Ajker Patrika

উত্তরখানে নাকি সমস্যা নেই

আল-আমিন রাজু, ঢাকা
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ১৫: ৪০
উত্তরখানে নাকি সমস্যা নেই

উত্তরখান থানায় কোনো অভিযোগ আসে না। এখানের সবকিছুই নাকি ঠিক আছে, কোথায়ও কোনো সমস্যা নেই। চুরি-ছিনতাই, কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য আর মাদকের মতো কোনো অপরাধই নাকি থানা এলাকায় হয় না। এমনই দাবি থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল মজিদের। আলাপের একপর্যায়ে থানায় প্রতিদিন কী পরিমাণ সাধারণ ডায়েরি হয়, সেটা নিয়ে জানতে চাইলে ওসির সোজাসাপ্টা জবাব, ‘এসব তথ্য আপনাকে দিতে আমি বাধ্য নই। আপনি কমিশনার বরাবর আবেদন করেন।’

কমিশনার বরাবর আবেদন পরেও করা যাবে। আপাতত থানায় বসে ওসির কথার সত্যতা তো যাচাই করা যায়। গত ২২ ডিসেম্বর ২০২১ ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের উত্তরখান থানায় দিনভর অবস্থান করেন এই প্রতিবেদক। থানায় আসা ভুক্তভোগী ও অন্য পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বললে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। ঘড়ির কাঁটা দুপুর ১টা ছুঁইছুঁই। থানার একটি টহল গাড়ি থেকে দুই পুলিশ সদস্য ও এক আনসার নামছেন। পুলিশ সদস্যের হাতে বেশ কয়েকটি কুড়াল ও অন্য দেশীয় অস্ত্র, পেছনে থাকা আরেক পুলিশের হাতে একটি করাত। সর্বশেষ গাড়ি থেকে নামা আনসার সদস্যের হাতে আরও একটি কুড়াল। কথা বলে জেনে নিই, অবৈধ কাঠের করাতকল থেকে এগুলো জব্দ করা হয়েছে। তবে বিস্তারিত জানা যায়নি। পুলিশের গাড়ি থেকে নামতে দেখা যায়নি কোনো আসামিকেও।

দুপুরে সবাই কেবল লাঞ্চ শেষ করেছেন। এর মধ্যে থানার সামনে হাজির বেশ কয়েকজন যুবক। আলোচনায় সরগরম তাঁরা। কাছে গিয়ে বুঝতে পারি, তাঁদের কেউ একজন থানায় আটক। কিছুক্ষণ পর জানা যায়, উত্তরখান এলাকায় ময়লার সেকেন্ডারি স্টেশন থেকে একটি ময়লার গাড়ি চুরি হয়েছে। গাড়ি চুরিতে জড়িত থাকার অপরাধে রমজান, সায়েম, শান্ত নামের তিন কিশোরকে আটক করেছে পুলিশ।

ইতিমধ্যে সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে, সূর্যের তেজ কমে বিকেল হচ্ছে। উত্তরখানের ঝুট-ঝামেলার তেজ তখনো কমেনি। এর মধ্যে থানার পাশের চায়ের দোকানের সামনে এসআই রিপন চন্দ্র সরকারকে ঘিরে আছে ৮-১০ জন। এদের বেশির ভাগ আটক কিশোরদের স্বজন। একই সঙ্গে আছেন কয়েকজন অভিযোগকারীও। নাম আসে বাপ্পারাজ নামে আরেক কিশোরের। এসআই রিপন বাপ্পাকে ডেকে থানা-হাজতে ঢুকিয়ে দেন। আটক কিশোর শান্তর বাবার দাবি, ‘আমার ছেলে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত নয়। ঘটনার দিন ও বাসাতেই ছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘আটক রমজান ও সায়েমই ঘটনায় জড়িত। পুলিশের ভয়ে ওরা শান্তর নাম বলেছে, ফাঁসিয়ে দিয়েছে। আটক কিশোরেরা কখনোই তাদের দলের ছেলেদের নাম বলে না। মূল হোতাদের বাঁচাতে অসহায় ছেলেদের নাম বলে। আর পুলিশও গ্রেপ্তার করে শান্তর মতো ছেলেদের।’ এদিকে বিকেল চারটার দিকে সায়েমকে নিয়ে ময়লার গাড়ি চুরির সঙ্গে জড়িতদের ধরতে অভিযানে বের হন এসআই রিপন।

বিকেল সাড়ে চারটা দিকে ডিউটি অফিসারের রুমে আসেন এক নারী। তাঁর অভিযোগ, ‘আমার স্বামী মাদকাসক্ত। ওয়ার্কশপে কাজ করতেন। সেখান থেকে মানুষের টাকা নিয়ে পালিয়েছেন। দুই শিশুকে নিয়ে আমি খুব বিপদে। স্বামীর পেছনে আমার টাকাপয়সা সব শেষ।’ পুলিশের কাছে ওই নারী বলেন, ‘আমি আর এমন স্বামীর সঙ্গে সংসার করতে চাই না।’

সন্ধ্যার কিছু আগে এক এসআই এক কিশোরকে নিয়ে থানায় আসেন। সঙ্গে ওই কিশোরের বাবা-মা। তাঁদের অভিযোগ, স্মার্টফোন কিনে দিতে রাজি না হওয়ায় ছেলে ঘরের মালামাল ভাঙচুর করেছে। ফোন কিনে দেওয়ার সামর্থ্য তাঁদের নেই। পরে পুলিশ সদস্যরা ওই কিশোরকে বুঝিয়ে দেন, এমন আচরণ যাতে সে আর না করে।

এর মধ্যে যমুনা গ্রুপের কর্মী হাসমত মিয়া নিজের ছেলেকে নিয়ে থানায় আসেন। বাপ-ছেলের অভিযোগ, ‘প্রতিবেশী আশিক মিয়া আমাদের হত্যার হুমকি দিয়েছেন।’ সব শুনে সাধারণ ডায়েরি নেন দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা।

দিনভর এসব ছাড়াও মোবাইল চুরি, সম্পত্তির বিবাদসহ নানা অভিযোগ নিয়ে আসেন এলাকার অনেকে। সন্ধ্যার পর উত্তরখান থানার ওসির সঙ্গে আবার কথা হয়। তিনি বলেন, ‘থানায় কিশোর গ্যাং কিংবা চুরি-ছিনতাইয়ের মতো কোনো ঘটনা নাই।’

এদিকে আটক পাঁচ কিশোরের অবস্থা জানতে চাইলে গত ২৩ ডিসেম্বর এসআই রিপন চন্দ্র সরকার জানান, ময়লার গাড়ি চুরির অভিযোগে কিশোরদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত