Ajker Patrika

স্বপ্ন দেখাচ্ছে পাতালরেল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
স্বপ্ন দেখাচ্ছে পাতালরেল

মেট্রোরেল প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনকে যুক্ত করার মধ্য দিয়ে পাতালরেলের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের প্রথম এই পাতাল মেট্রোরেলের কাজ শুরু হচ্ছে আগামী বছরের জুলাই থেকে। ২০২৬ সালে যাত্রী পরিবহন শুরু হওয়ার কথা রেলপথটিতে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে যাতায়াত সহজ হওয়ার পাশাপাশি আধুনিক রেলসেবা পাবেন যাত্রীরা। একই সঙ্গে এর মাধ্যমে সড়কে চাপ কমলে রাজধানীর যানজট নিরসনেও তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

মেট্রোরেলের লাইন-১-এর আওতায় পাতাল ও উড়ালপথ মিলিয়ে মোট ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার হবে বিমানবন্দর-কমলাপুর রুটটি। শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত লাইন যাবে মাটির নিচ দিয়ে এবং নতুন বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত হবে উড়ালপথ। উভয় পথের জন্য মোট ১৯টি স্টেশন চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে পাতালপথে স্টেশন হবে ১২টি। এসব স্টেশনে থাকবে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা, ট্রেন থামবে প্রতি আড়াই থেকে সাড়ে তিন মিনিট পরপর।

পাতালপথের চূড়ান্ত স্টেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে কমলাপুর, রাজারবাগ, মালিবাগ, রামপুরা, পূর্ব হাতিরঝিল, বাড্ডা, উত্তর বাড্ডা, নতুন বাজার, নর্দা, খিলক্ষেত, বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩, বিমানবন্দর। পূর্বাচলে উড়ালপথে স্টেশন হবে জোয়ারসাহারা, বোয়ালিয়া, মস্তুল, শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়াম, পূর্বাচল সেন্ট্রাল ও পূর্বাচল টার্মিনালে।

পাতাল স্টেশনের বিষয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পাতাল স্টেশনগুলো তিনতলা বিশিষ্ট হবে। মেট্রোরেলের এলিভেটেড স্টেশনে যত ধরনের সুবিধা আছে, পাতাল স্টেশনেও একই ধরনের সুবিধা থাকবে। আড়াই থেকে থেকে সাড়ে তিন মিনিটের মধ্যে পাতাল স্টেশনে ট্রেন আসবে। মানুষ এর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেলে তখন সেটাকে আমরা আড়াই মিনিটে নিয়ে আসব।’

মেট্রোরেলের লাইন-১-এর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাতাল স্টেশনের টিকিট কাউন্টার ও অন্যান্য সুবিধা থাকবে প্রথম বেসমেন্টে এবং প্ল্যাটফর্ম থাকবে দ্বিতীয় বেসমেন্ট। পূর্বাচল রুটের উড়ালপথের স্টেশনের টিকিট কাউন্টার এবং প্ল্যাটফর্ম থাকবে তিন তলায়। যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যে প্ল্যাটফর্মে ওঠানামার জন্য উভয় পথের স্টেশনে থাকবে লিফট, সিঁড়ি ও এস্কেলেটর। মেট্রোরেল স্টেশনে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য স্বয়ংক্রিয় গেট থাকবে।

মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে, ২৫ সেট মেট্রোট্রেন দিয়ে শুরু হবে পাতালরেলের যাত্রী পরিবহনসেবা। প্রতি সেট মেট্রোট্রেনে আটটি কোচ থাকবে। দূর নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে মেট্রোরেল পরিচালনার জন্য থাকবে অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টারও। এ ছাড়া যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রেলস্টেশন ও ট্রেনের ভেতর সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরা দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হবে। মেট্রোরেলের কোচগুলো হবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, থাকবে সুবিন্যস্ত আসন ব্যবস্থা। ট্রেনের মধ্যেই যাত্রা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য সংবলিত ডিসপ্লে প্যানেল থাকবে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে একাধিক উৎস থেকে সংযোগ নেওয়া হবে এবং থাকবে নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও।

জানা গেছে, উড়ালপথে মেট্রোরেলের শব্দ নিয়ন্ত্রণের জন্য থাকবে শব্দ নিরোধক দেয়াল। আর পাতাল অংশে টানেল সংলগ্ন মাটি শব্দ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে। এ ছাড়া মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোতে নারীদের জন্য থাকবে আলাদা শৌচাগার। মেট্রোরেল স্টেশন ও ট্রেনের ভেতরে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্যও থাকবে উন্নত বিশ্বের মতো প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা। নারী যাত্রীদের নিরাপদ যাতায়াতের জন্য প্রতিটি মেট্রোরেলে একটি স্বতন্ত্র নারী কোচ থাকবে। গর্ভবতী নারী ও বয়স্ক যাত্রীদের কোচের ভেতরে সংরক্ষিত আসন থাকবে।

এদিকে, অতিরিক্ত আয়ের জন্য মেট্রোরেলের লাইন-৬-এর স্টেশনে যেমন কমার্শিয়াল স্পেস আছে, তেমনি পাতাল স্টেশনেও কমার্শিয়াল স্পেস থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে পাতালপথের স্টেশন চূড়ান্ত হলেও কোন কোন স্টেশনে স্টেশনপ্লাজা হবে, সেটি এখনো ঠিক করেনি মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। পাতাল মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত