Ajker Patrika

এক মণ পেঁয়াজে এক তরমুজ!

শাহীন আক্তার পলাশ, শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) 
আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২২, ১৬: ৫০
Thumbnail image

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ধস নেমেছে পেঁয়াজ-রসুনের বাজারে। প্রতি মণ পেঁয়াজ-রসুন বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫০০ টাকায়। অথচ বাজারে একটি বড় সাইজের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা দরে। কেনাবেচার এ ভরা মৌসুমে পেঁয়াজ-রসুনের দামে হতাশ চাষিসহ সংশ্লিষ্টরা।

শৈলকুপা উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ঘুরে দেখা যায়, প্রকারভেদে পেঁয়াজ ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা মণ দরেও বিক্রি হচ্ছে। তবে রসুন বিক্রি হচ্ছে আরও কম দামে। ২০০ থেকে ৩০০ টাকা মণ, সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। কোনো কোনো হাটে রসুনের দামই পাচ্ছে না চাষি এবং ব্যবসায়ীরা। সে ক্ষেত্রে ফেলে দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ঝিনাইদহে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হলেও এবার প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ফলন কম হয়েছে। প্রতি মণ পেঁয়াজ গত মৌসুমে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি হলেও এবার ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি বিঘা জমি থেকে কৃষকেরা গত মৌসুমে ১০০ মণ করে পেঁয়াজ ঘরে তুললেও এবার ৫০ থেকে ৬০ মণ করে পেঁয়াজ পেয়েছেন।

মাঠ থেকে পেঁয়াজ বাড়িতে এনে কাটা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করাসহ বাজারজাত ও ঘরে রাখা নিয়ে কৃষকদের দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহের ছয় উপজেলার মধ্যে শৈলকুপায় সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ চাষ হয়। জেলার ১০ হাজার হেক্টর জমির পেঁয়াজের মধ্যে এখানেই এবার চাষ হয়েছে ৮ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমিতে।

শৈলকুপায় প্রতি শনি ও মঙ্গলবার হাট বসে পেঁয়াজের। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকার ও ব্যাপারীরা একদিন আগেই চলে আসেন শৈলকুপাতে। তাঁরা ট্রাকভর্তি করে পেঁয়াজ নিয়ে যান দেশের অন্যান্য বড় বড় হাট-বাজারে।

উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পেঁয়াজ, খেতেও রয়েছে। কৃষকেরা বাড়িতে এনে স্তূপ করে রাখছেন বিক্রির আশায়। তবে পেঁয়াজ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বেশির ভাগ পেঁয়াজ তুলেই বিক্রি করতে বাধ্য হন তাঁরা।

বিজুলিয়া গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির বাইরে মেয়েরা পেঁয়াজ থেকে গাছ কেটে আলাদা করছেন। বাড়ির মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পেঁয়াজ। ঘর-বারান্দা কোথাও একটু খালি জায়গা নেই। তিনি জানান, এ বছর বেশ কয়েক বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছেন। ফলন ভালো হয়নি আর বিক্রিও করতে হচ্ছে পানির দরে।

মনোহরপুর গ্রামের কৃষক লিটু, তাহেরসহ কয়েকজন জানান, প্রতি বিঘায় সব মিলিয়ে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে ফলন কম হওয়ায় এবার ১ বিঘায় ৫০ থেকে ৬০ মণ করে পেঁয়াজ পাচ্ছেন। প্রতি মণ পেঁয়াজ ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এতে সার-ওষুধ আর কৃষি শ্রমিকের বিল পরিশোধ করাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

শৈলকুপার চর সোন্দাহ গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারিভাবে এ উপজেলায় পেঁয়াজ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। যে কারণে কৃষকেরা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারেন না। তাই সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হন।’

শৈলকুপার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রেজাউল বিশ্বাস জানান, দেশে পেঁয়াজের চাহিদার বড় একটি অংশ শৈলকুপা থেকে জোগান দেওয়া হয়।

উপজেলার পাইকপাড়া ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কোরবান আলী জানান, এ ব্লকে ৪০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। এখানে ১ হাজা ৫৬০টি কৃষি পরিবার রয়েছে। কম-বেশি প্রায় সব পরিবারের জমিতে রয়েছে পেঁয়াজ। চাষটি ক্রমেই বাড়ছে বলে তিনি জানান।

শৈলকুপা বাজারের পেঁয়াজ-রসুন ব্যবসায়ী মশিউর রহমান বলেন, ‘রসুন-পেঁয়াজের কোনো দাম নেই। অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে এসব পণ্য।’

শৈলকুপা উপজেলা বণিক সমিতির সভাপতি আব্দুস সোবহান জানান, এক মণ রসুন বিক্রি করে, সেই টাকায় একটি তরমুজও কেনা যাচ্ছে না। বাজারে অনেক ব্যবসায়ী রসুন ফেলে দিচ্ছেন। তিনি দ্রুত রসুন ও পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের দাবি জানান।

এ বিষয়ে শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকরাম হোসেন জানান, এ উপজেলায় ক্রমেই পেঁয়াজের চাষ বাড়ছে। এবার অবশ্য প্রাকৃতিক কারণে উপজেলায় পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়নি। আর পেঁয়াজের দাম নিয়ে কৃষকদের হতাশা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চাষিদের উচিত পেঁয়াজ কিছুদিন সংরক্ষণ করা। পেঁয়াজ-রসুনের দাম কমের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত