Ajker Patrika

কোরবানির পশুর ঘাটতি

সিলেট প্রতিনিধি
আপডেট : ০২ জুলাই ২০২২, ১৫: ০৭
Thumbnail image

চলমান বন্যায় বিপর্যস্ত সিলেট-সুনামগঞ্জের মানুষ। আর মাত্র সাত দিন পর কোরবানির ঈদ। সরকারি হিসাব অনুযায়ী গেল বছরের তুলনায় এবারের ঈদে সিলেট বিভাগে কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা বাড়লেও চাহিদার তুলনায় রয়েছে ঘাটতি। এ বছর কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৮০৩ টি। আর এর বাইরে প্রান্তিক কৃষক ও পারিবারিকভাবে পালিত আরও ১ লাখ ৫০ হাজার ৪০৩টি কোরবানিযোগ্য পশু আছে।

এবার সিলেট বিভাগে কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৪ লাখ ৮ হাজার ৯৮০টি। সিলেট বিভাগে এ বছর ১৪ হাজার ৭৭৪টি পশুর ঘাটতি রয়েছে। তবে প্রাণিসম্পদ ও বিভিন্ন খামারির কাছ থেকে পাওয়া এসব পশুর হিসাব দ্বিতীয় দফার বন্যার আগের। বন্যায় অনেক গবাদিপশু ভেসে গেছে বলে দাবি খামারিদের। অনেকের কোরবানির জন্য পালন করা পশুও বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। তবে প্রাণিসম্পদ অফিস বলছে, বন্যা কোরবানিযোগ্য পশু খাতে কোনো প্রভাব ফেলবে না।

এদিকে কোন জেলায় কতগুলো পশুর হাট বসবে পুরোপুরি সেই তথ্য নেই স্থানীয় প্রশাসনের কাছে। হবিগঞ্জের স্থানীয় সরকার শাখার উপপরিচালক বিজেন ব্যানাজি বলেন, বাহুবল, বানিয়াচং ও হবিগঞ্জ সদরে পাঁচটি করে পশুর হাট বসবে। একই ভাবে মৌলভীবাজারের স্থানীয় সরকার শাখার সহকারী কমিশনার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. দুলাল হোসেন জানান, অস্থায়ীভাবে ১৪টি হাটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

আর সুনামগঞ্জের স্থানীয় সরকার শাখার সহকারী কমিশনার মোহন মিনজি বলেন, ‘চারটি উপজেলা থেকে প্রস্তাবনা এসেছে। এগুলো এখনো অনুমোদন হয়নি। আরও দু একদিন সময় লাগবে।’

তবে সিলেট জেলা ও মহানগরে ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৫১টি কোরবানির পশুর হাট বসার অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। গত বুধবার বিকেলে ঈদ উদ্‌যাপন ও অস্থায়ী পশুর হাট স্থাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান।

কোরবানি উপলক্ষে সিলেটে সবচেয়ে বড় পশুর হাট বসে নগরীর কাজিরবাজারে। বন্যায় এখন তলিয়েছে আছে সেই এলাকা। এ কারণে হাট বসেনি সেখানে। পানি না কমলে সেখানে হাট বসানো যাচ্ছে না। জেলার বেশির ভাগ হাটগুলো তলিয়ে যাওয়ায় পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরাও।

কাজিরবাজার পশুর হাটের ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেন লোলন বলেন, ‘বন্যার পানি থাকায় কোরবানির হাটের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারিনি। বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাটে স্থানীয় খামারি, প্রান্তিক কৃষক ও ব্যবসায়ীরা পশু নিয়ে আসেন। কিন্তু এবারের বন্যায় স্থানীয়রা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কারও পালিত পশু মারাও গেছে। সড়ক ভেঙে যাওয়ার কারণে অনেকে পশুর গাড়ি নিয়ে নাও আসতে পারেন। তাই কোরবানির হাটে পশু ওঠা ও দামের ক্ষেত্রে এবার প্রভাব পড়বে।’

সিলেট বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অফিস জানায়, সিলেট বিভাগে ১৪ হাজার ৯৭১ জন খামারির কাছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৮০৩টি কোরবানি যোগ্য পশু আছে। বিভাগের চার জেলার মধ্যে সিলেট জেলায় কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ৭৭ হাজার ৩৯২টি।

সিলেট বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের পরিচালক ড. মোহাম্মদ জাকির হোসেন জানান, ‘সিলেটে কোরবানির পশুর কিছু ঘাটতি রয়েছে। তবে এটি খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। অন্যান্য জায়গার ব্যবসায়ী ও খামারিরাও সিলেটের বাজারগুলোয় পশু বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন।’

চলতি বন্যায় সিলেটের চার জেলায় ১২৩ কোটি টাকারও বেশি পশুসম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি সিলেট বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায় ২ হাজার ৭৭৬টি গবাদিপশুর খামার, হাঁস-মুরগি ৩ হাজার ৩৬টি খামার ক্ষতির মুখে পড়েছে। আনুমানিক মূল্যে ক্ষতির পরিমাণ ১২৩ কোটি টাকারও বেশি বলে জানিয়েছে বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়।

সিলেট বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অফিসের পরিচালক ড. মোহাম্মদ জাকির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বন্যায় বিভাগে কতগুলো গবাদিপশু মারা গেছে এর সঠিক পরিসংখ্যান করতে আরও দুই একদিন সময় লাগবে। তথ্য সংগ্রহসহ সার্বিক বিষয়ে আমাদের ৭৬টি দল মাঠে কাজ করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত