চয়ন বিকাশ ভদ্র
কোন তমালের কাননতলে মধ্যদিনের তাপে;
বনচ্ছায়ার শিরায় শিরায় তোমার সুর কাঁপে।
—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথের চেয়েও তমালগাছকে জনপ্রিয় করেছে কিংবদন্তির রাধা। কৃষ্ণের বিরহে রাধা তাঁর সখীদের বলেছিলেন, মৃত্যুর পর তাঁর দেহ যেন তমালের ডালে বেঁধে রাখা হয়। সে জন্য বৈষ্ণব কবিতায় তমাল মর্যাদার সঙ্গে আসীন। তমালগাছের বাকলের রং কালো আর কৃষ্ণের গায়ের রংও কালো। তাই তমাল শ্রীরাধারও প্রিয়। রাধার জবানিতে কবি লিখেছেন,
না পুড়াইও রাধার অঙ্গ
না ভাসাইও জলে,
মরিলে বাঁধিয়া রেখো
তমালেরই ডালে…
বাঙালি বিরহ ভালোবাসে। বিরহের এই আতিশয্য আমাদের কাছে জনপ্রিয় করেছে তমাল নামের তরুটিকে। অথচ মাঝারি উচ্চতার এ বৃক্ষটি এখন মহাবিপন্নের তালিকায় ওপরের দিকে রয়েছে।
তমাল বনগাব, মহেশ কাণ্ড ইত্যাদি নামেও পরিচিত আমাদের দেশে। এর ইংরেজি নাম মটলড অ্যাবনি। তমালগাছের বৈজ্ঞানিক নাম ডায়াসপাইরোজ কর্ডিফোলিয়া। এটি অ্যাবেনেসি পরিবারের সদস্য। এর আদি নিবাস মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের উষ্ণ অঞ্চল। তমাল সাধারণত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, চীন, ক্রান্তীয় অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি অঞ্চলে জন্মে। ঢাকার রমনা পার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে কয়েকটি অপরিণত তমালগাছ আছে। বেনাপোল পাঠবাড়ী আশ্রম, ঠাকুরগাঁও গোবিন্দজীউ মন্দির, দিনাজপুর রাজবাড়ী ও কান্তজীউ মন্দির প্রাঙ্গণে এ গাছ রয়েছে। মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত যাওয়ার আগে পথের বাঁ দিকে মহাদেব মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটি তমালগাছ। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে, ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র তীরের জয়নুল উদ্যানের প্রবেশপথের পূর্ব দিকে এবং কাচিঝুলিতে বন বিভাগের বিভাগীয় কার্যালয়ের উল্টো দিকে তমালগাছ রয়েছে। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনের তফসিল-৪ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
তমালের কাণ্ড খাটো, ঘন কালো গিঁটযুক্ত। এর শাখা-প্রশাখা ছড়ানো এবং ছাতা আকৃতির। এটি চিরসবুজ ও পত্রঘন উদ্ভিদ। তমাল খুব ধীরে ধীরে বড় হয়। ফলে অনেক দিন লাগে বড় হতে। এর পাতা একান্তর, ৩ দশমিক ৮ থেকে ১৪ সেন্টিমিটার লম্বা, ডিম্বাকার বা উপবৃত্তকার এবং পাতার গোড়ার দিক গোলাকার। ফুল আকারে বেশ ছোট ও সাদা রঙের। এদের পুরুষ ও স্ত্রী গাছ আলাদা আলাদা। তমালের পুরুষ ফুল ১ সেন্টিমিটার লম্বা, স্ত্রী ফুল ১ দশমিক ৩ সেন্টিমিটার লম্বা ও একক। ফল গোলাকার এবং ২ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এ ছাড়া ফল পাকলে লালচে বাদামি রঙের ও গাবের মতো বৃতিযুক্ত। তমালের বিষাক্ত ফল পাকে গ্রীষ্মকালে। এর কাঠ লালচে হলুদ ও শক্ত। তমালের বীজে পাওয়া যায় বিটুলিনিক অ্যাসিড ও ১ দশমিক ৫ শতাংশ তেল। এই তেলে আছে পামিটিক অ্যাসিড, স্টিয়ারিক ও লিনোলিক অ্যাসিড। এ ছাড়া আছে লুপিয়ল, বেটা সিটুস্টেরল, স্টিগমাস্টেরল।
তমালের পাতা চূর্ণ মাছের জন্য বিষ। ভেষজ চিকিৎসায় এর বিভিন্ন ব্যবহার আছে। জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, প্রস্রাবে সমস্যা, নিউরালজিয়া, প্লুরিসি, মিনোরেজিয়া, প্রসব-পরবর্তী জ্বর, বিষাক্ত মাকড়সার কামড় ইত্যাদিতে তমালগাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া এর ছালের নির্যাসে প্রদাহরোধী গুণ আছে। এর অ্যালকোহলিক নির্যাসে ইঁদুরের ক্যানসার নিরাময়ের গুণ আছে বলে পরীক্ষায় প্রমাণ পাওয়া গেছে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ
কোন তমালের কাননতলে মধ্যদিনের তাপে;
বনচ্ছায়ার শিরায় শিরায় তোমার সুর কাঁপে।
—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথের চেয়েও তমালগাছকে জনপ্রিয় করেছে কিংবদন্তির রাধা। কৃষ্ণের বিরহে রাধা তাঁর সখীদের বলেছিলেন, মৃত্যুর পর তাঁর দেহ যেন তমালের ডালে বেঁধে রাখা হয়। সে জন্য বৈষ্ণব কবিতায় তমাল মর্যাদার সঙ্গে আসীন। তমালগাছের বাকলের রং কালো আর কৃষ্ণের গায়ের রংও কালো। তাই তমাল শ্রীরাধারও প্রিয়। রাধার জবানিতে কবি লিখেছেন,
না পুড়াইও রাধার অঙ্গ
না ভাসাইও জলে,
মরিলে বাঁধিয়া রেখো
তমালেরই ডালে…
বাঙালি বিরহ ভালোবাসে। বিরহের এই আতিশয্য আমাদের কাছে জনপ্রিয় করেছে তমাল নামের তরুটিকে। অথচ মাঝারি উচ্চতার এ বৃক্ষটি এখন মহাবিপন্নের তালিকায় ওপরের দিকে রয়েছে।
তমাল বনগাব, মহেশ কাণ্ড ইত্যাদি নামেও পরিচিত আমাদের দেশে। এর ইংরেজি নাম মটলড অ্যাবনি। তমালগাছের বৈজ্ঞানিক নাম ডায়াসপাইরোজ কর্ডিফোলিয়া। এটি অ্যাবেনেসি পরিবারের সদস্য। এর আদি নিবাস মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের উষ্ণ অঞ্চল। তমাল সাধারণত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, চীন, ক্রান্তীয় অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি অঞ্চলে জন্মে। ঢাকার রমনা পার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে কয়েকটি অপরিণত তমালগাছ আছে। বেনাপোল পাঠবাড়ী আশ্রম, ঠাকুরগাঁও গোবিন্দজীউ মন্দির, দিনাজপুর রাজবাড়ী ও কান্তজীউ মন্দির প্রাঙ্গণে এ গাছ রয়েছে। মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত যাওয়ার আগে পথের বাঁ দিকে মহাদেব মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটি তমালগাছ। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে, ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র তীরের জয়নুল উদ্যানের প্রবেশপথের পূর্ব দিকে এবং কাচিঝুলিতে বন বিভাগের বিভাগীয় কার্যালয়ের উল্টো দিকে তমালগাছ রয়েছে। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনের তফসিল-৪ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
তমালের কাণ্ড খাটো, ঘন কালো গিঁটযুক্ত। এর শাখা-প্রশাখা ছড়ানো এবং ছাতা আকৃতির। এটি চিরসবুজ ও পত্রঘন উদ্ভিদ। তমাল খুব ধীরে ধীরে বড় হয়। ফলে অনেক দিন লাগে বড় হতে। এর পাতা একান্তর, ৩ দশমিক ৮ থেকে ১৪ সেন্টিমিটার লম্বা, ডিম্বাকার বা উপবৃত্তকার এবং পাতার গোড়ার দিক গোলাকার। ফুল আকারে বেশ ছোট ও সাদা রঙের। এদের পুরুষ ও স্ত্রী গাছ আলাদা আলাদা। তমালের পুরুষ ফুল ১ সেন্টিমিটার লম্বা, স্ত্রী ফুল ১ দশমিক ৩ সেন্টিমিটার লম্বা ও একক। ফল গোলাকার এবং ২ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এ ছাড়া ফল পাকলে লালচে বাদামি রঙের ও গাবের মতো বৃতিযুক্ত। তমালের বিষাক্ত ফল পাকে গ্রীষ্মকালে। এর কাঠ লালচে হলুদ ও শক্ত। তমালের বীজে পাওয়া যায় বিটুলিনিক অ্যাসিড ও ১ দশমিক ৫ শতাংশ তেল। এই তেলে আছে পামিটিক অ্যাসিড, স্টিয়ারিক ও লিনোলিক অ্যাসিড। এ ছাড়া আছে লুপিয়ল, বেটা সিটুস্টেরল, স্টিগমাস্টেরল।
তমালের পাতা চূর্ণ মাছের জন্য বিষ। ভেষজ চিকিৎসায় এর বিভিন্ন ব্যবহার আছে। জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, প্রস্রাবে সমস্যা, নিউরালজিয়া, প্লুরিসি, মিনোরেজিয়া, প্রসব-পরবর্তী জ্বর, বিষাক্ত মাকড়সার কামড় ইত্যাদিতে তমালগাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া এর ছালের নির্যাসে প্রদাহরোধী গুণ আছে। এর অ্যালকোহলিক নির্যাসে ইঁদুরের ক্যানসার নিরাময়ের গুণ আছে বলে পরীক্ষায় প্রমাণ পাওয়া গেছে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ দিন আগেআধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
০৮ মে ২০২৫