Ajker Patrika

জলবায়ু পরিবর্তন দুর্বিষহ করে তুলছে জনজীবন, সিপিআরডির গবেষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ পর্যন্ত উন্নয়ন পৌঁছায় না বলে দাবি করেছেন পরিবেশবিদরা। তারা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘন, বেকারত্ব-দারিদ্র্য বৃদ্ধি, উৎপাদনশীলতা হ্রাস, সামাজিক অবক্ষয়, বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রমও বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব আরও বেশি ভোগান্তি সৃষ্টি করছে।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করা হয়। সিপিআরডি আয়োজিত এই আয়োজনে পরিবেশবিদরা বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আরও বেশি ভোগান্তি সৃষ্টি করছে। এই পরিবর্তনের কারণে মানুষের জীবনযাত্রার ও জীবিকার পরিবর্তন আসছে। বাংলাদেশে ৩টি অঞ্চল মোংলা, রাজশাহী ও শরীয়তপুরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, আকস্মিক দুর্যোগ, লবণাক্ততার কারণে এসব অঞ্চলের ২০০টি পরিবার ৯ কোটি ২৪ লক্ষ ৯৮ হাজার প্রত্যক্ষ আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া তারা স্বাস্থ্য সংকট, বাস্তুচ্যুতি, সামাজিক ও যৌন হয়রানি, পানিসংকট, স্কুল থেকে ঝরে পড়া, শিশু শ্রম, বাল্যবিবাহ, সহিংসতা, মানসিক বিপর্যয়, ক্যানসারসহ নানা সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গত ২০ বছরে মানুষ তাদের গৃহপালিত পশু পাখি হারিয়েছেন। যার ক্ষতির পরিমাণ ৬৭ লক্ষ ৫৩ হাজার ৮০০ টাকা। মানুষের ঘর বাড়ি, ফসল হানির পাশাপাশি কর্মঘণ্টা কমে গেছে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ২০০ জন মানুষের মধ্যে ২২ দশমিক ৬৮ শতাংশ মানুষ বলেন তারা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় ভোগেন, ৪০ দশমিক ২১ শতাংশ মানুষ তাদের পেশ বদলিয়েছেন, ২৬ দশমিক ৮০ শতাংশ মানুষ কর্ম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।

রোগ ব্যাধির ক্ষেত্রে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ বলেন, তারা এবং তাদের পরিবারে রোগ ব্যাধি বৃদ্ধি পেয়েছে। দুর্যোগে অধিক মাত্রায় বেশি বঞ্চনার শিকার হন নারীরা। ৫৫ দশমিক ৭ শতাংশ গর্ভবতী এবং বয়স্ক নারীর স্বাস্থ্য সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

গবেষণায় অংশ নেওয়া ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, নারীদের বিভিন্ন স্ত্রীরোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ৭৩ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছেন, নারীদের চর্মরোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছেন, নারীদের প্রসবজনিত জটিলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। খাবারের অধিকার, সুস্থ ভাবে বাঁচার অধিকার এবং কর্ম প্রাপ্তির অধিকারের দিক থেকে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বরেন্দ্র অঞ্চলে। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং নৃ জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার বিনষ্ট হওয়া এবং ভোগান্তি সব থেকে বেশি।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের গবেষণা ফলাফলগুলো বাংলাদেশে সফররত ইউএনএইচসিআর-এর জলবায়ু ও মানবাধিকার দূত ড. ইয়ান ফ্রাইকে এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের আহ্বান জানান বক্তারা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, প্রকৃতি নির্ভর ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে ব্যবহার না হওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। এই অধিকার যাদের লঙ্ঘন হচ্ছে তাদের কথাগুলো নীতি নির্ধারকদের কাছে পৌঁছে না। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশ পানি দুষ্প্রাপ্যের দেশ। শুকনো মৌসুমে মাত্র ২০ ভাগ পানি আসে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আমাদের বেশি ক্ষতি হচ্ছে। এ জন্য আমাদের সচেতন হতে হবে। পিতৃভূমি রক্ষা করা মানুষের মানবাধিকার। কিন্তু এটি রক্ষা করা হচ্ছে না।’

জলবায়ু পরিবর্তনে যাদের অবদান বেশি তাদের সমস্যা সমাধানে বেশি এগিয়ে আসার আহ্বান জানান শরীফ জামিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত