Ajker Patrika

মাদক পাচারের রুট রৌমারী

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ মে ২০২২, ১৫: ১২
Thumbnail image

চোরাকারবারিরা মাদক পাচারে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বেশ কয়েক এলাকা ব্যবহার করেছেন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। এ উপজেলা থেকে বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে মাদকের চালান। দুয়েকটি ছোট চালান ধরা পড়লেও, বড় চালান থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদিকে এপ্রিল মাসে উপজেলায় মাদকের মামলা হয়েছে ৩৫টি।

ভারতীয় সীমান্তবর্তী রৌমারী উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মাদক পাচার করা হয়। এর মধ্যে যাদুরচর ইউনিয়নের আলগারচর, খেওয়ারচর, বকবান্দা, রৌমারী ইউনিয়নের ঝাউবাড়ি, বড়াইবাড়ি, চরফুলবাড়ি, নওদাপাড়া, খাইটয়ামারী, চর বামনের চর, শৌলমারী ইউনিয়নের বেহুলারচর, গয়টাপাড়া, চর বোয়ালমারী ও দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ধর্মপুর উল্লেখযোগ্য।

অভিযোগ রয়েছে, রৌমারী থেকে ঢাকাগামী বিভিন্ন ট্রাক, পিকআপ ও নৈশকোচের অনেক চালক ও চালকের সহকারীরা মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত। স্থানীয় যান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে মোটরসাইকেল, সিএনজিসহ নানা পরিবহন। নৌপথে ব্যবহার হচ্ছে ইঞ্জিনচালিত নৌকা।

পাচারকাজে বহনকারী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে শিশু-কিশোর, যুবক ও নারীদের। ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ভাড়ায় খাটা এসব মানুষ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিচ্ছেন ইয়াবার চালান।

উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের কর্তিমারী গ্রামের আনিসুর রহমান বলেন, ‘রৌমারী ও পার্শ্ববর্তী রাজিবপুর উপজেলায় প্রায় ৩০ কিলোমিটার রয়েছে সীমান্ত এলাকা। এই এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না থাকার সুযোগে এখানে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে খুব সহজে ভারত থেকে পাচার হয়ে আসছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ ও গাঁজা।’

আনিসুর রহমান আরও বলেন, ‘ভারতের আসাম সীমান্ত দিয়ে নতুন ১৪টি জায়গা হয়ে ইয়াবা ঢুকছে। এসব ইয়াবা রৌমারী থেকে ঢাকা, জামালপুর, ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও রৌমারী ফলুয়ারচর নৌকাঘাট থেকে বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাট এবং গাইবান্ধা ফেরিঘাটকে ইয়াবা পাচারের নতুন রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে আন্তর্জাতিক ইয়াবা পাচার চক্র।

জানা গেছে, মোবাইল নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে ইয়াবাসহ মাদকের বড় চালানগুলো ভারত সীমান্ত থেকে নোম্যান্সল্যান্ডে রাতের অন্ধকারে একত্র হন পাচারকারীরা। বিভিন্ন ব্যক্তির হাত বদল করে ইয়াবার বড় চালান পাচার হয়। ইয়াবার ছোট চালান আসে অন্য কৌশলে। অনেকে পলিথিনে ঢুকিয়ে ছোট ক্রিকেট বলের মতো সুতা দিয়ে পেঁচিয়ে, কাঁটাতারের ওপর ঢিল মেরে এপারের নির্দিষ্ট স্থানে ফেলেন। আগে থেকেই মোবাইলে স্থান ও সময় নির্ধারণ করা থাকে। এক পোঁটলায় ১ হাজার ইয়াবা বড়ি এনে দিলে বিনিময়ে ১ হাজার টাকা দেওয়া হয় বহনকারীদের।

এদিকে সম্প্রতি মাদক কারবারিদের মধ্যে লেনদেনসহ বিভিন্ন দ্বন্দ্বে খুন হন আতিক ও বাবু নামের দুই যুবক। সীমান্তে তাঁদের খুন করে ফেলে রেখে যান সঙ্গীরা। পরে মামলার তদন্তে বেরিয়ে আসে এসব তথ্য। এ ছাড়া এক বছরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীর গুলিতে নিহত হয়েছেন চার যুবক।

৩৫ জামালপুর বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মোন্তাছির মামুন জানান, ‘এপ্রিল মাসে রৌমারী উপজেলায় বিজিবির পক্ষ থেকে মাদকের ৩২টি মামলা করা হয়েছে। মাদক উদ্ধার করা হয়েছে ৫ হাজার ৮৪টি ভারতীয় ইয়াবা বড়ি, ২৫৬ বোতল মদ ও পাঁচ কেজি গাঁজা।’

জানতে চাইলে রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোন্তাছের বিল্লাহ বলেন, ‘এপ্রিল মাসে রৌমারী থানার পক্ষ থেকে মাদকের তিনটি মামলা করা হয়েছে। ২২ জন মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ৪৬ বোতল ভারতীয় মদ ও ৬০৫টি ইয়াবা বড়ি। আমরা মাদকের শূন্য সহনশীল নীতি গ্রহণ করেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত