রাইসুল ইসলাম আসাদ
১৬ ডিসেম্বর আমি ঢাকাতেই ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধে আমি ঢাকার উত্তর বাহিনীতে ছিলাম। আমাদের কমান্ডার ছিলেন রেজাউল করিম মানিক ভাই। মানিকগঞ্জের একটি ব্রিজ অপারেশনে গিয়ে তিনি শহীদ হলে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু আমাদের কমান্ডার হন। মানিকগঞ্জে আমাদের মেইন ক্যাম্প ছিল। ঢাকায় উত্তর বাহিনীর ছোট্ট একটা ইউনিট ছিল। যখন দেশ স্বাধীন হয়, তখন আমি ওই ইউনিটের দায়িত্বে ছিলাম।
অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর সময়টায় আমি ঢাকাতেই ছিলাম। মাঝে একবার ক্যাম্পে গিয়েছিলাম, যেদিন ভারত এয়ার অ্যাটাক করে। ডিসেম্বরের ২ বা ৩ তারিখ রাতে হবে সম্ভবত। তার আগের দিন একটা অপারেশনের পারমিশনের জন্য গিয়েছিলাম। আমরা যারা গেরিলা অপারেশন করেছি, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাদের চোখমুখে কী আনন্দ! সেই আনন্দে তো কেবল হাসি আসেনি! আমাদের সবার চোখের আর মনের ভাষা কী ছিল, সেটা আসলে বলে বোঝানো যাবে না। শুধু তাকিয়ে দেশটাকে দেখতাম। এখন যেমন ১৬ ডিসেম্বর উদ্যাপন করা হয় মাইকে হিন্দি গান ছেড়ে, ব্যাপারটি তো সেটা ছিল না। তখন ঢাকায় লোকও তো ছিল না। পাকিস্তানিরা কত লোক মেরে ফেলল! এর মধ্যে দেশের বাইরে ছিলেন অনেকে। পৃথিবীতে এমন কোনো ভাষা নেই, যা দিয়ে ওই মুহূর্তটা প্রকাশ করা সম্ভব। সেই ভারতে যাওয়া, সেখানে ট্রেনিং নিয়ে অস্ত্র নিয়ে বর্ডারে ফাইট করা। তারপর সাভারে এসে থামলাম। এরপর মেইন ক্যাম্পসহ বিভিন্ন জায়গায় অস্ত্র পৌঁছে দেওয়া। প্রতি মিনিটে যে কী টেনশন, ভয় নিয়ে থাকতে হতো। সেটা বলে বোঝানো সম্ভব নয়।
১৬ ডিসেম্বর আমি ঢাকার গুলবাগে এক বোনের বাসায় ছিলাম। যখন এয়ার অ্যাটাক হয়ে গেল। তখনই আমরা বুঝলাম যে কিছু হতে যাচ্ছে। আমাদের কাছে আগেই খবর এসেছে, ঢাকার আশপাশে যারা আছে, তারা যেন ঢাকার দিকে ঢুকতে থাকে। অ্যাটাক করতে করতে এগোতে হবে। ১৬ ডিসেম্বর সকালে রাস্তায় বের হলাম। আমার বোনজামাই সঙ্গে ছিলেন। রাস্তাঘাট পুরো ফাঁকা। কোনো কিছু বোঝা যাচ্ছে না। আমরা গুলবাগ থেকে মালিবাগের মোড়ের দিকে যেতে যেতে দু-একটা আর্মির গাড়ি বা ট্রাককে ধীরগতিতে চলে যেতে দেখলাম। যখন মেইন রোডের কাছাকাছি চলে আসি, তখন দেখি অদ্ভুত পোশাকের কিছু মানুষ। ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় যাঁদের আটকে রাখা হয়েছিল। টর্চার করা হয়েছিল। হয়তো তাঁরাই বাইরে বেরিয়েছেন। দেখেই বোঝা যায় কতটা মানসিক বিপর্যস্ত তাঁরা। অনেকেরই গায়ের পোশাকটিও ঠিক নেই। তখনো বুঝতে পারছি না কী হচ্ছে। যত বেলা বাড়ছিল, বুঝতে পারছিলাম বড় কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও শোনা যাচ্ছিল যে দেশ স্বাধীন হচ্ছে।
দুপুর থেকেই ঢাকায় হুলুস্থুল হয়ে গেল। ভারতীয় আর্মিরা ট্যাংক নিয়ে ঢুকে পড়ল। মানুষজন রাস্তায় বের হতে থাকল। আমাদের একটা ক্যাম্প ছিল নবরত্ন কলোনি, এখন যেখানে বেইলি রোড, ওখানে। ৪ নম্বর বাড়িতে। ফকিরাপুলে একটা ক্যাম্প ছিল। এগুলো গোপন ক্যাম্প। ওখানে থেকে আমরা বিভিন্ন অপারেশনে যেতাম। ১৬ ডিসেম্বর আমি সেই বাড়িতে গেলাম। সেদিনও কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় গোলাগুলি হচ্ছিল। ওই দিনও অনেকে আহত হয়েছেন। আমার পরিচিত দুজন গুলিতে আহত হয়েছেন ঢাকায়। ওই নবরত্ন বাড়ির পরিবার আমাদের অনেক সাহায্য করত। ওই পরিবারের এক মেয়ে সেদিন ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে আহত হন। তারপর তো দুপুরের মধ্যেই জানা গেল পাকিস্তানি আর্মি সারেন্ডার করবে রেসকোর্স ময়দানে।
বিকেলের দিকে আমি পল্টনে আমার বাড়িতে গেলাম। তখন রাত ৯টা বা সাড়ে ৯টা হবে, খবর এল আমাদের কমান্ডার নাসির উদ্দীন ইউসুফ দল নিয়ে ঢাকায় এসেছেন। আমরা ৫২ জনের একটা টিম ছিলাম। পুরো টিমকে আবার চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। আমরা ভাগ হয়ে আবার লোকাল লোক রিক্রুট করতাম। সিদ্ধান্ত হলো, সবাইকে ঢাকায় আনা হবে। সেই রাতেই যারা ঢাকায় ছিলাম, তারা গাড়ি বা যানবাহন জোগাড় করতে শুরু করলাম। আমাদের সঙ্গের অনেকে শহীদ হয়েছেন। তাঁদের কথা সেদিন খুব মনে পড়ছিল। অবশেষে আমরা নিজেদের একটা দেশ পেয়েছি। আবেগে আমাদের চোখ ভিজে আসছিল বারবার।
অনুলিখন: মীর রাকিব হাসান
১৬ ডিসেম্বর আমি ঢাকাতেই ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধে আমি ঢাকার উত্তর বাহিনীতে ছিলাম। আমাদের কমান্ডার ছিলেন রেজাউল করিম মানিক ভাই। মানিকগঞ্জের একটি ব্রিজ অপারেশনে গিয়ে তিনি শহীদ হলে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু আমাদের কমান্ডার হন। মানিকগঞ্জে আমাদের মেইন ক্যাম্প ছিল। ঢাকায় উত্তর বাহিনীর ছোট্ট একটা ইউনিট ছিল। যখন দেশ স্বাধীন হয়, তখন আমি ওই ইউনিটের দায়িত্বে ছিলাম।
অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর সময়টায় আমি ঢাকাতেই ছিলাম। মাঝে একবার ক্যাম্পে গিয়েছিলাম, যেদিন ভারত এয়ার অ্যাটাক করে। ডিসেম্বরের ২ বা ৩ তারিখ রাতে হবে সম্ভবত। তার আগের দিন একটা অপারেশনের পারমিশনের জন্য গিয়েছিলাম। আমরা যারা গেরিলা অপারেশন করেছি, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাদের চোখমুখে কী আনন্দ! সেই আনন্দে তো কেবল হাসি আসেনি! আমাদের সবার চোখের আর মনের ভাষা কী ছিল, সেটা আসলে বলে বোঝানো যাবে না। শুধু তাকিয়ে দেশটাকে দেখতাম। এখন যেমন ১৬ ডিসেম্বর উদ্যাপন করা হয় মাইকে হিন্দি গান ছেড়ে, ব্যাপারটি তো সেটা ছিল না। তখন ঢাকায় লোকও তো ছিল না। পাকিস্তানিরা কত লোক মেরে ফেলল! এর মধ্যে দেশের বাইরে ছিলেন অনেকে। পৃথিবীতে এমন কোনো ভাষা নেই, যা দিয়ে ওই মুহূর্তটা প্রকাশ করা সম্ভব। সেই ভারতে যাওয়া, সেখানে ট্রেনিং নিয়ে অস্ত্র নিয়ে বর্ডারে ফাইট করা। তারপর সাভারে এসে থামলাম। এরপর মেইন ক্যাম্পসহ বিভিন্ন জায়গায় অস্ত্র পৌঁছে দেওয়া। প্রতি মিনিটে যে কী টেনশন, ভয় নিয়ে থাকতে হতো। সেটা বলে বোঝানো সম্ভব নয়।
১৬ ডিসেম্বর আমি ঢাকার গুলবাগে এক বোনের বাসায় ছিলাম। যখন এয়ার অ্যাটাক হয়ে গেল। তখনই আমরা বুঝলাম যে কিছু হতে যাচ্ছে। আমাদের কাছে আগেই খবর এসেছে, ঢাকার আশপাশে যারা আছে, তারা যেন ঢাকার দিকে ঢুকতে থাকে। অ্যাটাক করতে করতে এগোতে হবে। ১৬ ডিসেম্বর সকালে রাস্তায় বের হলাম। আমার বোনজামাই সঙ্গে ছিলেন। রাস্তাঘাট পুরো ফাঁকা। কোনো কিছু বোঝা যাচ্ছে না। আমরা গুলবাগ থেকে মালিবাগের মোড়ের দিকে যেতে যেতে দু-একটা আর্মির গাড়ি বা ট্রাককে ধীরগতিতে চলে যেতে দেখলাম। যখন মেইন রোডের কাছাকাছি চলে আসি, তখন দেখি অদ্ভুত পোশাকের কিছু মানুষ। ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় যাঁদের আটকে রাখা হয়েছিল। টর্চার করা হয়েছিল। হয়তো তাঁরাই বাইরে বেরিয়েছেন। দেখেই বোঝা যায় কতটা মানসিক বিপর্যস্ত তাঁরা। অনেকেরই গায়ের পোশাকটিও ঠিক নেই। তখনো বুঝতে পারছি না কী হচ্ছে। যত বেলা বাড়ছিল, বুঝতে পারছিলাম বড় কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও শোনা যাচ্ছিল যে দেশ স্বাধীন হচ্ছে।
দুপুর থেকেই ঢাকায় হুলুস্থুল হয়ে গেল। ভারতীয় আর্মিরা ট্যাংক নিয়ে ঢুকে পড়ল। মানুষজন রাস্তায় বের হতে থাকল। আমাদের একটা ক্যাম্প ছিল নবরত্ন কলোনি, এখন যেখানে বেইলি রোড, ওখানে। ৪ নম্বর বাড়িতে। ফকিরাপুলে একটা ক্যাম্প ছিল। এগুলো গোপন ক্যাম্প। ওখানে থেকে আমরা বিভিন্ন অপারেশনে যেতাম। ১৬ ডিসেম্বর আমি সেই বাড়িতে গেলাম। সেদিনও কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় গোলাগুলি হচ্ছিল। ওই দিনও অনেকে আহত হয়েছেন। আমার পরিচিত দুজন গুলিতে আহত হয়েছেন ঢাকায়। ওই নবরত্ন বাড়ির পরিবার আমাদের অনেক সাহায্য করত। ওই পরিবারের এক মেয়ে সেদিন ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে আহত হন। তারপর তো দুপুরের মধ্যেই জানা গেল পাকিস্তানি আর্মি সারেন্ডার করবে রেসকোর্স ময়দানে।
বিকেলের দিকে আমি পল্টনে আমার বাড়িতে গেলাম। তখন রাত ৯টা বা সাড়ে ৯টা হবে, খবর এল আমাদের কমান্ডার নাসির উদ্দীন ইউসুফ দল নিয়ে ঢাকায় এসেছেন। আমরা ৫২ জনের একটা টিম ছিলাম। পুরো টিমকে আবার চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। আমরা ভাগ হয়ে আবার লোকাল লোক রিক্রুট করতাম। সিদ্ধান্ত হলো, সবাইকে ঢাকায় আনা হবে। সেই রাতেই যারা ঢাকায় ছিলাম, তারা গাড়ি বা যানবাহন জোগাড় করতে শুরু করলাম। আমাদের সঙ্গের অনেকে শহীদ হয়েছেন। তাঁদের কথা সেদিন খুব মনে পড়ছিল। অবশেষে আমরা নিজেদের একটা দেশ পেয়েছি। আবেগে আমাদের চোখ ভিজে আসছিল বারবার।
অনুলিখন: মীর রাকিব হাসান
শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় আজ বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে লালনসংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীনকে। তাঁর রক্তচাপ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। সংক্রমণ বেড়ে গেছে। কিডনি জটিলতাও রয়েছে। সব মিলিয়ে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
৫ ঘণ্টা আগেক্রিকেট বাংলাদেশের মানুষের কাছে ভালোবাসার জায়গা। বাংলাদেশের খেলার দিন মন পড়ে থাকে খেলার মাঠে। একটা ছক্কায় গোটা দেশ উল্লাসে মেতে ওঠে, একটা উইকেটে কোটি মানুষ একসঙ্গে চিৎকার করে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক গৌরবময় অধ্যায় ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জয়।
৬ ঘণ্টা আগেনাট্যদল জাগরণী থিয়েটারের ২১তম প্রযোজনা ‘কাদামাটি’। গত জুলাইয়ে মঞ্চে এসেছে নাটকটি। আগামীকাল ১১ সেপ্টেম্বর মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে দেখা যাবে এর তৃতীয় প্রদর্শনী।
৮ ঘণ্টা আগেঅনুমতি ছাড়া বলিউড অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়া রাইয়ের নাম-ছবি বেআইনিভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যমে। এআই নির্মিত অশ্লীল-বিকৃত ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। শুধু তা-ই নয়, প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে তাঁর কণ্ঠস্বরেরও অপব্যবহার হচ্ছে। তাই ভারতীয় আইন মোতাবেক ‘ব্যক্তিত্বের অধিকার’ কার্যকর করার দাবি
১৮ ঘণ্টা আগে