Ajker Patrika

‘খাও দাও ফুর্তি করো’

জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২১, ১২: ০৯
‘খাও দাও ফুর্তি করো’

রাস্তাটা সন্ধ্যে হলে সবসময়ই এরকম ঝলমলে থাকে। আশপাশের এলাকার মানুষ জানে, এখানে পাওয়া যায় মজাদার নানা খাবার। রাস্তার ডানে এবং বাঁয়ে কত যে খাবার দোকান! আর তা বিষয়বৈচিত্র্যে অনন্য।

মোহাম্মদপুরের সলিমুল্লাহ রোডে কবে যে গড়ে উঠেছিল এতগুলো ছোট ছোট রেস্তোরাঁ, সেটা হঠাৎ করে মনে পড়বে না। সবেধন নীলমণি ‘সেলিম কাবাব ঘর’ একা একাই একসময় এখানে একচ্ছত্র শাসন চালিয়েছে। তখন আশপাশে আর কোনো দোকান ছিল বলে মনে পড়ে না।

‘সেলিম কাবাব ঘর’-এ তখন যেমন লোক উপচে পড়ত, এখনো তেমনি তার আকর্ষণ। ছোট একটা লুচিতে তিন টুকরো শিক কাবাব পেঁচিয়ে খবরের কাগজ দিয়ে মুড়ে দেওয়া হতো। এখনো সেভাবেই এই কাবাব বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া অন্য আরও কয়েক ধরনের কাবাব আর পুরি পাওয়া যায় সে দোকানে। দোকানটি সবসময়ই নাজুক। এতগুলো বছর কেটে গেল, দোকানটির কোনো সংস্কার করা হয়নি। কিন্তু তা নিয়ে খাদ্যরসিকদের মাথাব্যথা নেই। সেই অপ্রশস্ত ঘরের মধ্যে দিব্যি পেতে রাখা হয়েছে কয়েকটি চেয়ার এবং টেবিল। খাদ্যরসিকেরা সেখানে বসে আড্ডা মারছে আর ছোট ছোট টিনের প্লেটে খাবার এলেই তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। এই সারিতেই রয়েছে চিকেন কর্ন স্যুপের একটি দোকান, এরপর পুরির দোকান। রাস্তার অপর পাড়ে গড়ে উঠেছে আরও কিছু দোকান। হালিম, কর্নস্যুপ আর চিকেন টিক্কা, গরুর চাপের ভারে সে দোকানগুলোও যেন নুয়ে পড়েছে। হালিমের মধ্যে আবার কোয়েল পাখির ডিম দিয়ে দেওয়া হয়। কোয়েলের ছোট্ট একটা ডিম নাকি মুরগির ডিমের মতোই স্বাস্থ্যকর।

এই রাস্তায় গাড়ি থামতে দেওয়া হয় না। তাই আশপাশের রাস্তাগুলোয় এলোমেলো করে গাড়ি রেখে পেটপুজোয় ব্যস্ত হয়ে পড়েন অনেকে। তাতে চলাচলকারী গাড়িগুলোর যাতায়াতে খুব অসুবিধে হয়। কিন্তু কে রাখে কার খবর!

দোকানগুলো দেখতে দেখতে রাস্তার অন্যপাশে নতুন তৈরি আরেকটি সেলিম কাবাব ঘরের সামনে দাঁড়াই। সেখানে গরুর চাপ ভাজা হচ্ছে, এবং তাঁরই এক পাশে মুচমুচে করে তোলা হচ্ছে মগজ ফ্রাই। এরকম একটি দৃশ্যের পর চোখ তো এমনিতেই সেদিক চলে যায় এবং মাখনের মতো মসৃণভাবে মুখ থেকে বেরিয়ে যায় কয়েকটি শব্দ, ‘একটা চাপ আর পাঁচটা লুচি। সঙ্গে মগজ ফ্রাই!’

এবং সম্মোহিতের মতো বাড়ির জন্যও অর্ডার দেওয়া হয়ে যায়। কীভাবে ঘটনাগুলো ঘটে, তা বোঝা যায় খাওয়ার পর বিল দিতে গেলে।

করিতকর্মা যে ছেলেটি অর্ডার নিচ্ছে, তার সঙ্গেই কথা বললে ভালো হবে, সে কথা জানিয়ে দেন কাবাব ভাজতে থাকা মোহাম্মদ শহীদ।

কী নাম আপনার?

‘ইমরান।’

কত দিন ধরে এখানে কাজ করছেন?

‘আমি কাজ করছি সিক্স ইয়ার্স।’

‘৬ বছর, বলেন কী! আপনাকে দেখে তো মনে হয় আপনার বয়সই ছয় বছর হয়নি!’

ইমরান হাসতে থাকেন।

আশপাশে লক্ষ করলে দেখা যায়, অধিকাংশই তরুণ-তরুণী। করোনার সময় এত মানুষের মাস্কবিহীন ভিড় একটু শঙ্কিত করে আমাকে। আমি আমার জন্য অর্ডার দেওয়া খাবারও প্যাক করে দিতে বলি।

এখানে কী কী বিক্রি করেন আপনারা?

‘বিফ চাপ, চিকেন চাপ, দেশি মুরগি চাপ, মগজ ফ্রাই, স্বামী কাবাব।’

করোনার সময় দোকান খোলা ছিল?

‘দোকান খোলা ছিল, কিন্তু হোম ডেলিভারি। এখানে বসে খাওয়া যেত না।’

তখন ব্যবসা কেমন হয়েছে?

‘মোটামুটি। খুব খারাপ না। নট ব্যাড। মানুষের তো খেয়ে বাঁচতে হয়। বাঁচতে হইলে খাইতে হয়।’

মূলত কারা খেতে আসে?

‘সববয়সী মানুষই আসে। আপনার মতো...ওল্ড ম্যান মুরুব্বিরা আসে! কম বয়সী পোলাপানও আসে।’

একই কাজ প্রতিদিন করতে খারাপ লাগে না?

‘না না, খুব ভালো লাগে!’

তার মানে জীবনটা খুব আনন্দের?

‘জীবনটা সত্যিই আনন্দের। দুই দিনের দুনিয়া, মনে মনে কষ্ট পেয়ে কী হবে? তার চেয়ে ভালো, খাও দাও ফুর্তি করো!’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত