Ajker Patrika

৩০ কোটি টাকা ঢেলেও শুকনো গাজীখালী নদী

অরূপ রায়, সাভার
Thumbnail image

নদীর বুক সবুজ ঘাসে ঢাকা। সেখানে চরছে ছাগলের পাল, কোথাও ছোট-বড় গর্তে জমে আছে বৃষ্টির পানি। কোথাও আবার নদীর ভেতর দিয়ে ছুটছে মাটিভর্তি ট্রাক। বর্ষা মৌসুমেও এমন চিত্র মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া ও ঢাকার ধামরাই উপজেলার সীমানা দিয়ে যাওয়া গাজীখালী নদীর।

অথচ গত ২০২০-২১ অর্থবছরে এই নদী খননে ৩০ কোটি টাকা খরচ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এরপরও নদীর এই দশায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, নদী যথাযথভাবে খনন করা হয়নি। আর পাউবোর কর্মকর্তারা বলছেন, বরাদ্দের অভাবে প্রতিবছর ভরাট হওয়া অংশ কেটে না দেওয়ায় নদীটির এ অবস্থা হয়েছে।

পাউবোর মানিকগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীখালী নদী সাটুরিয়ার গোপালপুরে ধলেশ্বরী নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে ধামরাই হয়ে সিঙ্গাইরে ধলেশ্বরী নদীতে মিশেছে। প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীতে পলি জমায় পানির প্রবাহ থাকে না। এ ছাড়া উৎসস্থলের মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভরা বর্ষাতেও পানি ঢোকে না। পানির প্রবাহ স্বাভাবিক করতে বছর দুয়েক আগে নদীর গোপালপুর থেকে সিঙ্গাইর পর্যন্ত অংশ খনন করা হয়। এতে খরচ হয় ৩০ কোটি টাকা।

নদীতীরবর্তী এলাকা গোপালপুর, শিমুলিয়া ও কালিকাবাড়ির কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, খননের বছরেই কেবল নদীতে পানি এসেছিল। এরপর তা বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দিয়ে ট্রাকে করে মাটি পরিবহন করছেন প্রভাবশালীরা। এখন দেখে বোঝার উপায় নেই, এই নদী খনন করা হয়েছিল।

গত সোমবার সাটুরিয়ার গোপালপুরে দেখা যায়, গাজীখালী ও ধলেশ্বরীর সংযোগস্থল ভরাট হয়ে গেছে। গাজীখালীর উৎসস্থল থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরেই একটি বাঁধ। খানিক দূরে বালুর চর। গোপালপুর দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা কৃষক হাফেজ উদ্দিন বলেন, ‘আমাগো এলাকা দিয়াই ধলেশ্বরী থিকা গাজীখালীতে পানি ঢুকত। বালু পইরা অনেক বছর আগে গাজীখালীর মুখ ভইরা যায়। বছর দুয়েক আগে পাউবো গাজীখালীতে পানি ঢোকার জন্য নতুন পথ করে দেয়। কিছু জায়গায় খননও করে। এখন আবার নদীর মুখ ভইরা যাওয়ায় বেশি পানি ঢুকতে পারে না।’

একই এলাকার বাসিন্দা শুকুর আলী বলেন, খুব একটা গভীর করে নদী কাটা হয়নি। ভেকু (এক্সকাভেটর) দিয়ে শুধু দুই তীর কেটে দেয়। এ কারণে দুই বছরের মাথায় নদী ফের ভরাট হয়ে গেছে।

গোপালপুর বউবাজারের ব্যবসায়ী লেবু মিয়া নদীতে পানি না থাকার জন্য প্রভাবশালীদের বাঁধ দেওয়াকে দায়ী করেন। শিমুলিয়ার মোসলেম উদ্দিনসহ স্থানীয় তরুণদের কাছে শুকনা নদী হয়েছে ফুটবল খেলার মাঠ। আর কালিকাবাড়ির স্কুলছাত্রী তন্নি রাজবংশীর কাছে নদী হয়েছে ছাগল চরানোর জায়গা।

শিমুলিয়া সেতুর কাছে যেখানে তরুণেরা ফুটবল খেলছিলেন, তার পাশেই মৎস্য অধিদপ্তরের একটি সাইনবোর্ডে লেখা—‘বিল নার্সারি’। নদীর এই অংশে অধিদপ্তরের উদ্যোগে মাছের পোনা ছাড়া হয়েছিল। পাশের কালিকাবাড়ি এলাকায় নদীতে ঘাস কাটছিলেন আনিসুর রহমান (৭৫)। তিনি জানান, একসময় নদীতে বড় নৌকা ও লঞ্চ চলত। এখন গোসল করার পানিও থাকে না।

চর সাটুরিয়া এলাকার স্থানীয় সাংবাদিক সোহেল রানা খান বলেন, গোপালপুর থেকে সিঙ্গাইর পর্যন্ত অনেক স্থানেই নদী খনন করা হয়নি। সাটুরিয়া সেতুর দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার নদী খনন করতে দেখা যায়নি। তবে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি নদী খননের নামে বিভিন্ন জায়গায় ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করেছেন। এখন ওই সব স্থানে তৈরি হওয়া বড় গর্তে বৃষ্টির পানি জমে।

জানতে চাইলে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মঈন উদ্দিন বলেন, নদীর যে অংশে খনন করা প্রয়োজন ছিল, সেই অংশেই খনন করা হয়। দেখভালের অভাবে নদীর উৎসস্থলের মুখ আবার ভরাট হয়ে গেছে। দেখভাল করা যাচ্ছে না বরাদ্দের অভাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত