Ajker Patrika

অনিয়মের যত অভিযোগ

আশরাফুল আলম আপন, বদরগঞ্জ
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২১, ১৫: ৩১
Thumbnail image

বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) আরশাদ হোসেন এবং আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) নাজমুল হুসাইনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানান, টিএইচও আরশাদ গত ১০ অক্টোবর আরএমও নাজমুলকে তাঁর পদ থেকে সরাতে জেলা সিভিল সার্জনের কাছে চিঠি দেন। চিঠিতে আরএমওর বিরুদ্ধে হাসপাতালে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করা, কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও বেশির ভাগ সময় ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তোলা হয়।

এই চিঠি দেওয়ার কারণে টিএইচও আরশাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন আরএমও নাজমুল। এরপর আরশাদের বিরুদ্ধেও নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানিয়েছেন।

অভিযোগ অনুযায়ী, টিএইচও আরশাদ গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে হাসপাতাল চত্বরে ঔষধি ও ভেষজ চারা রোপণে ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ পান। তিনি দুটি চারা রোপণ করে বরাদ্দের বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন। আর করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় বরাদ্দ করা হয়েছিল ১৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে টিএইচও দু-একজন কর্মচারীকে সঙ্গে নিয়ে প্রায় ৮ লাখ টাকার ভুয়া ভাউচার তৈরি করে আত্মসাৎ করেন।

পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ের দুজন স্বাস্থ্য কর্মী দাবি করেন, তাঁরা করোনা মোকাবিলায় বেশ কিছুদিন কাজ করলেও টিএইচও তাঁদের এক টাকাও দেননি। বরং শাহাপুর হোটেল, রুপম হাউজ ও ঢাকা আবাসিক হোটেলে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের থাকা-খাওয়ার বিল নিয়ে বেশ কিছু ভুয়া ভাউচার করেন। কিন্তু বদরগঞ্জে এসব আবাসিক হোটেলের কোনো অস্তিত্ব নেই।

আরও অভিযোগ রয়েছে, টিএইচও আরশাদ ৬ হাজার টাকায় প্রিন্টার কিনে বিল করিয়েছেন ২৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে বরাদ্দ দেওয়া করোনা পরীক্ষার কিটের ফি হিসেবে পাওয়া ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে মাত্র ৬০ হাজার টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে প্যাথলজি পরীক্ষায় রোগীদের কাছ থেকে রসিদ ছাড়া টাকা নেওয়া হয়েছে।

ডা. আরশাদ টিএইচও হিসেবে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে বদরগঞ্জে যোগদান করেন। অভিযোগ রয়েছে, বরাদ্দ থাকা গাড়িতে করে তাঁর মাঠ পর্যায়ে ভিজিট করার কথা থাকলেও তা তিনি করেন না। হাসপাতাল ক্যাম্পাসে রাত্রি যাপনের কথা থাকলেও কোনো দিন থাকেননি। সরকারি গাড়ি নিয়ে ২৪ কিলোমিটার দূরে রংপুর সদরে যাতায়াত করেন। হাসপাতাল কোয়াটারে না থাকলেও তাঁর বাধ্যতামূলক সরকারকে বাসা ভাড়া দেওয়ার বিধান থাকলেও তিনি দেন না।

অন্যদিকে আরএমও নাজমুলের বাড়ি বদরগঞ্জে। তিনি মা-বাবাসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে হাসপাতাল কোয়াটারে থাকেন। তিনিও নিয়ম অনুযায়ী বাসাভাড়া দেন না বলে হাসপাতালের একজন নার্স জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা এস এম সামিউল আলম বলেন, ‘আমি যোগদানের পর চিকিৎসকদের বাসাভাড়া ফাঁকি দেওয়ার বিষয়টি জানতে পারি। এরপর চিকিৎসকদের বাসাভাড়ার ম্যানুয়ালে কী আছে, তা জানতে একাধিকবার হাসপাতাল প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছি, কিন্তু কাজ হয়নি।’

জানতে চাইলে আরএমও নাজমুল দাবি করেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাঁর বিরুদ্ধে সিভিল সার্জনের কাছে চিঠি লেখা হয়েছে। সেই সঙ্গে তিনি জানান, সরকারকে শতভাগ বাসাভাড়া দিচ্ছেন।

আর টিএইচও আরশাদ বলেন, ‘আমি কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি করিনি। আরএমওর বিরুদ্ধে সিভিল সার্জনের কাছে চিঠি লেখার পর থেকে একটি মহল নানাভাবে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।’

বাসাভাড়ার ক্ষেত্রে নিয়ম না মানার বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘যদি শতভাগ বাসাভাড়া কর্তন করি, তাহলে কেউ সরকারি কোয়াটারে থাকবে না।’

এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রংপুরের সিভিল সার্জন হিরম্ব কুমার রায় জানান, ওই হাসপাতালের সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত