Ajker Patrika

বালু তোলায় ভাঙনের শঙ্কা

লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২২, ১৫: ৫১
বালু তোলায় ভাঙনের শঙ্কা

নাটোরের লালপুর উপজেলায় চারটি ইউনিয়নের তীরবর্তী পদ্মা নদীতে চলছে অবৈধভাবে বালু তোলা ও সরবরাহ। অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলায় তীরে ভাঙনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

বালু ব্যবসায়ীদের দাবি, সরকারি অনুমতি নিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। তবে সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, বালু তুলতে ব্যবসায়ীদের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। অবৈধভাবে বালু তোলায় ইতিমধ্যে কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়েছে।

উপজেলার ঈশ্বরদী, লালপুর, বিলমাড়িয়া ও দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা নদীর উত্তর তীর রয়েছে। তীরবর্তী চরজাজিরা, রামকৃষ্ণপুর, বাকনাই, মোহরকয়া ও নওসারা-সুলতানপুর এলাকায় দেখা গেছে, পদ্মা নদী থেকে খননযন্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যানার ঝুলিয়ে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক জোনের পাশের পদ্মা থেকে বালু তুলতে দেখা গেছে। সেই বালুভর্তি ট্রাক ফসলি জমির পাশ দিয়ে ও গ্রামের মধ্যের রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। এতে গ্রামের রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে। নিয়ন্ত্রণহীন এসব ট্রাক চলাচল করায় অনেকে দুর্ঘটনায় পড়ছেন। বেপরোয়াভাবে ওইসব ট্রাক চলাচলের কারণে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা হতে পারে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রতি রাতে ১০ চাকার ট্রাকে বড়াইগ্রামে নির্মাণাধীন বনপাড়া পল্লী বিদ্যুতের ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ গাড়ি বালু। উপজেলা পরিষদের সামনে দিয়ে প্রায় সারা রাত বিকট শব্দে বালুবাহী ট্রাক চলাচল করে। এতে বালুবোঝাই গাড়ি চলাচলে উপজেলার প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এ ছাড়া ইটভাটা, সরকারি বিভিন্ন নির্মাণকাজ ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে নির্মাণকাজে এই বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। ট্রাক, টলি, পাওয়ারটিলারসহ নানা রকম যানবাহনে বালু পরিবহন হচ্ছে।

গোপালপুর বাজারের আলিফ ডেকোরেটরের মালিক আমিনুল ইসলাম বলেন, লালপুর উপজেলা পরিষদ মোড় এলাকায় বালুভর্তি বড় ট্রাকের চাকার নিচে পৃষ্ঠ হয়ে তাঁর হাত জখম হয়ে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, লালপুর সিনেমা হল মোড় থেকে মাত্র তিন-চার কিলোমিটার দক্ষিণে প্রস্তাবিত নাটোর অর্থনৈতিক জোন এলাকা। একপাশে পানিশূন্য পদ্মা নদী থেকে খননযন্ত্র দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে।

বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মহারাজপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম বলেন, অবৈধভাবে বালু তোলার ফলে একটি সেতুসহ বাড়িঘর হুমকির মুখে পড়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বালু ব্যবসায়ীরা। অথচ হুমকির মধ্যে পড়ছে পদ্মা নদী, স্থানীয় রাস্তাঘাট, বাড়িঘর। এ ছাড়া অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলার ফলে অর্থনৈতিক জোন এলাকার জমি, লালপুর কলোনিতে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের অর্ধশতাধিক বাড়ি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, লালপুর থানা, লালপুর সদর বাজার, নদীরক্ষা বাঁধসহ প্রায় ৩০টি গ্রামের নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমতাবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি রোধে বালু উত্তোলন বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

এ বিষয়ে বালু ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল মামুন দাবি করেন, ‘বালু উত্তোলনে প্রশাসনের অনুমতি আছে। সার্ভেয়ার গিয়ে নকশা অনুযায়ী জায়গায় নির্ধারিত করে দিয়েছেন।’

সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাম্মী আক্তার বলেন, কাউকে নদী থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি ও জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। ইতিমধ্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা সুলতানা বলেন, পদ্মার দুটি বালুমহালের একটিকে উত্তোলন অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। অপরটি মামলার কারণে ইজারা বন্ধ রয়েছে। তবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত