Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

ইউটিউবের অধিকাংশ নাটকই দায়িত্বহীন প্রযোজনা

ইউটিউবের অধিকাংশ নাটকই দায়িত্বহীন প্রযোজনা
আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৮: ০৭

নতুন ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ করছেন অভিনেতা ও নির্দেশক মামুনুর রশীদ। কী নিয়ে সেই নাটক? কারা করছেন অভিনয়? আরও যাঁরা টিভি নাটক নির্মাণ করছেন, দর্শকদের কতটা ধরে রাখতে পারছেন তাঁরা? টেলিভিশনগুলোরই-বা কী করা উচিত এই অনলাইন দুনিয়ায় নিজেদের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে? মঞ্চনাটকেরই-বা কী অবস্থা এখন? এমনই নানা প্রশ্ন নিয়ে নাট্যজন মামুনুর রশীদের মুখোমুখি হয়েছেন এম এস রানা

‘চরণ ছুঁয়ে যাই’ নামের নতুন ধারাবাহিক নির্মাণ করছেন। এর গল্পটা কেমন?
এটা আমার একটা মিশন ছিল। বছর দুয়েক আগে লেখা শুরু করেছিলাম। শিক্ষার ক্ষেত্রে যে অধঃপতনটা হয়েছে, সেটি তুলে ধরাই ছিল লক্ষ্য। একটা গ্রামের হাইস্কুল। অনেক পুরোনো। ১৯১৭ সালের প্রতিষ্ঠান। অর্ধচন্দ্র ইংলিশ হাইস্কুল। সেই স্কুলটায় প্রাচীন একজন লোক আছে, বাকি সবাই এই সময়ের। স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতির দায়িত্বে আছে প্রভাবশালী এক লোক, যে আগে এলাকার চেয়ারম্যান ছিল। এই স্কুলে নানা অজুহাতে টাকাপয়সা লেনদেন হয়। একটা কিশোর গ্যাং গড়ে উঠেছে। এরা ঠিকমতো ক্লাস করে না, অন্য শিক্ষার্থীদের ডিস্টার্ব করে। শিক্ষকদের যোগসাজশে এখানে কোচিং-বাণিজ্য গড়ে উঠেছে। বেচারা হেডমাস্টার অন্য এলাকা থেকে এসেছে এই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের চাকরি নিয়ে, তার আপ্রাণ চেষ্টা স্কুলটাকে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনার। 

কারা অভিনয় করছেন?
আমি, আজাদ আবুল কালাম, চঞ্চল চৌধুরী, সুষমা সরকার, আহসান হাবিব নাসিম, মোহাম্মদ বারী, শুভাশিস ভৌমিক, সুজাত শিমুল, রুবলি চৌধুরী প্রমুখ। আরও আছে একদল কিশোর অভিনেতা।

শিক্ষা ও শিক্ষকদের নিয়ে ধারাবাহিক নির্মাণের কারণ কী?
সাভারের একটা ঘটনার পর এই নাটক লেখার প্রয়োজন অনুভব করি। একজন শিক্ষককে এক শিক্ষার্থী ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে মাথায় আঘাত করে মেরে ফেলল। সেই ঘটনা আমাকে ভাবিয়ে তুলল। আমি শিখেছিলাম, শিক্ষকের অঙ্গের কোথাও স্পর্শ করা যায় না, শুধু চরণ স্পর্শ করা যায়। সেই জায়গা থেকেই আমি নাটকটি লিখলাম, যার নাম ‘চরণ ছুঁয়ে যাই’।

ধারাবাহিকটি কত পর্বে শেষ হবে? কোথায় প্রচারিত হবে?
এটা ৫২ পর্বের ধারাবাহিক। প্রচারিত হবে চ্যানেল আইয়ে। ৩০ পর্বের মতো কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি, নভেম্বরে পুরো কাজ শেষ করে জমা দিতে পারব। চ্যানেল কর্তৃপক্ষ প্রচারসূচি ঠিক করবে।

টিভি নাটকগুলো আগের তুলনায় জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। এর কারণ কী?
টিভি নাটক জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে এটা সত্য, আবার ইউটিউবের নাটকগুলোর বেশ ভিউ হয়, এটাও সত্য। এর কারণ, ইউটিউবের নাটকগুলো যখন খুশি তখন দেখা যায়, কিন্তু টিভি নাটকগুলোর একটা টাইমলাইন আছে। ওই সময়ে দেখতে না পারলে আর দেখা হয় না। আরেকটা কারণ হলো, টিভি চ্যানেলগুলোয় প্রিভিউ করে প্রচারের একটা বিষয় থাকে, ইউটিউবে সেটা নেই। ফলে যে কেউ যা খুশি বানিয়ে ইউটিউবে প্রচার করে ফেলতে পারে। একটা ব্যাঙ লাফাচ্ছে, ওই ভিডিওটাও ভিউ হয়ে যাচ্ছে। আমি দেখলাম, একটা মানুষ মাছ ধরছে, মাছটা কাদার মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে, আবার বের হচ্ছে, এটাই লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখছে। একই রকমভাবে ইউটিউবে যে নাটকগুলো দেখি, এগুলোর অধিকাংশই খুব দায়িত্বহীন প্রযোজনা। নাটকগুলোতে কোনো ম্যাসেজ তো দূরের কথা, এগুলোতে একধরনের সেক্স অ্যাপিল থাকে, ভায়োলেন্স থাকে, স্থূল সব বিষয় থাকে। তার মানে, আমাদের রুচিরও একটা দুর্ভিক্ষ আছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, এসব নাটকের দর্শক বেশির ভাগই আমাদের প্রবাসী ভাই-বোন।

কেবল দর্শকদের ওপর দায় চাপিয়ে দেওয়া কি ঠিক? নির্মাতারও তো দায়িত্ব থাকে ভালো মানের নির্মাণ এবং গল্প দিয়ে দর্শকের রুচি সমৃদ্ধ করা।
এটা খুবই প্রয়োজনীয় কথা। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা, দীক্ষা, প্রশিক্ষণ, সমাজভাবনা—সবকিছু জড়িত। কোনো নির্মাতা যদি ভাবে, নাটকটা শুধুই বিনোদন, এর মাঝে সুস্থ চিন্তা, সুস্থ চেতনা বা সমাজভাবনার প্রতিফলনের প্রয়োজন নেই, তাহলে সে ভুলের রাজ্যে বাস করে। নাটকের জন্মই হয়েছে বার্তা দেওয়ার জন্য। এই দেশে টেলিভিশনের জন্ম থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত বিটিভি সেই ভূমিকা পালন করেছে। বেসরকারি টেলিভিশন শুরুর পরেও অনেক দিন পর্যন্ত এটা মেইনটেইন করা হয়েছে। নির্মাণের আগে দেখা হতো নাটকটা দর্শককে কী বার্তা দেবে।

দর্শক ধরে রাখতে একসময় কমেডির আশ্রয় নেওয়া হলো। অসংখ্য কমেডি নাটক হলো, এখনো হচ্ছে। দেখা যায়, নাটকের সিরিয়াস বিষয়টাও কমেডির কারণে গৌণ হয়ে যায়...
এটা নাট্যকার ও নির্মাতাদের ভাবনার অভাব। কী নিয়ে কমেডি করতে হবে, আর কী নিয়ে নয়, সেটা বুঝতে হবে আগে। ইদানীং দেখি, একটা টার্ম ব্যবহার করে। রোমান্টিক কমেডি, রমকম। এটা আবার কী? রোমান্টিসিজম নিয়েও কমেডি করতে হবে?

ইউটিউব বা অনলাইনের দাপটে ক্রমেই জনপ্রিয়তা হারাতে বসা টেলিভিশনের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কী হতে পারে?

এটা তো খুব কঠিন। কঠিন এই কারণে যে, কোনো টেলিভিশনে এখন থিংকট্যাংক নেই। রিসার্চের কোনো জায়গা নেই। যার যার মতো করে কাজ করে। রিসার্চের জায়গাটা একমাত্র হয়েছিল একুশে টেলিভিশনে, সে কারণে তখন ওই চ্যানেলের অনুষ্ঠানগুলোও মানুষের নজর কেড়েছিল, মন জয় করেছিল। পরে এই চ্যানেলের কর্মীরা অন্য চ্যানেলে গিয়ে নিউজটা ভালো করেছেন, কিন্তু যেসব অনুষ্ঠান মানুষের চিন্তাচেতনা বা মননের উন্নয়ন ঘটাত, তেমন অনুষ্ঠান খুব একটা করা যায়নি। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, আমরা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছি, এসবের পেছনে কিন্তু আমাদের সংস্কৃতির অবদান আছে। নাটক, সিনেমা, গান, মঞ্চনাটক—এসব কিন্তু আমাদের ভীষণভাবে আন্দোলিত করেছে।  

শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বেইলি রোডের দুটি মঞ্চ, পরে যোগ হয়েছে শিল্পকলা একাডেমির তিনটি মঞ্চ। পুরান ঢাকায় একটা মঞ্চ শুরু করেও চালানো গেল না। একই এলাকায় এত মঞ্চ। এত দিনেও মঞ্চনাটককে সম্প্রসারণ করা গেল না। কেন? 
এটা খুব দুঃখজনক। একটা লোকের পক্ষে উত্তরা থেকে এসে নাটক দেখা এবং ফিরে যাওয়া বেশ ধকলের। পুরান ঢাকার জহির রায়হান মঞ্চটা সিটি করপোরেশন দাঁড় করাতেই পারল না। মঞ্চটা হলো, কিন্তু তার তো যত্ন প্রয়োজন, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার। সেটা করা গেল না। মিরপুর, উত্তরার মতো জনবসতিপূর্ণ এলাকায় কোনো মঞ্চ নেই, লাইব্রেরি নেই; গুলশান, বনানীর মতো এলাকায় মঞ্চ নেই, সিনেমা হল নেই, লাইব্রেরি নেই; তাহলে এসব এলাকার মানুষ বিনোদনের জন্য, সংস্কৃতিচর্চার জন্য কী করবে? কোথায় যাবে? অথচ, প্রতিটি এলাকায় অনেক রেস্টুরেন্ট হচ্ছে। মানুষ এখন কী করে—রেস্টুরেন্টে যায় আর খায়। আর এ কারণে আমাদের হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

বেইলি রোডের মঞ্চগুলো কি নাট্যদর্শকদের ফিরিয়ে আনতে পারছে?
গাইড হাউসে তো এখন নাটক মঞ্চায়ন করা যাচ্ছে না। মহিলা সমিতিতে করা যাচ্ছে। মহিলা সমিতিতেই আমাদের মঞ্চনাটক জনপ্রিয় হয়েছে। পরে এর উন্নয়নের জন্য সরকার যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে, এখনো করছে। সেই মহিলা সমিতির নিচের ফ্লোরে এখন মেলা বসানো হয়েছে। নাট্যমঞ্চ তো একটা নির্মল জায়গা। এখানে যখন মেলা বসে যায়, তখন মানুষের ধারণা বদলে যায়। বেইলি রোড জুড়ে এত এত দোকান, তারপরেও এখানে মেলা লাগবে! আবার দোতলায় করেছে একটা রেস্টুরেন্ট। ওখানে পার্টি চলে, উচ্চস্বরে গানবাজনা হয়, এতে নাটকের পরিবেশ নষ্ট হয়।

মঞ্চনাটকের উন্নয়নে নাট্যকর্মীদের জন্য কী করা যেতে পারে বলে মনে করেন?
নাট্যকর্মীরা সারা বছর কাজ করে, নাটক মঞ্চে আনে, অথচ তাদের একটা পয়সা দিতে পারে না দলগুলো। কেন? নাট্যদলগুলোর মহড়াকক্ষের ভাড়া, নাট্য প্রদর্শনীর হলভাড়াসহ সারা মাসের খরচটাও নাট্যকর্মীদের চাঁদার টাকায় ম্যানেজ করতে হয়। আমি অনেকবার বলেছি, নিয়মিত যাঁরা নাট্যচর্চা করেন, তাঁদের একটা তালিকা করে মাসিক বেতনের ব্যবস্থা করা হোক।

আপনাদের নাট্যদল আরণ্যকের কী অবস্থা?
চলছে ভালোই। ‘কম্পানি’ নামের নতুন নাটক নামিয়েছি। এ ছাড়া কয়েকটি নাটকের নিয়মিত প্রদর্শনী করছি। এগুলো হলো ‘কহে ফেসবুক’, ‘ময়ূরসিংহাসন’ ও ‘নানকার পালা’। 

নাট্যকর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল শিল্পকলার মহাপরিচালকের অপসারণ। সেটা হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদেও পরিবর্তন এসেছে। কী আশা করছেন নতুন পরিচালনা পর্ষদের কাছে?
সৈয়দ জামিল আহমেদ মহাপরিচালক হিসেবে এসেছেন। নবীন অনেকে পরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছেন। আমার বিশ্বাস, তাঁদের হাত ধরে মঞ্চনাটক, আমাদের সংস্কৃতির চর্চা নতুন গতি পাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত