Ajker Patrika

ঐতিহাসিক কোঠাবাড়ী থান

কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২১, ১২: ৪২
Thumbnail image

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় প্রায় ৪৫০ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক নিদর্শন হেলাতলা ইউনিয়নের কোঠাবাড়ীর থান সংস্কার আর সংরক্ষণের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।

ঐতিহাসিক এ নিদর্শনটির বেশির ভাগ অংশই ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। তবে কালের সাক্ষী হয়ে এখনো বটগাছের ছায়াতলে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ধ্বংসাবশেষ। শুভঙ্করকাটি মৌজার কোঠাবাড়ীর থান সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলা শহর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে হেলাতলা ইউনিয়নে অবস্থিত।

কলারোয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও লেখক আবু নাছের বলেন, কোঠাবাড়ীর থান মূলত মোগল আমলে গড়ে ওঠা একটি থান বা খানকা। যেটি বর্তমানে কোঠাবাড়ীর থান নামে পরিচিত। অনেকেই এটিকে কোঠাবাড়ীর দরগা নামেও চেনেন। এ থানকে ঘিরে ছোট্ট গ্রামের নামকরণ করা হয়েছে। কোঠাবাড়ীর গঠনশৈলী থেকে ধারণা করা হয়, এটি সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে নির্মিত হয়েছিল। সে সময় সম্রাটের কয়েকজন দেওয়ান এই কোঠাবাড়ীতে একটি দুর্গ নির্মাণ করার কাজ করেন এবং রাজ্য রক্ষার জন্য সৈন্যদের নিয়ে এখানেই অবস্থান করতেন। এই থান নিয়ে রয়েছে অনেক কুসংস্কার। অনেকেই বলেন, একজন সিদ্ধ পুরুষ বা সাধু তাঁর নিজের কবরের ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রিত জিনের দ্বারা এটি নির্মাণ করিয়ে নেন। কাজ শেষ হওয়ার আগেই যখন মোরগ ডেকে উঠে তখন তাঁরা ভাবে সকাল হয়ে গেছে। তাই নির্মাণকাজ শেষ না করেই চলে যায়। ১৯৩৭ সাল থেকে এখানে নামাজ পড়া এবং মানত করা শুরু হয়। পরবর্তী সময় শুধু মুসলমান নয়, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও এখানে প্রার্থনা করতেন বলে জানা যায়। বর্তমানে এখানে কেউ নামাজ না পড়লেও মানত চলছে আগের মতোই। থানটি সংস্কার ও সংরক্ষণের বিষয়ে ইতিপূর্বে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তবে ফলপ্রসূ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

কোঠাবাড়ীর থানে ৪০ বছর ধরে বাতাসা বিক্রেতা মুল্লুক চাঁদ পশারি বলে, কোঠাবাড়ীর থানের পাশেই ছিল পাঁচটি বড় পাথর। এই পাথরগুলোর কারুকাজ দেখে সহজেই অনুমান করা যায়, এটি কোনো পিলারের ভাঙা অংশ। কিন্তু সেই পাঁচটি পাথর এখন একটিতে দাঁড়িয়েছে। এই থানের মূল দালানের পুরুত্ব ছিল প্রায় ছয় ফুট। এখানে বেশ কিছু টেরাকোটা ইট ছিল। যেগুলোতে পদ্মফুল, মানুষ, লতাপাতা, হাতিসহ বিভিন্ন ধরনের ছবি আঁকানো ছিল। এগুলো দেখে ইতিহাসবিদেরা সহজেই অনুমান করেন, এটি মোগল শাসনামলের কোনো সময়ে তৈরি। কিন্তু টেরাকোটা সেই ইটগুলোও আজ আর সেভাবে চোখে পড়ে না। বর্তমানে এই স্থানটি বাংলাদেশ সরকারের সংরক্ষিত স্থাপনা হিসেবে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

মারুফ হোসেন নামের এক যুবক বলেন, কোঠাবাড়ীর থান নিয়ে অনেক বিভ্রান্তিকর তথ্য শোনা যায়। এর সঠিক ইতিহাস সমৃদ্ধ কোনো সাইনবোর্ড যদি এখানে দেওয়া হয়, তবে ভালো হয়। স্থাপনা নষ্ট হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশনাও সাইনবোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করলে এটি সংরক্ষিত হতে পারে। স্থাপনাটি ঘিরে একটি সীমানা প্রাচীর দিলেও সংরক্ষণের অধিক গুরুত্ব পাবে।

এ বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা বলেন, কোঠাবাড়ীর থান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংরক্ষিত স্থাপনার তালিকাভুক্ত আছে। সংরক্ষিত পুরাকীর্তিটি প্রত্নতাত্ত্বিক খনন এবং সংস্কার, সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যে প্রকল্প প্রণয়নে কাজ চলমান রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত