মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
কবি হেলাল হাফিজের ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি অনেকেরই জানা। প্রথম দুই লাইন থেকে কিছু অংশ স্মরণ করছি। ‘এখন যৌবন যার…যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’। হেলাল হাফিজের এই কবিতায় তরুণদের সংগ্রাম, ত্যাগ এবং যুদ্ধে অংশ নেওয়ার চিরন্তন এক আবেদন রয়েছে। এর প্রতীকী আবেদনটি সর্বজনীনভাবেও দেখা যেতে পারে। ব্যক্তিগত, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে মানুষকে হাজার রকমের যুদ্ধ করেই এগিয়ে যেতে হয়। সেই যুদ্ধ কখনো কখনো স্বাধীনতা আবার কখনো কখনো আক্রান্ত জাতিগোষ্ঠীকে জীবন দিয়েও যুদ্ধ করতে হয়।
পাকিস্তানি বাহিনীর চাপিয়ে দেওয়া আক্রমণাত্মক যুদ্ধের বিরুদ্ধে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিরুদ্ধে পৃথিবীর মানুষকে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যুদ্ধ করতে হয়েছিল। সেসব যুদ্ধে অকাতরে প্রাণ দিয়েছে শুধু তরুণেরাই নয়, সব বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষও। এসব ভয়ংকর মারণাস্ত্রের নিয়মিত যুদ্ধের বাইরেও মানুষকে প্রতিনিয়ত অসংখ্য প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেই টিকে থাকতে হয়। সেগুলোও বা প্রথাগত সামরিক যুদ্ধের চেয়ে কম কি। মাত্র কিছুদিন আগেই সারা পৃথিবী কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুই বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে বেঁচে থাকার যুদ্ধ করেছে, যা এখনো শেষ হয়নি। এরই মধ্যে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অজুহাতে বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্র অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে গোটা পৃথিবীর মানুষের জীবন-জীবিকাকে যেন এক বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। বৈশ্বিক এই অর্থনৈতিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা এখন সব জাতি, রাষ্ট্র এবং মানুষের জন্য এক মস্ত বড় অস্তিত্বের যুদ্ধ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। যুদ্ধে কোনো বয়সের ভেদাভেদ থাকে না, থাকে না ধর্ম, জাতিগত পরিচয়, শ্রেণি-পেশারও।
একাত্তরে যেমন রণাঙ্গনে কিশোর, তরুণ, যুবক, বয়স্ক অনেকেই প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধ করেছেন। আবার অন্যরা যুদ্ধের রণকৌশল, কূটনীতি, প্রশাসন, সামরিক শক্তির জোগান, খাদ্য, প্রশিক্ষণসহ হাজারো আয়োজনে যুক্ত থেকে যুদ্ধকে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। গৌরবোজ্জ্বল সেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শুনে অনেকেই এখন একাত্তরের মতো দেশপ্রেমের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার কথা বলেন। আমাদের জাতীয় জীবনে একাত্তরের পর অনেক চড়াই-উতরাই পার হতে হয়েছে। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে আদর্শচ্যুত করার এক দীর্ঘ নীলনকশার রাজনীতিও জাতীয় জীবনে অভিশপ্ত আকারে দাঁড়িয়ে গেছে। এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে লড়াই-সংগ্রাম করার ধারা এখনো কাঙ্ক্ষিত মানে শুরুই করা যায়নি। সে কারণেই শোকের মাস আগস্টে কেউ জাতীয় শোক দিবস পালন করে, অন্যপক্ষ ১৫ আগস্টকে জাতীয় বিপর্যয়ের দৃষ্টিতেই দেখে না। এমন এক বিকৃত ইতিহাসের বিভাজিত রাস্তায় আমরা সাড়ে চার দশকের বেশি সময় পথ চলে আসছি। এই পথচলা নিয়মিত যুদ্ধ নয় বরং মানবিক মূল্যবোধের আদর্শে বিশ্বাসের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার এক নিরন্তর যুদ্ধ। সেই যুদ্ধ কবে আমাদের শেষ হবে জানি না।
তবে বিশ্বপরিসরে এখন যে সংকট চলছে, তা মানবসভ্যতাকে অস্তিত্বের চূড়ান্ত সংকটেই ফেলে দেবে কি না, তার আশঙ্কা দিন দিন গভীরতর হচ্ছে। এরই মধ্যে জাতি-রাষ্ট্রসমূহ অর্থনৈতিক নানা বিপর্যয়ের মুখে পড়ে উত্তরণে পথের সন্ধান খুঁজছে। আমরাও বৈশ্বিক এই সংকটে এখন আক্রান্ত। এমন বাস্তবতায় শুধু যার যৌবন আছে তারই নয়, যার বোধ, বুদ্ধি, বিবেক এবং অস্তিত্বের ধারণা রয়েছে, তিনি যে বয়সেরই হন, তাঁকে অন্তত জাতীয় জীবনকে বাঁচিয়ে রাখা, সুখ ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নিজের দেশপ্রেমকে উজাড় করে দেওয়ার সময় এখনই।
বৈশ্বিক করোনা ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার সংকটে পড়ে অনেক দেশই এখন হাবুডুবু খাচ্ছে। আমরা এখনো বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্ত থেকে অনেকটা দূরে আছি। কিন্তু এই বৈশ্বিক সংকট যদি দীর্ঘস্থায়ী কিংবা আরও প্রকট হয়, তাহলে অস্তিত্ব রক্ষার এই যুদ্ধে কে কার পাশে কতটা থাকবে, তা জানা নেই। কারণ, এটি কোনো নিয়মিত মারণাস্ত্রের যুদ্ধ নয়। এটি বৈশ্বিক নানা শক্তি ও অপশক্তির স্বার্থগত দ্বন্দ্ব থেকে সংক্রমিত হওয়া এক মহাবিপর্যয়ের সন্ধিক্ষণ, যখন কেউ কারও পাশে খুব বেশি সহযোগিতার হাত প্রশস্ত করে দাঁড়াচ্ছে না। সে কারণে নিজেদের দেশ ও জাতীয় জীবনের কিছু কিছু সংকটকে প্রজ্ঞা, বুদ্ধিমত্তা, ধৈর্য এবং যার যার সক্ষমতা দিয়ে সহযোগিতা করাই হবে দেশপ্রেমের উত্তম স্বাক্ষর। আমাদের বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা নেই যে আমরা উচ্চমূল্যে তেল-গ্যাস কিনে আমাদের জ্বালানি সংকট মোকাবিলা করব। তবে এই সংকট মোকাবিলায় আমাদের অনেকেই আছেন যাঁরা দেশীয় তেল, গ্যাস, কয়লা উত্তোলনের পাশাপাশি আমদানির জন্য অর্থ জোগানে ভূমিকা রাখতে পারেন। সরকারের রাজস্ব আদায়ে তাঁদের উদার হস্তে এগিয়ে আসা হতে পারে এই সময়ের দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনের মানে হচ্ছে দেশের অর্থনীতির চাকা ২৪ ঘণ্টাই সচল রাখা। অর্থনীতি সচল থাকলেই আমাদের নানান চাহিদা পূরণ হতে পারে আবার বিদেশেও রপ্তানি বাড়তে পারে। যাঁরা বিদেশে কর্মরত আছেন, তাঁরা হুন্ডিতে নয় বরং ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাঠিয়ে দেশে রিজার্ভ বাড়িয়ে অর্থনীতির চাকাকে সচল করতে পারেন। দেশের অভ্যন্তরে অনেকেই আছেন যথেষ্ট সচ্ছল। তাঁদের এ মুহূর্তে ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা আয়-উপার্জনের নানা জায়গায় অধিক মুনাফা নয়, দুর্নীতি নয়, লুটপাট নয়, বরং দেশের প্রয়োজনটাকে প্রাধান্য দেওয়াই হবে দেশপ্রেমের বড় পরীক্ষা। যাঁরা রাজনীতিতে আছেন, তৃণমূল থেকে ওপর পর্যন্ত তাঁদেরও এখনই দেশপ্রেমের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার শ্রেষ্ঠ সময়। মানুষের কষ্ট যাতে লাঘব হয়, তাতে সাধ্যমতো অংশ নেওয়াই এই সময়ে শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় দেওয়ার শ্রেষ্ঠ সময়।
যারা বিদেশে বসে গুজব ছড়াচ্ছে, দেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, দেশে লোডশেডিং নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে, তারা তো একাত্তরের পরাজিত শক্তির মতোই জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তাদের ‘দেশপ্রেম’ যদি হয় বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার মতো দেখা, তাহলে সেই ‘প্রেমের’ দরকার নেই রাষ্ট্রের ও জনগণের। কারণ, তারা সময়ের বিপরীত শক্তি তথা অপশক্তি। এই অপশক্তি মুক্তিযুদ্ধ করেনি, অংশ নিলেও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধারণ করেনি। সে কারণেই তারা শোকাবহ আগস্টের মাসে বারবার ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের মতো বিপর্যয় ঘটাতে চেয়েছে, নকল জন্মদিনের কেক কেটে নিজেদের বিকৃত উল্লাস প্রদর্শন করেছে। নিজের জাতি এবং রাষ্ট্রের প্রতি যদি তাদের সামান্যতম বিবেকবোধ থাকত তাহলে পাকিস্তানকালে বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের আন্দোলনে নির্লিপ্ত কিংবা বিরোধিতা করত না।
তাদের সেই বিবেকবোধ ও দেশপ্রেম ছিল না বলেই তারা মুক্তিযুদ্ধ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেনি, সেই আস্থাও তাদের ছিল না। কিন্তু স্বাধীন দেশে সুযোগ-সুবিধা লাভে এদের অনেকেই দেশের অভ্যন্তরে হয় বিভ্রান্তি-দিকভ্রান্তির রাজনীতি উসকে দিয়েছে, নতুবা ষড়যন্ত্র করেছে, পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডে কেউ কেউ অংশও নিয়েছে। আবার কেউ কেউ বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশে উল্টো পথের রাজনীতি করছে, এরা ঢের বিত্তবৈভবের মালিকও হয়েছে। তাদের কাছে আমাদের চাওয়ার কিছু নেই। কিন্তু যারা বৈশ্বিক বাস্তবতাকে দেখছে, বুঝছে, তাদের এখনই সময় দেশপ্রেমে নিজেদের পরীক্ষা দেওয়ার, উজাড় করার। যার সামর্থ্য যেমন, তিনি সেভাবেই সময়ের এই যুদ্ধে অংশ নেবেন। এটিই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার চেতনা।
কবি হেলাল হাফিজের ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি অনেকেরই জানা। প্রথম দুই লাইন থেকে কিছু অংশ স্মরণ করছি। ‘এখন যৌবন যার…যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’। হেলাল হাফিজের এই কবিতায় তরুণদের সংগ্রাম, ত্যাগ এবং যুদ্ধে অংশ নেওয়ার চিরন্তন এক আবেদন রয়েছে। এর প্রতীকী আবেদনটি সর্বজনীনভাবেও দেখা যেতে পারে। ব্যক্তিগত, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে মানুষকে হাজার রকমের যুদ্ধ করেই এগিয়ে যেতে হয়। সেই যুদ্ধ কখনো কখনো স্বাধীনতা আবার কখনো কখনো আক্রান্ত জাতিগোষ্ঠীকে জীবন দিয়েও যুদ্ধ করতে হয়।
পাকিস্তানি বাহিনীর চাপিয়ে দেওয়া আক্রমণাত্মক যুদ্ধের বিরুদ্ধে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিরুদ্ধে পৃথিবীর মানুষকে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যুদ্ধ করতে হয়েছিল। সেসব যুদ্ধে অকাতরে প্রাণ দিয়েছে শুধু তরুণেরাই নয়, সব বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষও। এসব ভয়ংকর মারণাস্ত্রের নিয়মিত যুদ্ধের বাইরেও মানুষকে প্রতিনিয়ত অসংখ্য প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেই টিকে থাকতে হয়। সেগুলোও বা প্রথাগত সামরিক যুদ্ধের চেয়ে কম কি। মাত্র কিছুদিন আগেই সারা পৃথিবী কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুই বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে বেঁচে থাকার যুদ্ধ করেছে, যা এখনো শেষ হয়নি। এরই মধ্যে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অজুহাতে বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্র অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে গোটা পৃথিবীর মানুষের জীবন-জীবিকাকে যেন এক বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। বৈশ্বিক এই অর্থনৈতিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা এখন সব জাতি, রাষ্ট্র এবং মানুষের জন্য এক মস্ত বড় অস্তিত্বের যুদ্ধ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। যুদ্ধে কোনো বয়সের ভেদাভেদ থাকে না, থাকে না ধর্ম, জাতিগত পরিচয়, শ্রেণি-পেশারও।
একাত্তরে যেমন রণাঙ্গনে কিশোর, তরুণ, যুবক, বয়স্ক অনেকেই প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধ করেছেন। আবার অন্যরা যুদ্ধের রণকৌশল, কূটনীতি, প্রশাসন, সামরিক শক্তির জোগান, খাদ্য, প্রশিক্ষণসহ হাজারো আয়োজনে যুক্ত থেকে যুদ্ধকে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। গৌরবোজ্জ্বল সেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শুনে অনেকেই এখন একাত্তরের মতো দেশপ্রেমের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার কথা বলেন। আমাদের জাতীয় জীবনে একাত্তরের পর অনেক চড়াই-উতরাই পার হতে হয়েছে। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে আদর্শচ্যুত করার এক দীর্ঘ নীলনকশার রাজনীতিও জাতীয় জীবনে অভিশপ্ত আকারে দাঁড়িয়ে গেছে। এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে লড়াই-সংগ্রাম করার ধারা এখনো কাঙ্ক্ষিত মানে শুরুই করা যায়নি। সে কারণেই শোকের মাস আগস্টে কেউ জাতীয় শোক দিবস পালন করে, অন্যপক্ষ ১৫ আগস্টকে জাতীয় বিপর্যয়ের দৃষ্টিতেই দেখে না। এমন এক বিকৃত ইতিহাসের বিভাজিত রাস্তায় আমরা সাড়ে চার দশকের বেশি সময় পথ চলে আসছি। এই পথচলা নিয়মিত যুদ্ধ নয় বরং মানবিক মূল্যবোধের আদর্শে বিশ্বাসের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার এক নিরন্তর যুদ্ধ। সেই যুদ্ধ কবে আমাদের শেষ হবে জানি না।
তবে বিশ্বপরিসরে এখন যে সংকট চলছে, তা মানবসভ্যতাকে অস্তিত্বের চূড়ান্ত সংকটেই ফেলে দেবে কি না, তার আশঙ্কা দিন দিন গভীরতর হচ্ছে। এরই মধ্যে জাতি-রাষ্ট্রসমূহ অর্থনৈতিক নানা বিপর্যয়ের মুখে পড়ে উত্তরণে পথের সন্ধান খুঁজছে। আমরাও বৈশ্বিক এই সংকটে এখন আক্রান্ত। এমন বাস্তবতায় শুধু যার যৌবন আছে তারই নয়, যার বোধ, বুদ্ধি, বিবেক এবং অস্তিত্বের ধারণা রয়েছে, তিনি যে বয়সেরই হন, তাঁকে অন্তত জাতীয় জীবনকে বাঁচিয়ে রাখা, সুখ ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নিজের দেশপ্রেমকে উজাড় করে দেওয়ার সময় এখনই।
বৈশ্বিক করোনা ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার সংকটে পড়ে অনেক দেশই এখন হাবুডুবু খাচ্ছে। আমরা এখনো বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্ত থেকে অনেকটা দূরে আছি। কিন্তু এই বৈশ্বিক সংকট যদি দীর্ঘস্থায়ী কিংবা আরও প্রকট হয়, তাহলে অস্তিত্ব রক্ষার এই যুদ্ধে কে কার পাশে কতটা থাকবে, তা জানা নেই। কারণ, এটি কোনো নিয়মিত মারণাস্ত্রের যুদ্ধ নয়। এটি বৈশ্বিক নানা শক্তি ও অপশক্তির স্বার্থগত দ্বন্দ্ব থেকে সংক্রমিত হওয়া এক মহাবিপর্যয়ের সন্ধিক্ষণ, যখন কেউ কারও পাশে খুব বেশি সহযোগিতার হাত প্রশস্ত করে দাঁড়াচ্ছে না। সে কারণে নিজেদের দেশ ও জাতীয় জীবনের কিছু কিছু সংকটকে প্রজ্ঞা, বুদ্ধিমত্তা, ধৈর্য এবং যার যার সক্ষমতা দিয়ে সহযোগিতা করাই হবে দেশপ্রেমের উত্তম স্বাক্ষর। আমাদের বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা নেই যে আমরা উচ্চমূল্যে তেল-গ্যাস কিনে আমাদের জ্বালানি সংকট মোকাবিলা করব। তবে এই সংকট মোকাবিলায় আমাদের অনেকেই আছেন যাঁরা দেশীয় তেল, গ্যাস, কয়লা উত্তোলনের পাশাপাশি আমদানির জন্য অর্থ জোগানে ভূমিকা রাখতে পারেন। সরকারের রাজস্ব আদায়ে তাঁদের উদার হস্তে এগিয়ে আসা হতে পারে এই সময়ের দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনের মানে হচ্ছে দেশের অর্থনীতির চাকা ২৪ ঘণ্টাই সচল রাখা। অর্থনীতি সচল থাকলেই আমাদের নানান চাহিদা পূরণ হতে পারে আবার বিদেশেও রপ্তানি বাড়তে পারে। যাঁরা বিদেশে কর্মরত আছেন, তাঁরা হুন্ডিতে নয় বরং ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাঠিয়ে দেশে রিজার্ভ বাড়িয়ে অর্থনীতির চাকাকে সচল করতে পারেন। দেশের অভ্যন্তরে অনেকেই আছেন যথেষ্ট সচ্ছল। তাঁদের এ মুহূর্তে ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা আয়-উপার্জনের নানা জায়গায় অধিক মুনাফা নয়, দুর্নীতি নয়, লুটপাট নয়, বরং দেশের প্রয়োজনটাকে প্রাধান্য দেওয়াই হবে দেশপ্রেমের বড় পরীক্ষা। যাঁরা রাজনীতিতে আছেন, তৃণমূল থেকে ওপর পর্যন্ত তাঁদেরও এখনই দেশপ্রেমের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার শ্রেষ্ঠ সময়। মানুষের কষ্ট যাতে লাঘব হয়, তাতে সাধ্যমতো অংশ নেওয়াই এই সময়ে শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় দেওয়ার শ্রেষ্ঠ সময়।
যারা বিদেশে বসে গুজব ছড়াচ্ছে, দেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, দেশে লোডশেডিং নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে, তারা তো একাত্তরের পরাজিত শক্তির মতোই জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তাদের ‘দেশপ্রেম’ যদি হয় বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার মতো দেখা, তাহলে সেই ‘প্রেমের’ দরকার নেই রাষ্ট্রের ও জনগণের। কারণ, তারা সময়ের বিপরীত শক্তি তথা অপশক্তি। এই অপশক্তি মুক্তিযুদ্ধ করেনি, অংশ নিলেও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধারণ করেনি। সে কারণেই তারা শোকাবহ আগস্টের মাসে বারবার ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের মতো বিপর্যয় ঘটাতে চেয়েছে, নকল জন্মদিনের কেক কেটে নিজেদের বিকৃত উল্লাস প্রদর্শন করেছে। নিজের জাতি এবং রাষ্ট্রের প্রতি যদি তাদের সামান্যতম বিবেকবোধ থাকত তাহলে পাকিস্তানকালে বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের আন্দোলনে নির্লিপ্ত কিংবা বিরোধিতা করত না।
তাদের সেই বিবেকবোধ ও দেশপ্রেম ছিল না বলেই তারা মুক্তিযুদ্ধ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেনি, সেই আস্থাও তাদের ছিল না। কিন্তু স্বাধীন দেশে সুযোগ-সুবিধা লাভে এদের অনেকেই দেশের অভ্যন্তরে হয় বিভ্রান্তি-দিকভ্রান্তির রাজনীতি উসকে দিয়েছে, নতুবা ষড়যন্ত্র করেছে, পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডে কেউ কেউ অংশও নিয়েছে। আবার কেউ কেউ বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশে উল্টো পথের রাজনীতি করছে, এরা ঢের বিত্তবৈভবের মালিকও হয়েছে। তাদের কাছে আমাদের চাওয়ার কিছু নেই। কিন্তু যারা বৈশ্বিক বাস্তবতাকে দেখছে, বুঝছে, তাদের এখনই সময় দেশপ্রেমে নিজেদের পরীক্ষা দেওয়ার, উজাড় করার। যার সামর্থ্য যেমন, তিনি সেভাবেই সময়ের এই যুদ্ধে অংশ নেবেন। এটিই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার চেতনা।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪