Ajker Patrika

করোনা সংক্রমণ ‘সুনামিতে’ শেষ হচ্ছে বছর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮: ৫৮
করোনা সংক্রমণ ‘সুনামিতে’ শেষ হচ্ছে বছর

করোনাভাইরাসকে সঙ্গী করে চলে গেল আরও একটি বছর। দেশে দেশে বছরজুড়ে জোরেশোরে টিকাদান কর্মসূচি চলেছে। ফলে দুই-তিন মাস আগেও মনে হচ্ছিল পরের বছর থেকে হয়তো বিশ্ব মুক্তি পাবে এই মহামারি থেকে। কিন্তু দেখা গেল ডেলটার তাণ্ডব দিয়ে শুরু হওয়া বছরটি শেষ হতে চলেছে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন আতঙ্কে।

ডেলটা এবং ওমিক্রনের সংমিশ্রণ বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণের ‘সুনামি’ বয়ে এনেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান তেদরোস আধানম গেব্রিয়াসুস। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গত কয়েক দিনে রেকর্ড সংক্রমণের পর গত বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন তিনি।

ওয়ার্ল্ডোমিটারস গতকাল সন্ধ্যা নাগাদ আগের দিন ২৯ ডিসেম্বর বিশ্বজুড়ে করোনা শনাক্তের সংখ্যা দেখাচ্ছিল ১৬ লাখ ২৫ হাজারের বেশি, যেখানে এর আগে এক দিনে শনাক্তের রেকর্ড ছিল ৯ লাখ ৪ হাজার।

এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, ফ্রান্সে গতকাল রেকর্ড ২ লাখ ৮ হাজারের বেশি করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। আর জনস হপকিন্সের তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে গত সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে রোগী শনাক্ত হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি। সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী ডেনমার্ক, পর্তুগাল, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়াতেও।

গবেষকেরা বলছেন, ওমিক্রন অনেক দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লেও তা করোনার ডেলটা ধরনের চেয়ে কম প্রাণঘাতী, তবে অনেক বেশি সংক্রামক। আর এ জন্যই দেশে দেশে সংক্রমণের হার বাড়ছে। যদিও সামগ্রিক সংক্রমণ বৃদ্ধির পেছনে ডেলটা এবং ওমিক্রন উভয়ের বড় প্রভাব রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান। তাঁর মতে, করোনার এই দুই ধরন ধসের দ্বারপ্রান্তে থাকা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি করছে এবং তা অব্যাহত থাকবে।

ওমিক্রন যে কম প্রাণঘাতী, তা মোটামুটি বোঝা যায় বিশ্বজুড়ে সংক্রমণ ও মৃত্যুর প্রবণতা থেকে। বর্তমানে মহামারির চতুর্থ ঢেউ চলছে। গত অক্টোবরের শেষ দিক থেকে এ ঢেউ শুরু। তখন থেকে বাড়ছে সংক্রমণের হার। তখনকার দৈনিক চার-সাড়ে চার লাখ থেকে সেটা এখন গড়ে নয় লাখের ওপরে পৌঁছেছে। কিন্তু মৃত্যুর হার সেই তুলনায় স্থিতিশীল বলা যায়। অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বরে গড়ে দিনে সাড়ে সাত হাজারের ওপর মৃত্যু থাকলেও এখন সেটা সাত হাজারের নিচে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ৯ লাখ নতুন করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যা এবং টিকা দেওয়ার হার বিবেচনা করে দেশটির শীর্ষস্থানীয় সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্থনি ফাউসি সিএনএনকে বলেছেন, আগামী জানুয়ারির শেষ দিকে ওমিক্রন সংক্রমণের শীর্ষে উঠে যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।

এদিকে ওমিক্রন আতঙ্কে করোনা টিকার তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু করেছে বিশ্বের বেশ কয়েকটি ধনী দেশ। তবে ডব্লিউএইচও প্রধান তেদরোস সাংবাদিকদের বলেছেন, ধনী দেশগুলোর এমন পদক্ষেপ (বুস্টার ডোজ দেওয়া) করোনা মহামারিকে আরও দীর্ঘায়িত করতে পারে। কারণ, এর ফলে দরিদ্র বা কম টিকাপ্রাপ্ত দেশগুলো টিকার ক্ষেত্রে আরও বেশি অবহেলিত হবে, যা করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলবে। ২০২২ সালের মাঝামাঝির মধ্যে বিশ্বের অন্তত ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনারও আহ্বান জানিয়েছেন তেদরোস।

ডব্লিউএইচও বলছে, বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশ এখন পর্যন্ত তাদের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশকে টিকা দেওয়ার মূল লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি। গত মঙ্গলবার সংস্থাটির প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, করোনার সব ধরনের সংক্রমণের হার ২৬ ডিসেম্বরের আগের সপ্তাহে ইউরোপে বৃদ্ধি পেয়েছে ৫৭ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, সংক্রমণের এই হার প্রতিদিনই বাড়ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত