Ajker Patrika

মহাশ্মশানে সৎকারে দুর্ভোগ

নড়াইল প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ৩১
মহাশ্মশানে সৎকারে দুর্ভোগ

নড়াইলের নাওসোনা মহাশ্মশানটি বিছালী ইউনিয়নের বনখলিশাখালী গ্রামের ডঙ্কারের বিলের মাঝখানে অবস্থিত। এ কারণে বর্ষাকালে কেউ মারা গেলে তার সৎকার করতে বেশ দুর্ভোগে পড়তে এই ইউনিয়নের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে।

কেউ মারা গেলে তাঁর মরদেহ শ্মশানে নিয়ে যেতে হয় ভেলা, ডোঙা অথবা নৌকায়। শুকনো মৌসুমে সড়ক হিসেবে ব্যবহার হয় জমির আইলই।

এ শ্মশানে তিন কক্ষের একটি পাকা ভবন থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেটিও বেহাল হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাঁদের সামর্থ্য নেই তাঁদের অনেকেই বর্ষা মৌসুমে বিলের কচুরি পানার নিচে মৃত স্বজনের মরদেহ ফেলে রেখে আসেন। এমন দুর্ভোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে এলাকাবাসী শ্মশানে যাতায়াতের জন্য একটি সড়ক নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা গেছে, বিছালী-আগদিয়াচর সড়কের বনখলিশাখালি সেতু থেকে মহাশ্মশানের দূরত্ব ২ কিলোমিটার। সেতু পার হয়েই যেতে হয় বিল পাড়ের ওই শ্মশানে। বিলের মাঝে একটি উঁচু ভিটার ওপর শশ্মানটি। সেখানে কালী মন্দির, মন্দিরের সামনে একটি মজা পুকুর, একটি নলকূপ, উত্তর পাশে তিন কক্ষ বিশিষ্ট একতলা একটি পাকা ঘর থাকলেও ঘরটি আগাছায় ছেয়ে গেছে। সংস্কারের অভাবে শ্মশানটির অবস্থা জরাজীর্ণ।

এমনই কষ্টের মধ্য দিয়ে নড়াইল সদর উপজেলার বিছালী ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের প্রায় ২০ / ২৫ হাজার হিন্দু সম্প্রদায় মানুষদের মরদেহ সৎকার করতে যেতে হয় নাওসোনা শ্মশানে।

বিছালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য অসিম বিশ্বাস বলেন, ‘শ্মশানে যাতায়াতের কোনো সড়ক না থাকায় একজন মৃত ব্যক্তির সৎকার করতে আশপাশের ১০ গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার হিন্দু সম্প্রদায় মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন।

বনখলিশাখালি গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি শচীন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘আমি মারা গেলে আমারে কিভাবে শ্মশানে নেবে জানি না। অনেককে শ্মশানে নিতে না পারায় খালের কচুরি পানার তলে ফেলে রেখে আসতে বাধ্য হয়েছি।’

আটঘড়িয়া গ্রামের ফাল্গুনি রায় (৭৮) হরিমতি বিশ্বাস (৮২) বলেন, ‘রাস্তা না থাকায় আমরা শ্মশান এবং কালী মন্দিরে আসতে পারি না। আমরা এখানে যাতায়াতের জন্য উপযুক্ত একটি সড়ক চাই।

শ্মশান কমিটির সাধারণ সম্পাদক অলীপ বিশ্বাস বলেন, ‘বিছালী ইউনিয়নের রুন্দিয়া মৌজার খাস খতিয়ানের ২৫ শতক এবং কিনে নেওয়া ৬৪ শতক জমির ওপর এ শ্মশান স্থাপিত। সাবেক সাংসদ ধীরেন্দ্রনাথ সাহা শ্মশানে তিন কক্ষের একটি পাকা ঘর করে দেন। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঘরটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

বিছালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. হেমায়েত হোসাইন ফারুক হিন্দু সম্প্রদায় মানুষদের এ দুর্ভোগ নিরসনে জেলা প্রশাসকসহ প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি কামনা করেছেন।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এমন জনদুর্ভোগের কথা আগে শুনিনি। আমি ওই এলাকা পরিদর্শন করব। এলাকার মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে ওই শ্মশানে যেতে পারেন তাঁর জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে টিআর-কাবিখার সহায়তায় সড়ক নির্মাণ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত