Ajker Patrika

মাছ ধরছে ৩ হাজার শিশু

এস আই মুকুল, চরফ্যাশন
আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২১, ০৯: ২২
মাছ ধরছে ৩ হাজার শিশু

ভোলার চরফ্যাশনে উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ শিশু মাছ ধরার পেশায় জড়িত। পরিবারের অভাবের কারণেই শিশুরা এ পেশায় যুক্ত হচ্ছে বলে জানা গেছে। যে সময় শিশুদের স্কুলে থাকার কথা, সেই সময় তারা নদী কিংবা সাগরে মাছ ধরতে ব্যস্ত। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এসব শিশুকে স্কুলে ফেরাতে সরকারের পক্ষ থেকে উপবৃত্তিসহ নানা ব্যবস্থা রয়েছে।

উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, চরফ্যাশন উপজেলার ৩ হাজার শিশু জেলে পেশায় নিয়োজিত। এসব শিশুর বয়স ৭ থেকে ১৪ বছর। এসব শিশু ছাড়া উপজেলায় প্রায় ৯০ হাজার জেলে রয়েছে। নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৪ হাজার ২৮১ জন। অনিবন্ধিত জেলে রয়েছে প্রায় ৪৬ হাজার। এসব জেলেরা নদী ও সাগরে মাছ শিকার করে। এ অঞ্চলে প্রায় ১২ হাজার ট্রলার ও নৌকা রয়েছে। এছাড়াও গভীর সমুদ্রগামী ৭ হাজার ট্রলার রয়েছে।

চরফ্যাশন উপজেলার আসলামপুর এলাকার কালু মাঝির ছেলে মনির (১১) ও মিজান (১৪)। তারা বাবার সঙ্গে মাছ ধরতে যায় নদীতে। কোনো কোনো সময় বাবার অনুপস্থিতিতে তারা নৌকার হাল ধরে।

তাদের বাবা কালু মাঝি বলেন, ‘আমার পরিবারে ছয়জন মানুষ। একজনের রোজগারে হয় না। নদীতে জাল ফেলা, মাছ ধরা, ঘাটে বিক্রিসহ এত কাজ একা করা সম্ভব হয় না। ফলে বাধ্য হয়ে দুই ছেলেকে নিজের সঙ্গে কাজে নিয়ে যাই।’

এদের মতো জেলে পরিবারের অধিকাংশ শিশুরা ব্যস্ত সময় কাটায় নদীতে। জেলে নৌকায় বড়দের সঙ্গে শ্রম দিচ্ছে এমন শিশুরা। তারা এ বয়সেই পরিণত হয় একজন দক্ষ মাঝি বা জেলে রূপে। দারিদ্র্যের কারণে উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ এ পেশায় যুক্ত হচ্ছে।

সামরাজ মৎস্যঘাট এলাকার জেলে বশির (৪৫), কামরুল (৩২), জালাল মাঝি (৪২) বলেন, ‘আমরা বাপদাদার পেশায় থেকেই মাছ ধরে আয় রোজগার করছি। আমাদের ছেলেদেরও এই কাজই করতে হবে। দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ আমরা। মাছ না পেলে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। নদীতে না গেলে তো জীবিকার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। লেখাপড়ার করানোর সামর্থ্য নেই।’

চর মাদ্রাজ এলাকার ট্রলার মালিক কবির হোসেন বলেন, ‘সংসারের অভাবের তাড়নায় শিশুরা নৌকা ও ট্রলারে কাজ করে। এসব শিশুরা বাবুর্চির সহকারী, জাল টানা ও জাল থেকে মাছ বাছাই করাসহ মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণে কাজ করে থাকে।’

চর কুকরি মুকরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন বলেন, ‘অভিভাবকদের মধ্যে নেই সচেতনতা। তাছাড়া অভিভাবকেরা জেলে পেশায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। অনেকেই পৈত্রিক পেশার সূত্র ধরে মাছ ধরছে। এর ওপর পরিবারে আর্থিক অনটন তো আছেই। এইসব কারণেই জেলে পরিবারের শিশুরা স্কুলে না গিয়ে কাজে যায়।’

চরফ্যাশন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. খালিদ হোসেন জানান, ‘সরকারের পক্ষ থেকে উপবৃত্তির টাকা, বিনা মূল্যের বই ওদের জন্যও বরাদ্দ থাকে। এসব অনুদান নিয়েও পরিবারের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে কাজে নামে শিশুরা। স্কুলের হাজিরা খাতায় নাম থাকলেও দিন কাটে নদীর বুকে। পৌরসভাসহ উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে প্রাথমিক পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ৬২ হাজার ৮০৬ জন। এসব শিক্ষার্থীর ৩০-৪০ শতাংশ উপকূলীয় এলাকার।’

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার জানান, ‘দারিদ্র্যের কশাঘাত ওদের জেলে পেশায় যেতে বাধ্য করেছে। অনেকেরই স্কুলে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও সম্ভব হয় না। চরফ্যাশন উপজেলায় শিশু জেলের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজারের মতো। এ পেশায় শিশুদের যুক্ত না করতে অভিভাবকদের সচেতন করা হচ্ছে।’

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মামুন হোসেন জানান, ‘বাবা-মায়ের অসচেতনতার কারণে এসব শিশুর ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে। শিশু জেলেদের স্কুল ভর্তি নিশ্চিত করা গেলে এদের উপবৃত্তির আওতায় আনা হবে। তাছাড়া এতিম শিশুদের জন্য চরফ্যাশনে এতিমখানা ও ভোলাতে দুইটি শিশু পরিবার (বালক-বালিকা) রয়েছে। সেখানে ১৮ বছর পর্যন্ত এদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছে সরকার।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত