মো. জাভেদ হাকিম
অবশেষে এক রাতে বের হয়ে যাই ভয়ংকর সৌন্দর্যের পাহাড়ি পথে। সবকিছু পেছনে ফেলে চান্দের গাড়িতে চড়ে পৌঁছাই সাজেক ভ্যালি। তবে গল্পটা এত সহজ নয়।
খাগড়াছড়ি পেরিয়ে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি। সেখান থেকে কাচালং নদী পেরিয়ে মাচালং বাজার। বাজারে অপেক্ষায় থাকা কংলাকপাড়ার হেডম্যানকে সঙ্গে নিয়ে আবারও ছুট। সাজেক পৌঁছানোর ঠিক পাঁচ কিলোমিটার আগে অপার্থিব দৃশ্যের দেখা পাওয়া গেল এক পাহাড়ের বাঁকে। গাড়ি থামিয়ে চলল ইচ্ছেমতো সেলফি তোলার পালা। সেখানে টং দোকান থেকে দু-চারটা বাংলা কলা পেটে পুরে চলেছি এবার ওপরের দিকে। একটা সময় মনে হলো, ধরতে যাচ্ছি যেন আকাশটাকে! তবে ধরার আগেই পৌঁছে যাই সাজেকের প্রথম পাড়া রুইলুই। প্রথম দেখাতেই চোখ কপালে!
রাতে থাকার জন্য ঠাঁই হলো সাজেক ক্লাব হাউসে। সেখানে কাঁধের-পিঠের ঝোলা রেখে ছুটি কংলাকের পথে। জিপে মাত্র ১০ মিনিটের পথ। এরপর ১৫ মিনিটের চড়াই-উতরাই। কংলাক সাজেকের সবচেয়ে উঁচু সিপ্পু পাহাড়ে অবস্থিত। এর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ হাজার ৮০০ ফুট ওপরে।
কংক্রিটের আলিঙ্গনে এখনো নিজেকে জড়ায়নি বলেই হয়তো কংলাকের প্রকৃতি যেন একটু বেশিই উদার। ঢেউখেলানো পাহাড়ের বুকে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি কমলাবাগান। বড় বড় পুরোনো সেগুন, হরেক রকম বাঁশের বন আর প্রাচীন বটবৃক্ষের মায়াবী পরশে সজ্জিত সাজেক। এর রুইলুই ও কংলাকপাড়ায় মোট ৯৬টি পরিবারের বসতি। এদের বেশির ভাগই লুসাই, পাংখোয়া ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী। প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় ফুটে আছে নানা রঙের ফুল। সাজেকের হেডম্যানের সঙ্গে কথা বলে আদিবাসী জীবনের গল্প হলো অনেক।
রুইলুই ও কংলাক এই দুই পাড়ার আদিবাসীরা অধিকাংশই শিক্ষিত। পাশেই ভারতের মিজোরাম প্রদেশ। সেখানকার সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ বেশি। অধিকাংশ বাসিন্দা পড়ালেখাসহ হাটবাজার পর্যন্ত মিজোরাম থেকেই করে থাকেন। তাঁদের পোশাক ও আচার-আচরণ পুরোটাই আধুনিক। অত্যন্ত বিনয়ী মানুষগুলো বন্ধুবৎসল। পুরো বিকেল কংলাকপাড়ার সিপ্পু পাহাড়ের চূড়ায় কাটিয়ে ঘোর সন্ধ্যায় ফিরি ক্লাব হাউসে।
রাতে বার-বি-কিউ করে পরদিন ভোরে ক্লাব হাউস ছাড়ি। সাজেকের ভোরের আকাশ তখন মায়াবিনী। কপাল ভালো থাকায় মেঘ-বৃষ্টি কিংবা কুয়াশা কিছুই ছিল না।
বন্ধুরা সব সাজেক রিসোর্টের পাশে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছি পূর্ব দিগন্তে। বিকেল ৫টা ২০ মিনিট, আকাশে সূর্যের লালিমা। কিন্তু মিজোরাম পাহাড় ডিঙিয়ে সূর্য দেখা দিতে সময় নেয় বেশ খানিকটা। প্রায় মিনিট বিশেক পর অবশেষে সূর্যোদয়। ধীরে ধীরে বিশাল বেল্টের মিজোরাম পাহাড়টাকে নিচে রেখে সেদিনের লাল টকটকে সূর্য উঁকি দেয় আকাশে। ঢেউখেলানো পাহাড়ের সারি, ঘন অরণ্য আর কমলাবাগানের ফাঁক গলে উদীয়মান সূর্যের সোনামাখা রোদের মিষ্টি আলো ছড়িয়ে পড়ে চরাচরে। এ এক বিস্ময়ের ক্ষণ! বোধের ভেতর নতুন করে জন্ম নেওয়ার ক্ষণ। বড় পবিত্র ক্ষণ।
যেভাবে যাবেন
সাজেক রাঙামাটি জেলায় হলেও খাগড়াছড়ি দিয়ে যোগাযোগের সুবিধা ভালো। ঢাকা থেকে বাসে সরাসরি খাগড়াছড়ির দীঘিনালা বাজার। সেখান থেকে চান্দের গাড়িতে সাজেক ভ্যালি। বাসভাড়া ৫৮০ টাকা। চান্দের গাড়ি রিজার্ভ ৪ হাজার টাকা। পরের দিন ফেরার জন্য গাড়ি রেখে দিলে ভাড়া ৬ হাজার ৫০০ থেকে ৭ হাজার টাকা।
কোথায় থাকবেন
কম টাকায় বিশাল বহর নিয়ে থাকতে চাইলে সাজেক ক্লাব হাউস ভালো জায়গা। ভাড়া মাথাপিছু ২০০ টাকা। এ ছাড়া আছে সেনাবাহিনী পরিচালিত সাজেক রিসোর্ট ও বিজিবি পরিচালিত সাজেকের আইকন রুন্ময় কটেজ। অগ্রিম বুকিং ও মৌসুম অনুযায়ী রুম ভাড়ার তথ্য পাওয়া যাবে ইন্টারনেটে।
কী খাবেন
সাজেকে দুই-তিন দিন থাকার ইচ্ছে থাকলে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে বাজার করে নেওয়া ভালো। সেখানেও কিছু রেস্তোরাঁও আছে।
সতর্কতা
লেখক: প্রধান সমন্বয়ক, দে ছুট ভ্রমণ সংঘ
অবশেষে এক রাতে বের হয়ে যাই ভয়ংকর সৌন্দর্যের পাহাড়ি পথে। সবকিছু পেছনে ফেলে চান্দের গাড়িতে চড়ে পৌঁছাই সাজেক ভ্যালি। তবে গল্পটা এত সহজ নয়।
খাগড়াছড়ি পেরিয়ে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি। সেখান থেকে কাচালং নদী পেরিয়ে মাচালং বাজার। বাজারে অপেক্ষায় থাকা কংলাকপাড়ার হেডম্যানকে সঙ্গে নিয়ে আবারও ছুট। সাজেক পৌঁছানোর ঠিক পাঁচ কিলোমিটার আগে অপার্থিব দৃশ্যের দেখা পাওয়া গেল এক পাহাড়ের বাঁকে। গাড়ি থামিয়ে চলল ইচ্ছেমতো সেলফি তোলার পালা। সেখানে টং দোকান থেকে দু-চারটা বাংলা কলা পেটে পুরে চলেছি এবার ওপরের দিকে। একটা সময় মনে হলো, ধরতে যাচ্ছি যেন আকাশটাকে! তবে ধরার আগেই পৌঁছে যাই সাজেকের প্রথম পাড়া রুইলুই। প্রথম দেখাতেই চোখ কপালে!
রাতে থাকার জন্য ঠাঁই হলো সাজেক ক্লাব হাউসে। সেখানে কাঁধের-পিঠের ঝোলা রেখে ছুটি কংলাকের পথে। জিপে মাত্র ১০ মিনিটের পথ। এরপর ১৫ মিনিটের চড়াই-উতরাই। কংলাক সাজেকের সবচেয়ে উঁচু সিপ্পু পাহাড়ে অবস্থিত। এর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ হাজার ৮০০ ফুট ওপরে।
কংক্রিটের আলিঙ্গনে এখনো নিজেকে জড়ায়নি বলেই হয়তো কংলাকের প্রকৃতি যেন একটু বেশিই উদার। ঢেউখেলানো পাহাড়ের বুকে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি কমলাবাগান। বড় বড় পুরোনো সেগুন, হরেক রকম বাঁশের বন আর প্রাচীন বটবৃক্ষের মায়াবী পরশে সজ্জিত সাজেক। এর রুইলুই ও কংলাকপাড়ায় মোট ৯৬টি পরিবারের বসতি। এদের বেশির ভাগই লুসাই, পাংখোয়া ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী। প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় ফুটে আছে নানা রঙের ফুল। সাজেকের হেডম্যানের সঙ্গে কথা বলে আদিবাসী জীবনের গল্প হলো অনেক।
রুইলুই ও কংলাক এই দুই পাড়ার আদিবাসীরা অধিকাংশই শিক্ষিত। পাশেই ভারতের মিজোরাম প্রদেশ। সেখানকার সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ বেশি। অধিকাংশ বাসিন্দা পড়ালেখাসহ হাটবাজার পর্যন্ত মিজোরাম থেকেই করে থাকেন। তাঁদের পোশাক ও আচার-আচরণ পুরোটাই আধুনিক। অত্যন্ত বিনয়ী মানুষগুলো বন্ধুবৎসল। পুরো বিকেল কংলাকপাড়ার সিপ্পু পাহাড়ের চূড়ায় কাটিয়ে ঘোর সন্ধ্যায় ফিরি ক্লাব হাউসে।
রাতে বার-বি-কিউ করে পরদিন ভোরে ক্লাব হাউস ছাড়ি। সাজেকের ভোরের আকাশ তখন মায়াবিনী। কপাল ভালো থাকায় মেঘ-বৃষ্টি কিংবা কুয়াশা কিছুই ছিল না।
বন্ধুরা সব সাজেক রিসোর্টের পাশে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছি পূর্ব দিগন্তে। বিকেল ৫টা ২০ মিনিট, আকাশে সূর্যের লালিমা। কিন্তু মিজোরাম পাহাড় ডিঙিয়ে সূর্য দেখা দিতে সময় নেয় বেশ খানিকটা। প্রায় মিনিট বিশেক পর অবশেষে সূর্যোদয়। ধীরে ধীরে বিশাল বেল্টের মিজোরাম পাহাড়টাকে নিচে রেখে সেদিনের লাল টকটকে সূর্য উঁকি দেয় আকাশে। ঢেউখেলানো পাহাড়ের সারি, ঘন অরণ্য আর কমলাবাগানের ফাঁক গলে উদীয়মান সূর্যের সোনামাখা রোদের মিষ্টি আলো ছড়িয়ে পড়ে চরাচরে। এ এক বিস্ময়ের ক্ষণ! বোধের ভেতর নতুন করে জন্ম নেওয়ার ক্ষণ। বড় পবিত্র ক্ষণ।
যেভাবে যাবেন
সাজেক রাঙামাটি জেলায় হলেও খাগড়াছড়ি দিয়ে যোগাযোগের সুবিধা ভালো। ঢাকা থেকে বাসে সরাসরি খাগড়াছড়ির দীঘিনালা বাজার। সেখান থেকে চান্দের গাড়িতে সাজেক ভ্যালি। বাসভাড়া ৫৮০ টাকা। চান্দের গাড়ি রিজার্ভ ৪ হাজার টাকা। পরের দিন ফেরার জন্য গাড়ি রেখে দিলে ভাড়া ৬ হাজার ৫০০ থেকে ৭ হাজার টাকা।
কোথায় থাকবেন
কম টাকায় বিশাল বহর নিয়ে থাকতে চাইলে সাজেক ক্লাব হাউস ভালো জায়গা। ভাড়া মাথাপিছু ২০০ টাকা। এ ছাড়া আছে সেনাবাহিনী পরিচালিত সাজেক রিসোর্ট ও বিজিবি পরিচালিত সাজেকের আইকন রুন্ময় কটেজ। অগ্রিম বুকিং ও মৌসুম অনুযায়ী রুম ভাড়ার তথ্য পাওয়া যাবে ইন্টারনেটে।
কী খাবেন
সাজেকে দুই-তিন দিন থাকার ইচ্ছে থাকলে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে বাজার করে নেওয়া ভালো। সেখানেও কিছু রেস্তোরাঁও আছে।
সতর্কতা
লেখক: প্রধান সমন্বয়ক, দে ছুট ভ্রমণ সংঘ
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪