বড় সমস্যা হইছে বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের। হাঁটুপানি দিয়েই শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যাতায়াত করছে।’

এদিকে পাহাড়ি ঢলে অনেকের বসতভিটা ও ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে। সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার প্রায় ২০০ হেক্টর ব্রি-২৯ জাতের ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। পানির নিচে থাকা পাকা ধান কেটে নিচ্ছেন কৃষকেরা। ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের ফলে নদীর পানি বাড়ায় সুরমা নদী তীরবর্তী ইব্রাহিমপুর, হালুয়ারঘাট, সদরঘর, মল্লিকপুর এলাকায় পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। সড়কে পানি ওঠায় চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

জেলা পাউবো সূত্র জানায়, আগামী ৭২ ঘণ্টায় ভারতের আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ছালামপুর গ্রামের ফুলমালা বেগম বলেন, ‘ছয় থেকে সাত কানি খেত করছিলাম, সব বন্যার পানিতে গেছেগা। ধানও গেছে বাড়িঘরও ভাইঙ্গা যাইতাছেগা। আমরা ওখন কেমনে চলুম চিন্তায় আছি।’

একই গ্রামের মালেকা বেগম বলেন, ‘পাঁচ কেয়ার জমি করছিলাম। এক কেয়ার কোনো রকম কাটতাম পারছি। বাকি সব পানির তলে গেছে।’

যদিও সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের শতভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। তবে কাটার বাকি ছিল উন্নত জাতের ধানগুলো। যেগুলো হাওরের উপরাংশে চাষাবাদ হয়ে থাকে। এসব ধান এখনো আধা পাকা অবস্থায় আছে। হঠাৎ ঢলের পানি আসায় জমির ধান আর কাটতে পারেননি কৃষকেরা। এ ছাড়া গবাদিপশুর খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তাঁরা। গত দুদিনের ঢলে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে খড়।

সদর উপজেলার লালপুর গ্রামের আইয়ুব আলী বলেন, ‘আমরা খাই আর না খাই গরু বাছুরের খাওন কই পাইমু। হঠাৎ কইরা পাহাড়ি ঢল আইয়া বাড়ির সামনে থাকা সব খড় ভাসাইয়া নিয়া গেছে।’

এমন পরিস্থিতি আরও তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে পাউবো কর্মকর্তারা।

পাউবোর প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এই বৃষ্টির পানি সীমান্ত নদীগুলো দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

ছাতক: টানা এক সপ্তাহের বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়ে পড়েছে উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে উঁচু জমির কয়েক শ একর বোরো ফসল। সোমবার বিকেল পর্যন্ত ছাতকে সুরমা, পিয়াইন, চেলা নদীসহ সকল নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

ইতিমধ্যে ঢলে তলিয়ে গেছে রাস্তা, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বীজতলা ও উঁচু জমির বোরো ফসল। পৌরসভাসহ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। শহরের নিচু এলাকার বাসাবাড়িতে পানি ঢুকেছে।

এদিকে ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার। এতে শহরের সকল ক্রাশার মিল বন্ধ রয়েছে। নদীতে কার্গো লোডিং আনলোডিং ও বন্ধ। ফলে শত শত শ্রমিক এক সপ্তাহ ধরে বেকার হয়ে পড়েছেন। গতকাল সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিতে ছাতক-সিলেট সড়কের ফায়ার সার্ভিস এলাকা তলিয়ে গেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুনুর রহমান জানান, দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত