Ajker Patrika

‘একটা কাজের জন্যও আমি বাংলাদেশে যেতে প্রস্তুত’

মীর রাকিব হাসান
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১৯: ১৯
‘একটা কাজের জন্যও আমি বাংলাদেশে যেতে প্রস্তুত’

নিউইয়র্কে ওমিক্রনের প্রকোপ শুরু হয়েছে। কড়াকড়ি বেড়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত বড় আয়োজনে বড়দিন পালন হয়। কিন্তু এবারও গত বছরের মতো সীমিত আকারেই উৎসবটা পালন হবে না বলে জানান জনপ্রিয় অভিনেতা টনি ডায়েস। এই অভিনেতা দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, ‘ইনডোরে মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এ রকম পরিস্থিতিতে অনেক ধরনের আয়োজন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যেমন নিউইয়র্কে মঞ্চনাটক বিনোদনের একটা বড় পার্ট। সেই শোগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। হয়তো সিনেমা হলও বন্ধ হয়ে যাবে। সবকিছু মিলিয়ে এই বছর আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল জমজমাটভাবে ক্রিসমাস উদ্‌যাপন করতে পারব, সেটা হবে না। আমাদের বাসায় একটা পার্টির আয়োজন ছিল, সেটা বাতিল করে দিয়েছি। পার্টি হলেও সেটা খুবই ঘনিষ্ঠ কয়েকজন আত্মীয়স্বজন থাকবে। ম্যানহাটনে আজ ক্রিসমাসের দিন পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাব। ওখানে অনেক লাইটিং করে। বিষয়টা দেখতে খুব ভালো লাগে। এবারের ক্রিসমাস প্ল্যান এটুকুই।’

পরিবারের সঙ্গে টনি ডায়েসটনি ডায়েসের ছোটবেলা বা শৈশব আশির দশকে। নব্বইয়ে যৌবন। সেই সময় ক্রিসমাস কেমন ছিল? ‘ক্রিসমাস, পূজা বা ঈদ অন্য রকম ছিল। সারা দিন এই বাড়ি ওই বাড়ি ঘুরতাম। শীতের সময় অনেক রকম পিঠা বানাতেন মা। পিঠা ক্রিসমাসের একটা বড় আনুষ্ঠানিকতা। পিঠা খাওয়ার জন্য খ্রিষ্টান বন্ধুদের পাশাপাশি মুসলিম, হিন্দু বন্ধুরাও আমাদের বাড়িতে চলে আসত। সেই দিন আর নেই।’ বলেন টনি।

যুক্তরাষ্ট্রেও একটা মজা আছে। অনেক কালারফুল হয়। ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকেই রাস্তাঘাট দোকান সব সাজানো হয়। টনি ডায়েস বলেন, ‘আমরা বাড়ি সাজাই। যে দোকানে যাব হয়তো একটা চকলেট বা কেক দেবে, সব জায়গায় ক্রিসমাসের একটা ফ্লেভার। গান বাজতে থাকবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সবচেয়ে বড় উদাহরণ যুক্তরাষ্ট্র। এখানে ধর্ম নিয়ে কেউ কোনো কথা বলে না। যাঁর সঙ্গেই কথা বলি কেউ জিজ্ঞেস করবে না, তুমি কোন ধর্মের? যার ফলে এখানে সবাই যে যার মতো ধর্ম পালন করে।’

বারো বছর পর বিটিভির অঙ্গনে টনি ডায়েসসামনে থার্টি ফার্স্ট নাইট। পৃথিবীর অন্যতম বড় উৎসব হয় নিউইয়র্কে, টনির ধারণা সেটাও হয়তো সীমিত আকারে হবে। ‘গত বছরও তো সীমিত আকারে হয়েছে। আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে সেটা জানা যাবে।’

কিছুদিন আগেই বাংলাদেশে ঝটিকা সফরে এসে আবারও নিজ বাসভূমে ফিরে গেলেন নব্বই দশকের জনপ্রিয় এই অভিনেতা। আমেরিকান হোন্ডা কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত টনি ডায়েস দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশের টিভি দর্শকের জন্য বিশেষ এক উপহার রেখে গেছেন। বড়দিনে মাছরাঙা টেলিভিশনের নিয়মিত আয়োজন ‘রাঙা সকাল’ -এর বিশেষ পর্বে অংশ নিয়েছেন তিনি।

এই অনুষ্ঠানে টনি ডায়েস জানিয়েছেন তাঁর না বলা অনেক কথা। খ্রিষ্টান রোমান ক্যাথলিক টনি ডায়েস শুধু চার্চে গিয়ে বা ঘর সাজিয়ে ক্রিসমাস পালন করেন তা নয়, শারদীয় দুর্গাপূজার সময় স্থানীয় মন্দিরে গিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে পূজা দেখা বা ঈদের দিন মুসলিম বন্ধুদের সঙ্গে কোলাকুলি করা তাঁর অন্যতম ভালো লাগার বিষয়। ঈদে দুধ-সেমাই না খেলে পুরো বছরের আনন্দই তাঁর অপূর্ণ মনে হয়। শুধু তা-ই নয়, এসএসসিতে ধর্ম বিষয়ে ইসলামিয়াত নিয়ে পড়াশোনা করে পূর্ণমান ১০০ তে ৯৮-ও পেয়েছিলেন তিনি। টনি বলেন, ‘ঢাকা শহরের এমন একটা জ্যাম, এক দিনে দুই-তিনটা কাজ করা যায় না। যুক্তরাষ্ট্রে এক দিনে কয়েকটা কাজ সহজেই করা যায়। তাতে কাপড়ও ময়লা হবে না। এখন একটা ইন্টারভিউ দিতে যদি একটা চ্যানেলে যাই বা একটা পত্রিকায় যাই, সবাই লাইভ করতে চায়। তাহলে দেখা যায় ওই দিন আমার অন্য কিছু করা হবে না। যার ফলে বেশির ভাগকেই না করতে হয়েছে। সবার কাছে রীতিমতো মাফ চাইতে হয়েছে।’ তবে মাছরাঙার এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ না করতে পারেননি। রুম্মান রশিদ খান এই অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। টনি বলেন, ‘রুম্মান আমার খুব কাছের মানুষ। ও এমনভাবে ধরেছে। আর আমি বাংলাদেশে গিয়ে যেখানে থাকতাম, মাছরাঙা টেলিভিশন বলতে গেলে রাস্তার ও পাশেই। রুম্মানের অনুরোধেই যেতে হলো। বড়দিনে সকালে অনুষ্ঠানটি প্রচার হয়।’

টনি ডায়েস ও প্রিয়া ডায়েসবিদেশ-বিভুঁইয়ে কেমন কাটছে দিন? ‘আমরা যারা প্রথম প্রজন্ম বিদেশে এসেছি। তাদের সব সময়ই মনে হয় কী যেন নেই। আমাদের সন্তানদের হয়তো সেভাবে টান থাকবে না। এটা মৃত্যু পর্যন্ত থাকবে। যতই আমরা সুখে থাকি ভালো থাকি, অর্থকড়ি থাকুক তারপরও মনের মধ্যে কী যেন একটা থাকে না। সব সময় খচখচ করে। হয়তো পরবর্তী প্রজন্মের সেই কষ্টটা হয় না। এই যে আমি এত দিন। কিন্তু মনে হয় দেশে যদি একবার ঘুরে আসতে পারতাম।’

বাংলাদেশ থেকে যদি ভালো কাজের অফার আসে প্রস্তুত এই অভিনেতা। তিনি বলেন, ‘আমি সব সময়ই বলি, কেউ যদি ভালো কাজ করতে চায় ডেফিনিটলি দুই সপ্তাহের জন্য চলে আসতে পারব সমস্যা নেই। আমাকে অনেকে বলেও যে প্রচুর কাজ হয় ভালো পারফর্মার পাওয়া যায় না। আমি বলেছি যে তোমরা প্ল্যান করো আমি চলে যাবো। একটা কাজের জন্যও আমি বাংলাদেশে যেতে প্রস্তুত। বাংলাদেশ এখান থেকে অনেক দূরে। ২২-২৪ ঘন্টার একটা জার্নি। তারপরও একটা ভালো কাজের জন্য আমি যেতে প্রস্তুত। একজন অভিনেতার মনে ক্ষুধা থাকে যে সে বৃদ্ধ বয়সে হলেও ভালো চরিত্রের লোভ সামলাতে পারে না। তেমনি সাত সমুদ্র দূরে থাকলেও আমি ভালো কাজের অফার পেলে যেতে প্রস্তুত। আমি আবার সবাইকে উৎসাহও দেই, আমেরিকাতে এসেও শুটিং করো তোমরা। সেখানে আমার সাধ্যমতো আমি সাহায্য করার চেষ্টা করবো। সবাইকে তো বড় গণ্ডি তৈরী করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত