Ajker Patrika

নালিতাবাড়ীতে ধান কাটার শ্রমিক-সংকট, অসহায় কৃষক

অভিজিৎ সাহা, নালিতাবাড়ী
আপডেট : ১৮ মে ২০২২, ১৪: ৩৮
নালিতাবাড়ীতে ধান কাটার শ্রমিক-সংকট, অসহায় কৃষক

‘একটু কমে চলে না ভাই? ১৪০০ চাইছেন, ১৩৫০ নিয়েন। মাত্র ৫০ টাকার ব্যবধান, চলেন না ভাই।’ ধান কাটা শ্রমিক নিতে এই দর-কষাকষি চলছিল শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বালুঘাটা বাজারের শ্রমিক হাটে।

গত সোমবার ভোরে ১০ জন শ্রমিকের জন্য প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলে এই দর-কষাকষি। তবুও নিষ্ফল আবেদন। বাধ্য হয়ে ১ হাজার ৪০০ টাকায় শ্রমিক কিনে বাড়ি ফিরলেন উপজেলার তারাকান্দি গ্রামের কৃষক নূর হোসেন।

শুধু নূর হোসেন নয়, তার মতো শত শত কৃষক ছুটছেন শ্রমিকের পেছনে। আর শ্রমিকেরা ছুটছেন মোটা অঙ্কের টাকার দিকে। ধান কাটা মৌসুমে শ্রমিক পাওয়া যেন সোনার হরিণ হাতে পাওয়ার মতো বলে মন্তব্য করেছেন কৃষকেরা।

এক দিনের জন্য জনপ্রতি ১ হাজার ৪০০ টাকা শ্রমমূল্য দেওয়ার পাশাপাশি ওই শ্রমিকদের তিনবেলা খাবার ও ধূমপায়ীদের বিড়ি দিতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জনপ্রতি আরও ১৫০ টাকা খরচ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। একসঙ্গে বেশির ভাগ ধান পেকে যাওয়ায় এবং শ্রমিকের আকাশচুম্বী মজুরির কারণে অসহায় হয়ে পড়েছেন কৃষক। ভরা বোরো মৌসুমে পাকা ধান মাঠে রেখে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তাঁরা। অপর দিকে ঝড়-তুফান, শিলাবৃষ্টি ও পোকার আক্রমণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রকৃতিনির্ভর এই আবাদে সময়মতো ধান ঘরে তুলতে না পারলে যেকোনো সময় আবারও শিলাবৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যেতে পারে কৃষকের সোনার ফসল।

সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে ২২ হাজার ৭৫৬ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। যার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২২ হাজার ৭৫১ হেক্টর। আর ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। ইতিমধ্যে উপজেলাজুড়ে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়েছে।

শ্রমিক-সংকটে প্রতি একর জমির ধান কাটতে চুক্তিভিত্তিতে ১৫-২০ হাজার টাকা নিচ্ছেন শ্রমিকেরা। অথচ একরপ্রতি ৫০-৬০ মণ হারে ধান পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি মণ ধানের বর্তমান বাজারমূল্য ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। বর্তমান বাজারদর ও অতিরিক্ত শ্রম-মজুরিতে ধানের উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে বলে জানান কৃষকেরা।

আন্ধারুপাড়া গ্রামের কৃষক হাবিল উদ্দিন বলেন, ‘শ্রমিকেরা তাঁদের মনমতো অতিরিক্ত দামে ধান কাটছেন। এতে আমরা শ্রমিকের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছি।’

এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর কবীর বলেন,‘ শ্রমিক-সংকট মোকাবিলায় কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে সরকার শতকরা ৫০ ভাগ ভর্তুকি দিয়ে মাড়াইযন্ত্র বিতরণ করছে। এই সুবিধা দেওয়ার পরও কৃষকেরা এসব যন্ত্র নিচ্ছেন না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত