Ajker Patrika

নদী সর্বনাশা!

সম্পাদকীয়
নদী সর্বনাশা!

বাংলায় একটি প্রবাদ আছে—‘নদীর ধারে বাস তো ভাবনা বারো মাস’। প্রবাদটি আমাদের দেশের নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষের জন্য যথার্থ। নদীভাঙনের কয়েকটি ধাপ আছে। সাধারণত বর্ষা শেষে নদীভাঙন দেখা দেয়। বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে পানি আসার কারণে নদী প্রবাহের এলাকা অনেক বেশি বিস্তৃত হয়।

আর বর্ষা শেষ হয়ে গেলে স্রোত ও পানির প্রবাহ অনেক কমে যায়। ফলে নদীর তীর দুর্বল হয়ে দুকূলে ভাঙন দেখা দেয়। এটাই নদীভাঙনের চিরাচরিত নিয়ম। কিন্তু বর্ষার আগেই মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার নয়াকান্দির আরুয়া ইউনিয়নের নদীতীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে বুধবার আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

নদীভাঙনে ক্ষয়ক্ষতির কথা বলে শেষ করা যাবে না। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় আবাদি জমি, বসতবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। এতে ভাঙনপ্রবণ এলাকার মানুষের খাদ্যসংকট, আবাসন সমস্যা ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া চরম ঝুঁকিতে পড়ে। এমনিতেই বাংলাদেশে প্রতিবছর আবাদি জমি কমছে আর বাড়ছে মানুষ।

এক গবেষণামতে, প্রতিবছর বাংলাদেশে গড়ে ৮ হাজার ৭০০ হেক্টর জমি নদীতে বিলীন হয়, যার বেশির ভাগ কৃষিজমি। ক্ষতিগ্রস্ত অর্ধেক জনসংখ্যারই টাকার অভাবে ঘরবাড়ি তৈরি করা সম্ভব হয় না। এতে ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। তার প্রভাবে নদীভাঙা উদ্বাস্তু মানুষের চাপ পড়ছে বড় শহরগুলোতে।

আমাদের দেশে নদীভাঙন নতুন কোনো সমস্যা নয়। অনেক বছর ধরে নদীভাঙনের কারণে দেশের অনেক জনপদ বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নদীভাঙনকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে পার পেয়ে যাচ্ছে। নদীভাঙন কোনোভাবেই এখন আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়। আগাম নদীশাসন ও নদী ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে করা গেলে এর ভাঙন রোধ করা সম্ভব। এর জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি। কিন্তু সেভাবে পরিকল্পনা হয় কি? তাই তো পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের অভিযোগের শেষ নেই।

সরকার জাতীয় বাজেটে নদীভাঙন রোধে যে বরাদ্দ দেয়, তা-ও ঠিকভাবে ব্যয় হয় না। ফলে নদীপারের মানুষের কাছে নদী ‘সর্বনাশা’ হিসেবেই পরিগণিত হয়। অথচ কোনো দেশের নদী কখনো সর্বনাশ ডেকে আনে না। বিশ্বের ইতিহাসে এর ভূরি ভূরি প্রমাণ আছে। একটি জনপদের জন্য নদী আশীর্বাদ নিয়ে আসে।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস)’ নামে একটি গবেষণা সংস্থা রয়েছে। তারা উপগ্রহের মাধ্যমে প্রাপ্ত ছবি ও তথ্যের ভিত্তিতে নদীভাঙনের পূর্বাভাস দিয়ে আসছে ২০০৪ সাল থেকে। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। এ জন্য নদীভাঙন রোধ করা যাচ্ছে না।

আমরা আশা করব, যেন আধুনিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অধীনে নদীভাঙনের পূর্বাভাসকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাবির সিন্ডিকেটে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের চূড়ান্ত অনুমোদন

শ্বশুরকে জামাতার ফোন: ‘আপনার মেয়েকে মাইরা ফেলছি, লাশ নিয়ে যান’

স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে গেলেন ইমামতি করতে

ঐতিহাসিক শিমলা চুক্তি বাতিল করল পাকিস্তান, এর প্রভাব কী

সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের জামাতাকে অবসরে পাঠিয়েছে সরকার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত