Ajker Patrika

আনন্দের মধ্যে ভাগ আছে

জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২১, ২০: ৫৯
আনন্দের মধ্যে ভাগ আছে

মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের সামনে মাস্ক-মুখেই সুঘ্রাণটা নাকে আসে। এদিক-ওদিক তাকালে নিরাভরণ ভ্যানটা চোখে পড়ে। একজন এইমাত্র সেই ভ্যানওয়ালার হাত থেকে খিচুড়ি নিয়ে ফুটপাতে রাখা চেয়ারে বসলেন। দুপুর দেড়টায় একটা তোফা ভোজ!

কাছে গেলে বোঝা যায়, বড় একটা হাঁড়িতে রয়েছে খিচুড়ি। সঙ্গে বেশ কয়েকটা ঢাকনা আঁটা ভারি প্লাস্টিকের বাটি। পুরো আয়োজনে পরিচ্ছন্নতার ছাপ।

যিনি বিক্রি করছেন, তার সামনে গিয়ে দাঁড়াই।

‘আপনার সঙ্গে একটু কথা বলা যাবে?

‘যাবে না ক্যানো?’ এ রকম অদ্ভুত প্রশ্ন যেন জীবনে প্রথম শুনলেন।

‘আপনার নাম কী?’

‘মো. আমজাদ হোসেন।’

‘কী বিক্রি করেন?’

‘খাবার বিক্রি করি। খিচুড়ি। এখন প্রায় শেষের দিকে।’ এ কথা বলে তিনি বড় হাঁড়ির ঢাকনা সরিয়ে যা দেখান, তাতে মনে হয়, আজ বিক্রি-বাট্টা ভালোই।

‘কটায় খাবার বিক্রি শুরু করেন?’

‘সকাল সাতটার দিকে আসি। একটা দুইটা পর্যন্ত বিক্রি করি। সকাল থাইকাই মানুষ খায়।’

‘আরো কিছু বাক্স দেখছি। খিচুড়ির সাথে এই বাক্স থেকে কিছু দেন?’

‘ডিম আছে, ভর্তা আছে। শুঁটকি ভর্তা। আলু ভর্তা। ডাইল ভর্তা।’

‘খিচুড়ির সঙ্গে ভর্তার প্যাকেজ?’

কথাটা ঠিকভাবে বোঝেন না তিনি। নিজেই ব্যাখ্যা করেন, ‘শুধু ভর্তা দিয়া খিচুড়ি ৩০ টাকা, ডিম নিলে ৫০ টাকা।’

‘আপনার ছেলেমেয়ে আছে?’

‘ছেলেমেয়ে দুইজন। স্কুলে পড়ে। বড়জন ফোরে। ছোটজন টুয়ে। দেশে থাকে।’

‘দেশ কই?’

‘কুড়িগ্রাম।’

‘ভাবিও কুড়িগ্রামে থাকে?’

‘হ্যাঁ, কুড়িগ্রামে। আমি দুই-তিন মাস পর পর বাড়ি যাই। সপ্তাহখানেক থাকি। কখনো দেখা গেল দুই সপ্তাহ থাকি।’

‘বাড়িতে গিয়ে কিছু করেন?’

‘না। আমি তো আর কোনো কর্ম জানি না। বাড়িতে সবার সঙ্গে সময় কাটাই।’

‘খিচুড়ি নিজেই রান্না করেন?’

‘শেখের ট্যাক দুই নম্বরে থাকি। সেখানেই খিচুড়ি রান্ধি। খিচুড়ি রান্‌তে হইলে রাত তিনটায় উঠতে হবে। তাবাদে পাকশাক করতে হবে।’

‘কী চাল দেন?’

‘দেশি বাসমতি আর পোলাও-এর চাল। রান্না হোটেলে শিখছি।’

‘আয় হয় কত?’

‘খরচের তুলনায় আয় কম হয়। পাঁচ সাত শ টাকা হয়।’

‘লকডাউনের সময় কেমন হতো?’

‘তখন তো বন্ধ ছিল। একবেলা কম খাইছি। একসময় দিনে কিছুই খাই নাই। এখন কোনো রকম চলে আর কি। বেচাকেনা হয়, কোনোভাবে সংসারটা চালাই।’

‘আচ্ছা, জীবন মানে কী, বলেন তো?’

‘জীবনটা মানে হলো কষ্টের জীবন।’

‘আনন্দ নাই কোনো? এই যে আপনার চোখে মুখে তো হাসি দেখছি। এইটা কি আনন্দ না?’

‘এইটা আনন্দ, তবে আনন্দের মধ্যে ভাগ আছে। কেউ হয়তো কষ্টের মইদ্যে আনন্দ করে, কেউ সুখে আনন্দ করে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ব্যাংকের চাকরি যায় জাল সনদে, একই নথি দিয়ে বাগালেন স্কুল সভাপতির পদ

৬৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ: ডেলটা গ্রুপের চেয়ারম্যান ফারুকসহ ১৫ জনের নামে মামলা

১ লাখ ৮২২ শিক্ষক নিয়োগ: যোগ্য প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা চলতি সপ্তাহে

‘মুসলিম ফ্রন্টগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করুন, ইন্টেরিম ভেঙে দিন’

‘বউ আমাকে মিথ্যা ভালোবাসত, টাকা না থাকলে ছেড়ে যাবে, তাই মরে গেলাম’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত