Ajker Patrika

দীর্ঘ বন্ধে ইবি থেকে হারিয়ে গেছে চার শিক্ষকসহ ৯ জন

পল্লব আহমেদ সিয়াম, ইবি
দীর্ঘ বন্ধে ইবি থেকে হারিয়ে গেছে চার শিক্ষকসহ ৯ জন

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) বন্ধের দীর্ঘ দেড় বছর পর নিজ শিক্ষাঙ্গনে আবারও ফিরতে শুরু করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে লম্বা এ সময়ে মারা গেছেন ইবির ৪ জন শিক্ষক, ৩ জন শিক্ষার্থী, ১ জন কর্মকর্তা এবং ১ জন কর্মচারী। আগামী ২০ অক্টোবর থেকে সশরীরে খুলছে ক্যাম্পাস। কিন্তু তাঁরা আর ফিরবেন না এ চিরচেনা আঙিনায়।   

চারজন শিক্ষকদের মধ্যে তিনজনই করোনায় মারা গেছেন। বাকি একজন হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। 

শিক্ষকদের মধ্যে চলতি বছরের সর্বশেষ গত ১৩ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার আমলা পাড়ার ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খোন্দকার আব্দুল্লাহ আল-হিল মাবুদ (জুয়েল) হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় নেওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করেন। খোন্দকার আব্দুল্লাহ আল-হিল মাবুদ (জুয়েল) বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ১৯৯৫-৯৬ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। 

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আকরাম হুসাইন মজুমদার গত ২৭ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুরের ইবনে সিনা হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৫০ বছর। 

গত ৫ মে দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। অধ্যাপক মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজের দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। 

এর আগে, চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি করোনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ও বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাইদুর রহমানের মৃত্যু হয়। ওই দিন ভোরে রাজধানীর কল্যাণপুরে ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। 

দীর্ঘ বন্ধে তিনজন শিক্ষার্থী হারিয়েছে ইবি পরিবার-
শিক্ষার্থীদের মধ্যে গত ২৬ সেপ্টেম্বর ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আল হাদীস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুর রাকিব মারা যান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। রাকিব চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার চর ইসলামাবাদ গ্রামের শিশ মোহাম্মদের ছেলে। 

গত ৯ জুলাই শিব্বির আহমেদ ফেরদৌস নামে এক শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। শিব্বির আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তর ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। 

এর আগে গত বছরের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে কুষ্টিয়ার মিরপুরে শ্যালোইঞ্জিন চালিত গাড়ি উল্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শিহাব আলী মৃত্যুবরণ করেন। নিহত শিহাব আলী মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের চুনিয়াপাড়া গ্রামের মনোয়ার হোসেনের ছেলে। 

অপরদিকে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন কর্মকর্তা-কর্মচারী মারা গেছেন। তাঁদের মধ্যে একজন গত ২৯ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদ্দাম হোসেন হলের সহকারী রেজিস্ট্রার জামিনুর রহমান দুদু ঝিনাইদহের শৈলকুপায় নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। অপরজন গত ৪ জুলাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন অফিসের ড্রাইভার গোলাম সরওয়ার। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৫২ বছর। 

তাঁদের মৃত্যুর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র মৈত্রী সভাপতি আব্দুর রউফ বলেন, দীর্ঘ বন্ধে আমরা হারিয়েছি তিন শিক্ষার্থী বন্ধুদের। আরও হারিয়েছি প্রিয় শিক্ষাগুরুদের। যাদের ছায়াতল পাওয়ার আর সৌভাগ্য আমাদের হবে না। বন্ধুদের আর কখনো আড্ডায় পাওয়া যাবে না। যেকোনো বিয়োগই বেদনার। তাঁদের আকস্মিক চলে যাওয়ায় ইবি পরিবার ব্যথিত। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. কাজী আখতার হোসেন বলেন, ইবি পরিবার থেকে ৪ গুণী শিক্ষকের প্রস্থানের ক্ষতি অপূরণীয়। সহকর্মী হারানোর বেদনায় আমরা মর্মাহত। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ৪ শিক্ষকদের পরিবারের যেকোনো প্রয়োজনে সঙ্গে আছে। আমরা আর কাউকে হারাতে চাই না। কাজেই সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করি, সুস্থ থাকি। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, দীর্ঘ ১৮ মাসে আমরা হারিয়েছি নয়টি তাজা প্রাণ। যাদের আর কখনো আমরা এ ক্যাম্পাসে পাবনা। যার ক্ষতি অপূরণীয়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত