Ajker Patrika

বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে কালা নদীর পানি

নকলা ও নালিতাবাড়ী প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ জুন ২০২২, ১৩: ০৫
বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে কালা নদীর পানি

একটানা প্রবল বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের নকলায় বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের কারণে উরফা ইউনিয়নের কালা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ভাঙন শুরু হয়েছে নদীর পাড়ের তারাকান্দা হয়ে পিছলাকুড়ি পাকা সড়কে। সড়কটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে আশপাশের প্রায় ৫ হাজার মানুষের। এতে নতুন করে বন্যার পানিতে প্লাবিত হবে সড়কের দক্ষিণ পাশের অনেক এলাকা। তা ছাড়া প্রবল স্রোতের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে পিছলাকুড়ি সেতু ও তারাকান্দা রাবার ড্যাম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্যার পানিতে ২ নম্বর নকলা ইউনিয়নের ধামনা ও ধনাকুশা নদীর পাড় এবং ৩ নম্বর উরফা ইউনিয়নের উরফা, পিছলাকুড়ি, কুড়েরকান্দা, তারাকান্দা, বেনীরগোপ, কোনা-লয়খা ও হাসনখিলা গ্রামের প্রায় ৩ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তলিয়ে গেছে কয়েক শ হেক্টর জমির মৌসুমি শাকসবজি। অনেক বাড়িতে উঠে পড়েছে বন্যার পানি। দেখা দিয়েছে গবাদিপশুর খাদ্যের সংকট। উপার্জন বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছেন দিনমজুর ও নিম্নআয়ের মানুষ।

পিছলাকুড়ি গ্রামের কৃষক আলমাছ উদ্দিন (৬০) জানান, বন্যার পানিতে তাঁর পুরো বাড়ি ডুবে গেছে। তলিয়ে গেছে মৌসুমি শাকসবজির আবাদসহ ফলদ ও বনজ বৃক্ষের বাগান।

উরফা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরে আলম তালুকদার ভুট্টো জানান, নদী থেকে ড্রেজার মেশিনে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে তারাকান্দা হয়ে পিছলাকুড়ি বাজার পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার পাকা সড়কে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনরোধে এখনই কোনো ব্যবস্থা না নিলে সড়কটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তা ছাড়া পানি বাড়তে থাকলে ইউনিয়নে আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হবে। সেই সঙ্গে বাড়বে জনদুর্ভোগ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এবং সহসা তা সরে না গেলে কৃষকের আমন ধানের বীজতলা তৈরিতে সমস্যা হবে এবং অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবে কৃষক পরিবারগুলো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গতকাল রোববার বিকেলে ১৫০ জন বানভাসির মধ্যে ১০ কেজি করে চালসহ, তেল, ডাল, আলুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও সহায়তা দেওয়া হবে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘বন্যার পানিতে উরফা ইউনিয়নের কুড়ের কাঁচাপাকা সড়কের অনেকাংশ তলিয়ে গেছে। সড়কের অনেক জায়গায় ভাঙন শুরু হয়েছে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে এলাকাবাসী।’

এদিকে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে হওয়া ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয় উপজেলার প্রায় ৩০ গ্রাম। গত শনিবার রাত থেকে এসব ঢলের পানি নামতে শুরু করেছে। অনেক জায়গায় পানি কমে গেছে। তবে ফুটে উঠেছে বন্যার্ত মানুষের ভোগান্তির চিত্র।

উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় ও জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানা যায়, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার বেশ কয়েকটি বাঁধ ভেঙে পানির তোরে উপজেলার রাস্তা-ঘাট ভেঙে গেছে। এতে উপজেলার প্রায় ২৬০ মিটার পাকা সড়ক, প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক ভেঙে গেছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলার যোগানিয়া, কলসপাড় ও মরিচপুরান ইউনিয়নের সড়ক গুলো। এতে চলাচলে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া পানির তোড়ে উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নে ২টি এবং বাঘবেড় ইউনিয়নে ১টি স্টিলের সেতু ভেসে গেছে।

রোববার সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় মানুষের ভোগান্তির চিত্র। সড়ক ভাঙা থাকায় চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীর। ঢলের পানি নেমে গেলেও বসতঘরে থাকার যেন উপায় নেই। রান্না করে কীভাবে দুবেলা খাবেন তা নিয়ে শঙ্কা অনেক পরিবারের। কেউবা আতঙ্কে আছেন নতুন করে আবার ঢলের পানি আসা নিয়ে। বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গেও কথা হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই সংস্কারকাজ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত