Ajker Patrika

দুই দালালের কাণ্ড

সম্পাদকীয়
দুই দালালের কাণ্ড

শ্রীপুর মডেল থানার সামনে দুই শতাধিক মানুষ ভিড় জমিয়েছিল সেদিন রোববার। সবাই কড়ইতলা গ্রামের বাসিন্দা। সঙ্গে ছিলেন তাদের জনপ্রতিনিধি, শ্রীপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আমজাদ হোসেন। তাঁরা সবাই থানায় গিয়েছিলেন দুজন ‘দালাল’-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে। দুই শতাধিক মানুষকে ঠকিয়ে আসছে মাত্র দুজন লোক! 

আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে ইতিমধ্যেই হয়তো অনেকে জেনে গেছেন অভিযুক্ত ওই দুই ব্যক্তির কর্মকাণ্ড। আর যাঁরা মাত্রই পড়ছেন, তাঁদের জন্য তথ্য—অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন গোপালগঞ্জের আক্কাস আলী ও শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পশ্চিমখণ্ড গ্রামের কবির হোসেন। তাঁদের খপ্পরে পড়ে অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষকে তাঁরা ভয়ভীতি দেখান, হয়রানি করেন এবং অর্থ হাতিয়ে নেন। 

রিকশাচালক, দিনমজুর, কৃষকসহ বিভিন্ন পেশার কর্মজীবী মানুষকে ‘টার্গেট’ করে অর্থ হাতিয়ে নেন অভিযুক্তরা। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তুচ্ছ ঝগড়াকে বাড়িয়ে পারিবারিক অশান্তি সৃষ্টি করতে তাঁরা বেশ পটু। এরপর স্ত্রীকে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করতে উদ্বুদ্ধ করা এবং সেই মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বামীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা তাঁদের কাছে কোনো ব্যাপার নয়। কৌশলে পুলিশের নাম ব্যবহার করেই এসব করেন আক্কাস ও কবির। 

ঘটনা শুধু এটুকু নয়। পত্রিকার শ্রীপুর প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা যায় আরও তথ্য। রাত্রিকালীন দায়িত্ব শেষ করে অনেক নারী পোশাকশ্রমিক হয়তো পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে বাড়ি ফেরেন। রাত একটু বাড়লে আমাদের দেশে নারীরা বাইরে চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করেন না। একজন পুরুষ সহকর্মী সঙ্গে থাকলে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছানো যায়। কিন্তু আক্কাস ও কবিরের কারণে কড়ইতলার মানুষেরা সেই নিরাপত্তাটুকুও হারিয়েছেন। ওত পেতে থাকেন অভিযুক্তরা। বাড়ি ফিরতি শ্রমিকদের পথ আগলে মান-সম্মানের ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেন। এ একরকম ছিনতাইও বটে। 

কড়ইতলা গ্রামবাসী আক্কাস ও কবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন এবং জানিয়েছেন, কোনো কোনো পুলিশ কর্মকর্তারও যোগসাজশ আছে এই কর্মকাণ্ডে। অনেক দিন ধরেই গ্রামবাসী কাউন্সিলরকে তাঁদের অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন। অনেক সময় কেউ অভিযোগ করলে তাঁকে উল্টো পুলিশের ভয়ভীতি দেখায় অভিযুক্তরা। কাউন্সিলরও থানায় গিয়ে বারবার চেষ্টা করেছেন অভিযোগ করার। কিন্তু গ্রামবাসীর দাবি, পুলিশ এসব অভিযোগ আমলে নেয়নি।  

এবার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় এত এত মানুষ কাউন্সিলরকে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন থানায়। শেষ পর্যন্ত তাঁরা লিখিত অভিযোগ দিতে পেরেছেন, আক্কাস ও কবিরের বিরুদ্ধে তো বটেই, দুজন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। 
এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। 

এই ঘটনা থেকে শিক্ষা—নিজেদের সংকট নিজেরা সমাধান করা ভালো। নয়তো মধ্যস্থতাকারীর পকেট ভরবে শুধু, সমাধান পাওয়া দুষ্কর হবে। মধ্যস্বত্বভোগীরা সব সময়ই দালালি করে লুটেপুটে খায়, এ কথা পুরোনো। তাই তাঁদের এড়িয়ে চলা শ্রেয়। 
কড়ইতলাবাসীর বাহবা দিতে হয় এ জন্য যে, তাঁরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক হতে পেরেছেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত