Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

শাড়ি পরে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনকে ভিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই

শাড়ি পরে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনকে ভিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে গণ-অভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এরই জের ধরে ৫ আগস্ট পতন হয় সরকারের। এ আন্দোলনে পুলিশ সদস্য নিহিত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ সদস্যরা কর্মবিরতিতে যায়। এতে দেশের সর্বত্র ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিজেরাই ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নেয়। তাঁদেরই একজন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আদিবা নওমী। সহপাঠীদের সঙ্গে সড়কের যানবাহনের শৃঙ্খলা ফেরাতে শাড়ি পরেই ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নামেন তিনি। আদিবার এহেন ব্যতিক্রমী কাজ মুহূর্তেই নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। জন্ম দেয় আলোচনার। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আব্দুর রাজ্জাক খান। 

প্রশ্ন: আপনার পরিচয় জানতে চাই। 
আদিবা নওমী: আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের একজন শিক্ষার্থী। পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ করছি আজকের পত্রিকার পাঠকের সংগঠন পাঠকবন্ধুর ক্যাম্পাস ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে। 

প্রশ্ন: আপনি একজন শিক্ষার্থী হয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ কেন করলেন? 
আদিবা নওমী: দেশের মানুষ যেটি গত ১৫ বছরে করতে পারেননি, আমরা শিক্ষার্থীরা সেটা অল্প কয়েক দিনে করে দেখিয়েছি। বর্তমানে পুলিশ সদস্যরা কর্মবিরতিতে যাওয়ায় দেশের ট্রাফিকব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। তাই নিজের এলাকার সড়কের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহপাঠীদের নিয়ে আমরা এখানে এসেছি। 

প্রশ্ন: আপনি কোন উদ্দীপনা থেকে দেশ সংস্কারের কাজে যুক্ত হলেন? 
আদিবা নওমী: বিগত সরকারের দুঃশাসনে দেশ এবং দেশের প্রায় সব খাত অনেকটা পিছিয়ে গিয়েছে। এই ভঙ্গুর দেশকে এখন আমাদের এগিয়ে নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের হাত ধরে দেশে যে সফল গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে, এই অভ্যুত্থানকে অর্থবহ করতে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। ছাত্রজনতাই পারবে সবকিছু নতুন করে শুরু করতে। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে এটি আমার নৈতিক দায়িত্ব। শুধু আমি না, আমার বিশ্ববিদ্যালয় এবং আশপাশে যত স্কুল-কলেজ রয়েছে, প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের বন্ধুরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও পরিচ্ছন্নতার এ কাজে যুক্ত হয়েছেন। 

প্রশ্ন: আপনাকে শাড়ি পরে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে, শাড়ি পরেই কেন? 
আদিবা নওমী: শাড়ি পরে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনকে ভিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই। শাড়ি বাঙালি নারীর ভূষণ। একটি মেয়ে যেভাবে সালোয়ার-কামিজ পরে সব কাজ করতে পারেন, একইভাবে একই কাজ শাড়ি পরেও করতে পারেন। আমাদের মায়েরা বেশির ভাগ সময় শাড়ি পরেন। শাড়ি আমাদের নারীদের একটা কমন পোশাক। তবে শাড়ি পরেও যে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা যায়, সেটাই আমি মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি।

আদিবা নওমী। ছবি: সংগৃহীতপ্রশ্ন: ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন ছাড়া আর কী কী কাজ করছেন? 
আদিবা নওমী: এখানে অভিভাবকেরা খাবার দিয়ে যাচ্ছেন। সেগুলো শিক্ষার্থীদের মাঝে বণ্টনের কাজটি আমি করছি। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারেও আমরা এগিয়ে এসেছি। সর্বোপরি জনসাধারণের মাঝে যেন সচেতনতা বৃদ্ধি করা যায়, এ সংকটময় পরিস্থিতিতে সেরকম কাজে নিজেদের যুক্ত করছি। 

প্রশ্ন: আপনারা কোটা সংস্কার করতে এসে এখন রাষ্ট্র সংস্কারে হাত দিয়েছেন। কী মনে হচ্ছে, কত দূর এগোতে পারবেন? 
আদিবা নওমী: বিগত বছরগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলো দেশকে যতটা না সামনে এগিয়ে নিয়েছে, তার চেয়েও বেশি অর্থ পাচার ও দুর্নীতি করেছে। আমরা আশা করি, বর্তমানে নতুন প্রজন্ম এসব জায়গায়ও হাত দেবে। নতুন করে সবকিছু গঠন করবে। আমি মনে করি, শিক্ষার্থীরাই পারবে আগামী বাংলাদেশকে একটি নতুন এবং সুন্দর রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে। তাই কতটুকু এগোতে পারব আসলে সেটি সময়ই বলে দেবে। তবে এটুকু বলতে পারি, সমন্বিত উদ্যোগ থাকলে এ দেশকে আর কেউ পেছাতে পারবে না। 

প্রশ্ন: দেশ সংস্কারের কাজে যুক্ত হতে পেরে কেমন লাগছে? 
আদিবা নওমী: একজন শিক্ষার্থী হিসেবে দেশ গঠনের মতো মহৎ কাজে যুক্ত করতে পেরেছি—এ আনন্দ বলে বোঝানো সম্ভব নয়। একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে, একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি বেশ আনন্দিত। রাস্তার রিকশাওয়ালা মামা থেকে শুরু করে আর্মি-আনসার ভাইদের কাছ থেকেও আমরা অনেক উৎসাহ পাচ্ছি। তাই সব মিলিয়ে আসলে এই অনুভূতি সবকিছুর ঊর্ধ্বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

পারভেজ হত্যায় অংশ নেয় ছাত্র, অছাত্র ও কিশোর গ্যাং সদস্য

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত