Ajker Patrika

প্রতিবছরই বানাতে হয় সাঁকো

এম মনসুর আলী, সরাইল
Thumbnail image

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নে চেত্রা নদীর ওপর প্রায় ৭০০ ফুট দীর্ঘ বাঁশের সাঁকোই একমাত্র ভরসা ২০ গ্রামের মানুষের। বছরের সাত মাস সাঁকোতে যাতায়াত করতে হয় এখানকার মানুষদের। বাকি পাঁচ মাস পানি বেশি থাকায় সাঁকো দিয়েও যাতায়াত সম্ভব হয় না। এ ছাড়া ঝড়-বন্যায় বছরে দুই থেকে তিনবার মেরামত করতে হয় সাঁকোটি। সব মিলিয়ে বাঁশের সাঁকোতেই ঝুলে আছে এখানকার মানুষের ভাগ্য—এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত পাঁচ দশক ধরে এ নদীর ওপর একটি সেতুর দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী। তাঁরা গেছেন জনপ্রতিনিধিদের কাছে। জনপ্রতিনিধিরা দৌড়াদৌড়ি করেছেন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এসবের পর এলাকাবাসী নিজেরাই উদ্যোগ নেন একটি বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণের। এরপর থেকে এলাকাবাসীর নিয়োগ করা রানীদিয়া গ্রামের ১৬ উদ্যোক্তা নিজ খরচে গত ২৭ বছর আগে নদীর ওপর সাঁকো নির্মাণ করেন। সাঁকোটি নির্মাণে খরচ হয় প্রায় ১০ লাখ টাকা। প্রতিবছরের নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে সম্প্রতি সাঁকোটির নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু হয়েছে। প্রায় ১ হাজার বাঁশের পিলারের ওপর সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাঁকোটি ব্যবহার করা হয় প্রতিবছর নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। বাকি মাসগুলো নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় খুলে ফেলা হয়। বর্তমানে নদীর পানি কমছে। তাই সাঁকোটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। ২০ শ্রমিকের রাত-দিন পরিশ্রমে আগামী এক মাসের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সাঁকোটি ব্যবহার করেন অরুয়াইল ইউনিয়নের অরুয়াইল, রানীদিয়া, কাকরিয়া, চরকাকরিয়া, রাজাপুর, বুনিয়ারটেক, ধামাউড়া, দুবাজাইল, সিঙ্গাপুর এবং পাকশিমুল ইউনিয়নের পাকশিমুল, ফতেহপুর, পরমান্দপুর, হরিপুর, ষাটবাড়িয়া এবং বড়ইছাড়াসহ অন্তত ২০ গ্রামের মানুষ। এ ছাড়া অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব ও বাজিতপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রামের মানুষও ব্যবহার করেন এই সাঁকো।

এসব গ্রামে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাস। এসব মানুষের অর্থনীতির প্রধান কেন্দ্র অরুয়াইল বাজার। সেখানে রয়েছে সহস্রাধিক দোকানপাট। অরুয়াইল বাজার ও আশপাশেই রয়েছে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু সেখানে একটি স্থায়ী সেতু না থাকায় দুর্ভোগের অন্ত নেই কৃষিনির্ভর এ এলাকার মানুষের। তাঁরা শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়েছেন। তাই এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে বাঁশের এ দীর্ঘ সাঁকো তৈরি করে নিয়েছেন।

সাঁকোটি পারাপারের ভাড়া মাত্র দুই টাকা। নামমাত্র ভাড়ায় সাঁকোটি দিয়ে পারাপার করেন এলাকাবাসী। তবে রাত ১০টার পর থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত পার হতে কাউকে কোনো ভাড়া গুনতে হয় না। সাঁকো তৈরির ১৬ উদ্যোক্তার একজন রানীদিয়া গ্রামের নুর ইসলাম বলেন, ‘এলাকাবাসী আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন সাঁকোটি তৈরি করতে। এতে আট থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ হয়। পারাপারে তিন টাকা নেওয়া হয়। এলাকাবাসী ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে। এত কম ভাড়া আমাদের পোষায় না। পাঁচ টাকা হলে ভালো হতো।’

রানীদিয়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আবুল কালাম বলেন, ‘বাঁশের সাঁকোটি তৈরি না করলে তাঁদের যাতায়াতে অনেক অসুবিধা হতো আমাদের।’ অরুয়াইল ইউপির চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এলাকাবাসী এখানে সেতুর দাবি করে আসছে। কিন্তু এখনো সেতু হয়নি। ফলে মুমূর্ষু রোগী, প্রসূতি, নবজাতক ও বৃদ্ধদের নিয়ে বিপাকে পড়েন এলাকাবাসী।

সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘ওই এলাকার মানুষের দুর্ভোগ লাগবে সেতু নির্মাণের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। সে দিন বেশি দূরে নয়, যে দিন চেত্রা নদীর ওপর পাকা সেতু হবে, এলাকাবাসীর ৫২ বছরের দুঃখ লাগব হবে, ইনশা আল্লাহ।’

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম মিয়া বলেন, সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদনের পরই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হবে। তবে সেটি কবে মিলবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত