Ajker Patrika

দেশে দেশে ছাত্র আন্দোলন

মুসাররাত আবির
দেশে দেশে ছাত্র আন্দোলন

বিভিন্ন দেশের ক্রান্তিকালে নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। ইতিহাসে ঘটে যাওয়া তেমনই কয়েকটি ছাত্র আন্দোলন নিয়ে আজকের আয়োজন।

পেঙ্গুইন আন্দোলন
চিলি (২০০৬)

২০০৬ সালে চিলির স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে বেশ বড়সড় এক আন্দোলনের ঘটনা ঘটে যায়। তারা ৭০ দশকের নীতি অনুসরণ করা শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন আনার জন্য বিক্ষোভ করতে থাকে। চিলির স্কুলগুলোর ইউনিফর্মের রং ছিল সাদা-কালো। এ রঙের কারণে এই আন্দোলনের নাম দেওয়া হয়েছিল পেঙ্গুইন মুভমেন্ট।

প্রথমে গুটিকয়েক শিক্ষার্থী আন্দোলন শুরু করলেও ধীরে ধীরে ৪০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮ লাখ শিক্ষার্থী এই আন্দোলনে শামিল হয়। এটি ছিল দেশটির ইতিহাসে তিন দশকে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে বড় বিক্ষোভগুলোর একটি। শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাওয়া এবং সব ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। তাদের দাবি ছিল, বিনা মূল্যে বাসে যাতায়াতের সুবিধা দেওয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফি কমিয়ে দেওয়া। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে আরও ছিল আগের শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন এনে শিক্ষার্থীবান্ধব নতুন শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করা, শিক্ষার ব্যয় কমানো এবং শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত করা। তাদের স্লোগান ছিল ‘শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার, বিশেষ অধিকার নয়’। 

ছবি: সংগৃহীততল্যাতেলোলকো ম্যাসাকার
মেক্সিকো (১৯৬৮)

সেবার গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের আয়োজক ছিল মেক্সিকো। দেশটির সরকারের উদ্দেশ্য ছিল নিজের দেশ কেমন উন্নত ও স্থিতিশীল, তা আন্তর্জাতিক দরবারে তুলে ধরা। কিন্তু সে সময় মেক্সিকো বিভিন্ন কারণে ছিল বেশ দুর্দশাগ্রস্ত। ১৯২৯ সাল থেকে একদলীয় রাজনীতি চলার কারণে সেখানে গণতন্ত্র চর্চার কোনো সুযোগই ছিল না। অর্থনীতির অবস্থাও ছিল শোচনীয়। তাই অলিম্পিক শুরু হওয়ার ১০ দিন আগে ২ অক্টোবর প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী শান্তিপূর্ণভাবে প্লাজা দে লা ত্রেস কালচারসের সামনে মানববন্ধন শুরু করেন। তাঁদের স্লোগান ছিল, ‘আমরা অলিম্পিক চাই না, আমরা বিপ্লব চাই!’

আন্দোলন শুরুর কিছুক্ষণ পরেই দেশটির সৈন্যরা শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানো শুরু করে। এতে প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী মারা যান। গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করা হয় আরও হাজারখানেক শিক্ষার্থীকে। মেক্সিকো সেনাবাহিনীর হিসাবমতে, সেদিন প্রায় ৩৬০টি স্নাইপার তাক করা ছিল শিক্ষার্থীদের দিকে! বহু হতাহতের মাধ্যমে একসময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শেষ হয়।

২০০৮ সালে এই ম্যাসাকারের ৫০ বছর পূর্তির ঠিক এক সপ্তাহ আগে মেক্সিকো সরকার নিজের দোষ স্বীকার করে।

ছবি: সংগৃহীতহোয়াইট রিবন মুভমেন্ট
থাইল্যান্ড (২০২০-২০২২)

২০২০ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছিল থাইল্যান্ড। দেশটির রাজনীতিতে রাজপরিবারের অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনে ভোট কারচুপির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল। আন্দোলনের মূল কেন্দ্র ছিল ব্যাংককের ডেমোক্রেসি মনুমেন্ট। রাতদিন সেখানে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করতেন। সরকার ও রাজপরিবারের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে অচল হয়ে গিয়েছিল ব্যাংকক।

শিক্ষার্থীরা নিজেদের ১০ দফা দাবি পড়ে শোনান সেখানে। সেসব দাবিতে রাজপরিবারকে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি দায়বদ্ধ থাকার আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া রাজপরিবারের ব্যয় বরাদ্দ কমানো এবং রাজপরিবারকে রাজনীতিতে জড়িত না হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বেশির ভাগ থাই নাগরিক শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে সমর্থন জুগিয়েছিলেন। 

সেই আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে দেশটির সরকার সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিল। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা হাতের তিন আঙুল দিয়ে রানিকে প্রতিবাদী স্যালুট দেন। এটি পরে ছাত্র আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠে। এর পাশাপাশি তাঁরা নিজেদের ব্যাগে সাদা ফিতাও ঝুলিয়ে রাখেন। সে কারণে এই আন্দোলন হোয়াইট রিবন মুভমেন্ট নামে পরিচিতি পায়।

ছবি: সংগৃহীতফিস্ক ইউনিভার্সিটি ছাত্র আন্দোলন
যুক্তরাষ্ট্র (১৯২৪-১৯২৫)

তৎকালীন যে কয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার সুযোগ পেতেন, সেগুলোর একটি ছিল ফিস্ক ইউনিভার্সিটি। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতেন শ্বেতাঙ্গ মিশনারিরা। ফলে সেখানে ছিল অযাচিত বর্ণবাদী আচরণ। শ্বেতাঙ্গ কর্মকর্তারা কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীদের ওপর অত্যাচার চালানো শুরু করে পোশাক ও আচরণের ওপর নানান নিয়মকানুন আরোপ করে। তাদের আচরণের মাধ্যমে বারবার দাসপ্রথার কথা মনে করিয়ে দিতে থাকে কর্তৃপক্ষ।

এমন আচরণে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। পরিস্থিতি সামাল না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি এভেরি ম্যাকেনজি উল্টো কিছু শ্বেতাঙ্গ পুলিশকে দিয়ে ৭ জন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করান, যাঁদের দুজন সেদিন ক্যাম্পাসে ছিলেন না। এর ফলে আন্দোলন আরও জোরদার হয়ে ওঠে। এ ঘটনার পরদিন প্রায় ২ হাজার ৫০০ কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থী মিলে ম্যাকেনজির কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করেন।

আন্দোলনকারীরা টানা ১০ সপ্তাহ সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করা শুরু করেন। এরপরও ম্যাকেনজি শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাননি। পরে বোর্ডের সিদ্ধান্তে বাধ্য হয়ে ১৯২৫ সালের এপ্রিল মাসে তিনি পদত্যাগ করেন।

সূত্র: লা টাইমস, নিউইয়র্ক পাবলিক মিডিয়া, রিসার্চ গেট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আ.লীগের এমপি শাম্মীর বাসায় ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি ও ভাগ-বাঁটোয়ারার বিবরণ দিলেন রিয়াদ

ইউটিউবে ১০০০ ভিউতে আয় কত

বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারে সরকার, ভয়ে কলকাতায় দিলীপ কুমারের আত্মহত্যা

আক্কেলপুরে পুলিশের মোটরসাইকেলের ধাক্কায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের স্ত্রী নিহত

আপিল বিভাগে ঝুলে আছে আবেদন, এখনো কনডেম সেলে অনেকে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত