Ajker Patrika

সাক্ষরতা প্রকল্পে অনিয়ম পাঠ

হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২২, ১৩: ৫৩
সাক্ষরতা প্রকল্পে অনিয়ম পাঠ

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর আওতায় শেষ হওয়া মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পে একটি এনজিওর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। হরিরামপুরে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পিপলস অ্যাডভান্সমেন্ট সোশ্যাল অ্যাসোসিয়েশন (পাসা) নামের একটি এনজিও।

অভিযোগ রয়েছে, নিয়মিত বেতন-ভাতা পাননি অনেক শিক্ষক। আবার নিয়মিত পাঠদান না করেও অনেক শিক্ষক পেয়েছেন বেতন-ভাতা। শিক্ষা উপকরণ, বেতন-ভাতা, কেন্দ্র ভাড়া ও জ্বালানি খরচেও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ। উপজেলার গালা, বাল্লা, চালা, বলড়া, রামকৃষ্ণপুর, গোপীনাথপুর ও আজিমনগর ইউনিয়নের শিক্ষক, কেন্দ্রের মালিক, শিক্ষার্থী এবং প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিসহ স্থানীয় অর্ধশতাধিক মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

এনজিও পাসার উপজেলা প্রোগ্রাম ম্যানেজার হারুনুর রশিদ জানান, গত বছরের ৮ ডিসেম্বর হরিরামপুরে শুরু হয় প্রকল্পের কাজ। শেষ হয়েছে চলতি বছরের ৭ জুন। প্রকল্পের অধীনে হরিরামপুর উপজেলায় মোট ৩২০টি কেন্দ্রে দুজন করে মোট ৬৪০ জন শিক্ষক দায়িত্ব পালন করেন। প্রতি ২০ কেন্দ্রের জন্য একজন করে সুপারভাইজার নিয়োগ করা হয়েছিল। প্রকল্পের অধীনে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৯ হাজার ২০০ জন।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক দিনও পাঠদান হয়নি মানিকনগরের শফিক মিস্ত্রির বাড়ি কেন্দ্রে। নারীদের পাঠদান হলেও মধ্য ধুসুরিয়া নান্নু বিশ্বাসের বাড়ি কেন্দ্রে, সাকুচিয়া মোশারফ বিশ্বাসের বাড়ি এবং বলড়া সালাউদ্দিনের বাড়ি কেন্দ্রে পুরুষদের পড়ানো হয়নি। সাকুচিয়া রহিজুদ্দিনের বাড়ি কেন্দ্রেও পুরুষদের পড়ানো হয়নি বলে জানিয়েছেন ওই কেন্দ্রের নারী শিক্ষক লিজা আক্তার।

মধ্য ধুসুরিয়া নান্নু বিশ্বাসের কেন্দ্রের শিক্ষার্থী সাঈদ বিশ্বাস বলেন, ‘বই-খাতা দেওয়া হলেও কেন্দ্রে এক দিনও পাঠদান হয়নি।’

বলড়া গ্রামের শিক্ষার্থী রায়হান ও উসমান জানান, তাঁরা বই-খাতা কিছু পাননি। এক দিনও পড়ানো হয়নি।

পূর্ব সাকুচিয়া রফিকুল ইসলামের বাড়ি কেন্দ্রের শিক্ষক শামীম বিশ্বাস, ইছামতি গুচ্ছগ্রামের রহিজদ্দিনের বাড়ি কেন্দ্রের শিক্ষক লিজা আক্তার, সাকুচিয়া মোশারফ বিশ্বাসের বাড়ি কেন্দ্রের নারী শিক্ষক মুনমুন বিশ্বাস জানান, ১০ বক্স করে চক দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে দুই বক্স করে।

মানিকনগর আক্কাছ আলীর বাড়ি কেন্দ্রের শিক্ষক রাকিব হোসেন জানান, এক মাসের বেতন পেয়েছেন। ওই কেন্দ্রের নারী শিক্ষক রিপা আক্তার পেয়েছেন তিন মাসের বেতন।

আজিমনগর ইউনিয়নের এনায়েতপুর জালাল খাঁর বাড়ি কেন্দ্রের শিক্ষক শাহানাজ পেয়েছেন এক মাসের বেতন। এ ছাড়া বলড়ার সালাউদ্দিনের বাড়ি কেন্দ্রের শিক্ষক মারুফা আক্তার এক মাসের, বাহাউদ্দিনের বাড়ি কেন্দ্রের শিক্ষক রজ্জব দুই মাসের বেতন পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

এদিকে, শিখনকেন্দ্রের জন্য প্রতি মাসে কেন্দ্র ভাড়া বাবদ ৫০০ টাকা এবং জ্বালানি খরচ বাবদ ৫০০ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষক ও কেন্দ্রের বাড়ির মালিকেরা। আজিমনগর ইউনিয়নের জালাল খাঁর বাড়ি কেন্দ্রের শিক্ষক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়া ও জ্বালানি খরচ বাবদ আমরা কোনো টাকা পাইনি।’

প্রকল্পের উপজেলা কর্মকর্তা জেরিনা ফেরদৌস বলেন, ‘প্রকল্পের মেয়াদ শেষ। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা পাসা সব কাজ করেছে।’

প্রকল্পের মানিকগঞ্জ জেলার সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র কর্মকার বলেন, ‘গত মাসে শরীয়তপুরে বদলি হয়েছি। সব কেন্দ্র দেখতে পারিনি, তবে যতগুলো দেখেছি ক্লাস চলতে দেখেছি।’

পাসার নির্বাহী পরিচালক ফরিদ খান বলেন, ‘শিক্ষকদের চার মাসের বেতন দেওয়া হয়েছে। দুই মাসের বেতন মূল্যায়ন পরীক্ষার রিপোর্ট হয়ে গেলে পর্যায়ক্রমে দিয়ে দেওয়া হবে।’

অনেক শিক্ষক এক থেকে তিন মাসের বেতন পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে ১০ জন শিক্ষকের বেতন জমা আছে। যেগুলো পরে দিয়ে দেওয়া হবে।’

কেন্দ্র ভাড়া ও জ্বালানি খরচের বিষয়ে ফরিদ খান বলেন, ‘আমরা সব বিল এখনো পাইনি। এই টাকাগুলো আমরা পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করব।’

ইউএনও সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বেসরকারি সংস্থা পাসার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা তদন্ত করে রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত