Ajker Patrika

নৈতিক শিক্ষাদান: শিক্ষকদের ভূমিকা

আফজাল হোসাইন
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

একজন শিক্ষার্থী যখন বিদ্যালয়ে পা রাখে, তখন সে শুধু বইয়ের পাতা উল্টাতে শেখে না, বরং শেখে জীবনের পাঠ। কিন্তু এ পাঠ শুধু অঙ্ক, বিজ্ঞান কিংবা ভাষার নয়; এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার নাম নৈতিক শিক্ষা। সাধারণত নৈতিকতা হচ্ছে সেই আলো, যা মানুষকে শুধু একজন দক্ষ কর্মী নয়, বরং একজন সৎ, দায়িত্বশীল এবং মানবিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে। এই আলোর প্রথম সংস্পর্শ হয় শ্রেণিকক্ষে, শিক্ষক নামক এক মহান ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে। কীভাবে শ্রেণিকক্ষে নৈতিকতার শিক্ষা অর্জন করা যায়, চলুন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

প্রয়োজনীয়তা ও সময়ের প্রেক্ষাপট

বর্তমানে প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সঙ্গে সঙ্গে যেমন সুবিধা এসেছে, তেমনি এসেছে বিভ্রান্তির ঝড়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, টেলিভিশন কিংবা ইন্টারনেট—সব জায়গা থেকে তরুণদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ঢুকে পড়ছে। তরুণদের মানসিকতা ও মূল্যবোধ যখন ক্রমাগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তখন শ্রেণিকক্ষ হয়ে উঠতে পারে নিরাপদ আশ্রয়। আর শিক্ষক হতে পারেন সেই আস্থার জায়গা। যিনি এই ঝড়ের মধ্যেও একজন শিক্ষার্থীকে স্থিরতা, সততা ও সঠিক পথে চলার সাহস দেন।

শ্রেণিকক্ষ শ্রেষ্ঠ জায়গা

শ্রেণিকক্ষ একটি ক্ষুদ্র সমাজের প্রতিচ্ছবি। এখানে প্রতিদিন ঘটে শিক্ষার আদান-প্রদান। কিন্তু এর বাইরেও ঘটে অনেক কিছু— সহানুভূতি, সহনশীলতা, দায়িত্ববোধ ও আন্তরিকতার চর্চা। এই জায়গাটিকে সবচেয়ে কার্যকরভাবে নৈতিক শিক্ষার ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা যেভাবে নিজেদের গড়ে তোলে, তাই ভবিষ্যতে তাদের কর্মজীবন, পারিবারিক জীবন এমনকি সমাজে আচরণের প্রতিফলন ঘটায়।

শিক্ষকের ভূমিকায় নৈতিকতার সংমিশ্রণ

একজন শিক্ষক তাঁর কথায় নয়, বরং কাজে শিক্ষার্থীদের বেশি প্রভাবিত করেন। শিক্ষক যদি প্রতিদিনের জীবনে সততা, করুণা, সময়ানুবর্তিতা ও দায়িত্বশীলতা দেখান, তাহলে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই এই গুণাবলি গ্রহণে আগ্রহী হয়। শিক্ষক যেন হয়ে ওঠেন জীবন্ত অনুকরণীয় আদর্শ—একজন রোল মডেল। তাঁদের প্রতিটি আচরণ শিক্ষার্থীদের মনে স্থায়ী ছাপ ফেলে।

নৈতিক শিক্ষার ধাপ

শ্রেণিকক্ষে নৈতিক শিক্ষাকে কার্যকর করতে শিক্ষকেরা নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন—

  • নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব বোঝানো: শিক্ষার্থীদের বোঝাতে হবে যে নৈতিকতা শুধু ব্যক্তিগত গুণ নয়, এটি সমাজ ও কর্মজীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ক্লাসের শুরুতে বা নির্দিষ্ট সময়ে নৈতিকতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করা যেতে পারে।
  • নৈতিক গল্প ও বাস্তবজীবনের উদাহরণ: ক্লাসের বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কিত নৈতিক গল্প বা সফল মানুষের উদাহরণ শেয়ার করা যেতে পারে। বিশেষ করে ব্যবসায়িক নৈতিকতা, সামাজিক দায়বদ্ধতা ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করা।
  • আলোচনা ও বিতর্কের আয়োজন: নৈতিকতার বিভিন্ন দিক নিয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতা বা মুক্ত আলোচনা আয়োজন করা যেতে পারে। যেমন: ‘সততা বনাম সাফল্য—কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ?’
  • নৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের চর্চা: শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের সমস্যা দিয়ে আলোচনা করতে দেওয়া, যেখানে তারা নৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে শিখবে। উদাহরণস্বরূপ: যদি কেউ পরীক্ষায় নকল করার সুযোগ পায়, তবে তার কী করা উচিত?
  • নৈতিক মূল্যায়ন ও প্রতিফলন: শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মমূল্যায়নের অভ্যাস গড়ে তোলা, যেন তারা নিজেদের কাজের ভালো-মন্দ বিচার করতে শেখে। মাঝে মাঝে শিক্ষার্থীদের বলতে দেওয়া, আজ আমি কী কোনো নৈতিক কাজ করেছি?

পাঠ্যবইয়ের বাইরে প্রভাব

একজন শিক্ষকের প্রভাব কেবল পাঠ্যপুস্তকে সীমাবদ্ধ নয়। একজন শিক্ষকের হৃদয় দিয়ে শেখানো প্রতিটি পাঠ শিক্ষার্থীর মনে গেঁথে থাকে বছরের পর বছর। তাঁর জীবনদর্শন, নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানবিক আচরণ শিক্ষার্থীদের গঠন করে একটি বৃহৎ মানবিক সমাজের ভিত্তি। যেমন: একজন কৃষক বীজ বপন করেন এবং সেই বীজ ধীরে ধীরে বৃক্ষ হয়ে ওঠে—তেমনি একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীর অন্তরে নৈতিকতার বীজ বপন করেন, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একদিন মহিরুহে পরিণত হয়।

লেখক: প্রভাষক, মার্কেটিং বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গলাধাক্কার পর ছোট্ট মেয়েটিকে লাঠি দিয়ে পেটালেন কফিশপের কর্মচারী

বিশ্বব্যাংকে সিরিয়ার ঋণ পরিশোধ করে দিচ্ছে সৌদি আরব

মাত্র তিনজনের জন্য লাখ লাখ মানুষ মরছে, কাদের কথা বললেন ট্রাম্প

‘চরিত্র হননের চেষ্টা’: গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পর দুদককে পাল্টা আক্রমণ টিউলিপের

জুয়ার বিজ্ঞাপনের প্রচার: আলোচিত টিকটকার জান্নাতের স্বামী তোহা কারাগারে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত