Ajker Patrika

বরিশাল জলাশয় গিলছে ফরচুন সুজ

খান রফিক, বরিশাল
Thumbnail image

বরিশাল নগরের ৩ নং ওয়ার্ডের পুরানপাড়া এলাকার জলাশয়। এর পারের কিছু অংশে সম্প্রতি বালু ফেলা হয়েছে। আর কিছু অংশে কয়েক বছর আগে বালু ফেলা হয়েছিল। সেই অংশে দেয়াল গাঁথা হয়েছে। জলাশয় ভরাটের কারণে এলাকার পানি নিষ্কাশন বন্ধ। এতে করে জলাশয়ের কাছের বাড়িঘরে বৃষ্টি হলে ঢুকছে পানি। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানের জুতা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘ফরচুন সুজ’ এই জলাশয় ভরাট করছে। 

এলাকাবাসী ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বরিশালে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) বেশ কিছু প্লট আছে এই জলাশয়ের পাশে। বিসিকের বালু দিয়েই ওই জলাশয় ভরাট করছেন মিজানুর রহমান। এই অভিযোগে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) কর্তৃপক্ষ গত সপ্তাহে জলাশয়টি ভরাট বন্ধ করে দেয়। আর বিসিকের বালু দিয়ে জলাশয় ভরাটের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিসিকের প্রকল্প পরিচালক জালিস মাহমুদ বলেন, তাঁরা অভিযোগ পেয়েছেন যে বিসিকের প্লটের বালু নিয়ে বাইরের জলাশয় ভরাট করছে ফরচুন সুজ। ওই ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুরানপাড়ায় জলাবদ্ধতা রোধে বিসিসির সচিবও গত সপ্তাহে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। 

গত বৃহস্পতিবার পুরানপাড়া এলাকায় গিয়ে কথা হয় সেখানকার বাসিন্দা মাইনুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, মৃধা ও খান বাড়ির সম্পত্তি রয়েছে জলাশয়ে। ফরচুন সুজ মৃধা বাড়ির তিন মেয়ে জোমেনা, আমেনা এবং সাহেরার কাছ থেকে নানা কৌশলে পুকুরের একাংশ কিনে নিয়েছে, তাঁদের এক ভাইয়ের জমিও দখল করেছে। এখন জলাশয় ভরাট করায় তাঁদের এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। 

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জলাশয় ভরাটের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পুরানপাড়া থেকে লাকুটিয়া খাল পর্যন্ত কয়েক শ পরিবারকে। মূলত বালু ভরাট করে কালভার্ট আটকে দেওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জানতে চাইলে নগরের ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবর রহমান বলেন, ‘জলাবদ্ধতা রোধে বিকল্প উপায়ে পানি অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছি।’ জলাশয়টির ভরাটকাজ বন্ধ করে দিয়েছে সিটি করপোরেশন। পরিবেশ আইনে এটি ভরাট করার কোনো এখতিয়ার নেই। 

তবে ফরচুন সুজের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের ভাই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক শফিকুর রহমান বলেন, ‘এটি জলাশয় নয়, ধানি জমি। সেখানে আমাদের ক্রয় করা জমি রয়েছে। বিগত মেয়রের সময় তাঁরা এর একাংশ ভরাট করে পাকা স্থাপনা করাকালে আপত্তি দেওয়ায় কাজ বন্ধ রাখেন। এখন হয়তো আবারও বালু ফেলা শুরু হয়েছে। তাঁর দাবি, সিটি করপোরেশন এ বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগই করেনি। জলাশয় ভরাট করায় ওই এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়নি বরং তারা পাশ দিয়ে ড্রেন করে দিয়েছেন। 

তবে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ভিন্ন কথা বলছে। বিসিসির অবৈধ উচ্ছেদ শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বলেন, গত সপ্তাহে ঘটনাস্থলে গিয়ে জলাশয় ভরাট বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। কেন জলাশয় ভরছে তা জানতে ফরচুন সুজকে চিঠিও দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ফরচুনের মতো প্রতিষ্ঠান বালু ফেলে জলাশয় ভরছে, এটা দেখে আমরা অবাক হয়েছি। এমনটা হলে সমাজ রক্ষা কঠিন হয়ে যাবে।’ 

এ প্রসঙ্গে বরিশাল নগর উন্নয়ন ফোরামের সমন্বয়ক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, বিসিসিকে কেবল কাজ বন্ধ করা নয়, বরং ওই জলাশয়ে যে বালু ফেলেছে তা অপসারণ করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত