Ajker Patrika

অযত্নের খেজুরগাছের কদর

মাহিদুল ইসলাম মাহি, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) 
Thumbnail image

শীত মৌসুম শুরু হতেই সারা বছর অযত্নে থাকা খেজুরগাছের কদর বেড়ে যায়। একসময় প্রায় প্রতিটি বাড়িতে পিঠাপুলির উৎসব ছাড়াও আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠানোর জন্য পিঠা তৈরি করা হতো। এ জন্য মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের বিভিন্ন ধরনের গুড়ের চাহিদা ছিল দেশজোড়া।

তবে হাজারি গুড়ের জন্য দেশখ্যাত হরিরামপুরে কমে গেছে এর উৎপাদন। শীতে পিঠাকেন্দ্রিক পারিবারিক আয়োজন ও খেজুরগাছ কমে যাওয়া এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া পরিশ্রম ও ঝুঁকির জন্য রস সংগ্রহ করার গাছিও কমে গেছে।

গ্রামাঞ্চলে আগের মতো পিঠা উৎসব না হলেও হরিরামপুরে এখনো গাছিরা গুড় তৈরি করেন। তাঁদের হাত ধরেই এই অঞ্চলের ঐতিহ্য হাজারি গুড় এখনো টিকে আছে।

গত মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার বয়ড়া ইউনিয়নের যাত্রাপুর, চালা ইউনিয়নের আগ্রাইল, পশ্চিম খলিলপুর এলাকায় বিল্লাল মিয়া নামের গাছিকে খেজুরগাছ চেঁচে মাটির হাঁড়ি বেঁধে দিতে দেখা যায়। তাঁর সঙ্গে দুজন সহযোগী রয়েছেন। তাঁরাও গাছে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

বিল্লাল মিয়া বলেন, ‘রাজশাহী থেকে এসে কয়েক বছর ধরে খেজুরের গুড় তৈরি করছি। অনেক পরিশ্রম। এ জন্য এ পেশায় কেউ থাকতে চান না। ফজরের আজানের পরই গাছ থেকে রসের হাঁড়ি পাড়ার কাজ শুরু হয়। আবার দুপুর থেকে গাছ কাটতে যেতে হয়।’

চালা ইউনিয়নের সাকুচিয়া গ্রামের গাছি মো. আলাল বলেন, ‘আগে আমাদের দারুণ কদর ছিল। মৌসুম শুরুর আগে থেকেই কথাবার্তা পাকা হতো কার কটি খেজুরগাছ কাটতে হবে। আগের মতো এখন আর খেজুরগাছ নেই। আগে সকালবেলা খেজুরের রস সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করতাম। আয়ও বেশি হতো। এখন গাছ কম, গুড়ও কম হয়। এ বছর অর্ধশতাধিক খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করছি।’

গৃহস্থালি কাজের ফাঁকে শীত মৌসুমে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করেন ঝিটকার উজানপাড়া গ্রামের এক সময়ের ব্যস্ততম গাছি করিম মোল্লা। তিনি বলেন, ‘আগের মতো এখন আর গাছ নেই। রসও কম হয়। তবে হাজারি গুড়ের চাহিদা বেশি। অন্যদের গাছ ৫০০ টাকা করে কিনে নিয়ে কাটি। লাল গুড়ও তৈরি করি।’

প্রায় ৪০ বছর ধরে খেজুরগাছের ডগা ছাঁটা ও গুড় তৈরি করেন ঝিটকা মধ্যপাড়া গ্রামের গাছি আলম। তিনি জানান, এখন লাল গুড় তৈরি হচ্ছে। ২০-২৫ দিন পরে হাজারি গুড় পাওয়া যাবে। 
যাত্রাপুর গ্রামের আব্দুল মজিদ বলেন, এক যুগ আগেও গ্রামগুলোতে শীতের সকালে হাঁড়ি ও খেজুরগাছ কাটার সরঞ্জাম নিয়ে গাছির ব্যস্ততা চোখে পড়ত। সাতসকালে রস নিয়ে গাছিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাঁক দিতেন। এখন আর সে দৃশ্য চোখে পড়ে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল গফ্ফার বলেন, সারা দেশের মতো হরিরামপুরেও দিন দিন খেজুরগাছ কমে গেছে। উদ্যোগ নিয়ে বেশি বেশি খেজুরগাছ রোপণ করা জরুরি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, হরিরামপুরের ঐতিহ্যবাহী হাজারি গুড় মানিকগঞ্জ জেলা ব্র্যান্ড। চাহিদা বেশি বলে কিছু অসাধু ব্যক্তি ভেজাল গুড় তৈরি করেন। প্রতিবছরই ভেজাল রোধে অভিযান চালানো হয়। এ বছরও ভেজাল রোধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত