Ajker Patrika

করোনার মধ্যে আবার ভয় ধরাচ্ছে ডেঙ্গু

আজাদুল আদনান, ঢাকা
আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২২, ০৮: ৩০
করোনার মধ্যে আবার ভয় ধরাচ্ছে ডেঙ্গু

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা দিনমজুর সায়েদুর রহমান (৩৫)। ঈদের আগে ৬ জুলাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীতে গিয়েছিলেন। ঈদের পরদিন ঢাকায় ফিরেই জ্বরে পড়েন। অবস্থা খারাপ হলে গত বুধবার রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ে।

হাসপাতালে গতকাল শুক্রবার সায়েদুরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘বাসায় দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা বেশ কিছু টায়ারে পানি জমে ছিল। সেখান থেকে ডেঙ্গু ছড়িয়েছে কি না, জানি না। ঈদের পরদিন হঠাৎ জ্বর শুরু হয়। শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা। এরপর এখন ভুগছি।’

প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেও আবার বাড়তির দিকে করোনা সংক্রমণ। এর মধ্যে নতুন করে ভয় ধরাচ্ছে ডেঙ্গুর এই পরিস্থিতি। মাসখানেক ধরে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী।

হাসপাতাল সূত্র এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি মাসের শুরু থেকেই ঢাকার হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ছিল। ঈদের পর মনে হচ্ছে সেটা আরও বাড়তির দিকে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়া না গেলে আগের বছরগুলোর মতো আগস্ট-সেপ্টেম্বরে এবারও ভোগাবে ডেঙ্গু।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঈদের পর ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে বলে আগে থেকেই আমরা বলে এসেছি। ঈদের ছুটিতে বহু মানুষ গ্রামে গেছেন-আসছেন। যাঁদের অনেকের মাধ্যমে ডেঙ্গুর জীবাণু সেখানে গেছে। ফলে শহরের পাশাপাশি গ্রামেও রোগী বাড়তে পারে।’ তিনি আরও বলেন, সাধারণত জুন-জুলাইয়ের বৃষ্টিতে ২০-২৫ দিনের মধ্যে এডিস মশার জন্ম হয়। এ জন্য প্রতিবছর আগস্ট-সেপ্টেম্বরে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়। এখন যে পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে, তাতে

এবারও ওই দুই মাস ভুগতে হতে পারে।

ঢাকার কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা জবা বেগম (৩২) আট দিন ধরে জ্বর ও ব্যথায় ভুগছিলেন। মৌসুমি জ্বর মনে করে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খেয়েছিলেন। তবে উন্নতি না হয়ে ক্রমেই শারীরিকভাবে আরও দুর্বল হয়ে পড়েন। ঈদের আগের দিন তিনি ভর্তি হন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। ছয় দিনের চিকিৎসায় কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো এ হাসপাতালেই আছেন জবা।

হাসপাতালের দায়িত্বরত নার্সরা জানান, জ্বর নিয়ে গড়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন রোগী আসছেন এই হাসপাতালে। গতকালও বেলা ১১টা পর্যন্ত অন্তত ১০ জন রোগী এসেছেন। এর মধ্যে ৩ জন ডেঙ্গুর। বর্তমানে এই হাসপাতালে ২৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন।

মুগদা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক মো. নিয়াতুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে ঈদের পর রোগী বেড়েই চলেছে। সামনে পরিস্থিতি কোন দিকে যায় বলা মুশকিল।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ২৮ হাজার। মৃত্যু হয় ১০৫ জনের। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রায় সাড়ে ৭ হাজার রোগী শনাক্ত হয় কেবল আগস্টেই, ওই মাসে মারা যান ৪২ জন।

এ বছর জানুয়ারির শুরু থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত ১ হাজার ৫৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে কেবল রাজধানীতেই ১ হাজার ৩৭২ জন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১ জনের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত জুনে সবচেয়ে বেশি ৭৩৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হলেও জুলাইয়ে তা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জুলাইয়ের প্রথম ১৪ দিনে আক্রান্ত ৪৯০ জন। নতুন করে করোনার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যে ডেঙ্গুর এমন প্রকোপ ভীতি বাড়িয়ে দিচ্ছে।

দেশে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুর সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ দেখা গেছে ২০১৯ সালে। ওই বছর লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়। একই সঙ্গে পৌনে তিন শ জনের মৃত্যু হয়। যদিও সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৭৯ জন।

এমতাবস্থায় সচেতনতার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবদুস সবুর খান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঢাকায় গরমের দিনেও নানা জায়গায় ময়লার পানি জমে থাকে। ব্যাপক আকারে নির্মাণকাজ চলে, এসব জায়গা চারদিক ঘেরা থাকে। ফলে ভেতরে পানি কোথায় জমে রয়েছে সেটি বাইরে থেকে দেখার উপায় নেই। বাসাবাড়ির ছাদে পানির টব, এসির পানি। ঈদের ছুটিতে গ্রামে গেলেও বালতিতে পানি ধরে রাখায় সেখানে মশার প্রজননকেন্দ্র তৈরি হচ্ছে বলেও জানান এই জনস্বাস্থ্যবিদ।

সবুর খান বলেন, সরকার ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নানা ব্যবস্থা নিলেও মানুষের মাঝে সচেতনতার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। দেশে জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে ডেঙ্গুর সবচেয়ে বেশি প্রকোপ দেখা যায়। এবারও সেটি হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত