Ajker Patrika

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরও কেন হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২১, ১১: ৫০
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরও কেন হামলা

কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা সৃষ্টির পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। জড়িতদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশনাও দেন তিনি। এমন নির্দেশনার পরও কেন হামলা চলতে থাকে? কেন সর্বশেষ রংপুরের পীরগঞ্জে হামলা করা হয়। এমনই প্রশ্ন তুলেছেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আয়োজনে নাগরিক প্রতিবাদ সভায় অংশ নেওয়া বক্তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সরকারের বিচারহীনতা ও প্রশাসনের ব্যর্থতার কথাও তুলে ধরেন আলোচকেরা। এ সময় বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এ ধরনের ঘটনা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আন্দোলন এবং দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উদ্‌যাপনের চেতনাবিরুদ্ধ। পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তন এবং রাজনীতিতে ধর্মীয় অপশক্তির সঙ্গে মীমাংসা ও প্রশ্রয় এবং সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্ম ব্যবহারের কারণে আজ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, নির্বাচন-পরবর্তী সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে সামনে আনার জন্য বর্তমান সরকার বিশেষ কমিশন গঠন করেছিল। সেই কমিশন প্রতিবেদন জমা দিলেও সে অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া, নাসিরনগর বা রামুতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি। এসডিজির ১৬ নম্বর ধারার উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সরকার এই সনদে ২০১৫ সালে সই করে। নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকারের ভিত্তিতে এই সনদ অনুযায়ী সরকারের উচিত মানুষের নিরাপত্তা বিধান করা।

সভায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি ওঠে। এ সময় অনলাইনে যুক্ত হয়ে বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, ‘বিচার বিভাগীয় তদন্ত বলে আইনে কিছু নেই। এর আইনগত কোনো মূল্য নেই। যে ঘটনাগুলো হয়েছে, আমি ৯৯ ভাগ গ্যারান্টি দিচ্ছি কোনো রেজাল্ট হবে না। এত আসামি এত সাক্ষ্য দিয়ে বিচার করা আমাদের ব্যবস্থার সামর্থ্য নেই। ৩০০, ৫০০, ৮০০ আসামির কথা উল্লেখ করে পুলিশ আগেই জানান দিয়ে দিচ্ছে এখানে আমাদের কিছু করার নেই। যেটা উদ্দেশ্য, তা হলো গ্রেপ্তার-বাণিজ্য।’

ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, ‘বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সন্ত্রাস কমে গেছে। আমি ভেবেছিলাম এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না। আমি খুবই বিব্রত এবং মর্মাহত। এগুলো কেন ঘটল। কারা ঘটাচ্ছে এবং কারা ঘটতে দিচ্ছে—উভয়েই সমানভাবে দায়ী।’

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা বারবারই ঘটছে। হামলার শিকার হচ্ছে। দ্রুত প্রতিকার হোক—এমন প্রত্যাশা করি।’

মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির সাম্প্রদায়িক হামলা নিয়ে একটি কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘এমন একটা কমিশন গঠন করা উচিত, যাদের সবাই সম্মান করেন। ১০০-২০০ আসামির মামলা চাই না। সুস্পষ্ট তালিকা চাই।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘দেশ বিচারহীনতার মধ্যে চলছে। যে কারণে একটার পর একটা ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। আমাদের তরুণ প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।’

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এই দেশটা এমনভাবে যাচ্ছে, এখানে ভিন্নমতের, ভিন্ন পরিচয়ের আর কোনো জায়গা রাখা হয়নি। তাঁর প্রশ্ন, উৎসব কী এখানে পুলিশ, আর্মি নিয়ে করতে হবে? কুমিল্লার ঘটনায় যাকে চিহ্নিত করা হয়েছে, তা-ও রাজনীতির অংশ বলে তিনি দাবি করেন।

প্রতিবাদ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. শামসুল হুদা, সাংসদ ফখরুল ইমাম, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, বাংলাদেশ পেশাজীবী আন্দোলনের নেতা সরওয়ার আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত