Ajker Patrika

হত্যার পর বন্ধুর ফোন বিক্রি করে নারী নিয়ে হোটেলে রাত কাটায় কিশোর

বগুড়া প্রতিনিধি
আপডেট : ২৮ জুন ২০২২, ২০: ০৩
হত্যার পর বন্ধুর ফোন বিক্রি করে নারী নিয়ে হোটেলে রাত কাটায় কিশোর

এক নারীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার বাসনা পূরণ করতে বন্ধুকে হত্যা করেছে ১৬ বছরের কিশোর। ১৪ বছর বয়সী বন্ধুকে মজার ছলে হত্যা করে তার মোবাইল ফোন নিয়ে যায় সে। এরপর ফোন বিক্রির টাকা দিয়ে হোটেল ভাড়া করে ওই নারীর সঙ্গে রাত কাটায়। অবশেষে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। 

ঘটনাটি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার। নিহত কিশোর নওফেল ওই উপজেলার দাড়িগাছা হাটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম মো. ইসরাইল শেখ। সে উপজেলার দাড়িগাছা ইসলামী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

১৮ জুন নওফেলকে শ্বাসরোধে ও বাঁশের লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে খুন করা হয়। পরে ২০ জুন সন্ধ্যায় দাড়িগাছা ফুলবাড়িয়া গ্রামের একটি ঝোপ থেকে তার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিনই মধ্যরাতে বগুড়ার শাজাহানপুর থানায় অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা হয়। নিহত ব্যক্তির বাবা মামলাটি করেন বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাজাহানপুর থানার এসআই মো. আরিফুল ইসলাম। 

গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকার ঢাকা টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকা থেকে অভিযুক্ত কিশোরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সে একই উপজেলার বাসিন্দা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নওফেলকে হত্যার কথা সে স্বীকার করেছে। হোটেলে রাত কাটানো সেই নারীকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ২০ বছর বয়সী ওই নারীকে ২১ জুন সন্ধ্যায় তাঁর নিজ গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বগুড়ার পুলিশ সুপার (এসপি) সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী। 

এসপি জানান, মাস দুয়েক আগে জমি বিক্রির টাকা দিয়ে নওফেলকে ১৮ হাজার টাকায় স্মার্টফোন কিনে দেন বাবা। নওফেলের হাতে নতুন ফোন দেখার পর থেকেই তার বন্ধু সেটি হাতিয়ে নিতে ছক কষতে থাকে। নওফেলকে হত্যা করে তার ফোন বিক্রির টাকা দিয়ে পছন্দের নারীর সঙ্গে রাত কাটানোর ভয়ংকর পরিকল্পনা করতে থাকে সে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বেছে নেয় ১৮ জুন। কারণ, ওই দিন ছিল নওফেলের জন্মদিন। 

সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী আরও জানান, ১৮ জুন বেলা ১১টার দিকে নওফেলকে সঙ্গে নিয়ে দাড়িগাছা গ্রামের ফুলবাড়িয়া গ্রামের একটি জঙ্গলে যায় তার সেই বন্ধু। সেখানে দুজন নিয়মিত ধূমপান করত। ধূমপান করার কথা বলেই নওফেলকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। ধূমপান ও গল্প করার ফাঁকে ১৬ বছরের ওই কিশোর নওফেলকে বলে, ‘তোকে মাফলার দিয়ে সিনেমা স্টাইলে খুন করলে কেমন হয়!’ বন্ধুর মুখে এই কথা শুনে নওফেল বলে, ‘তুই তো আমাকে খুন করবি না।’ এরপরই ওই কিশোর অভিনয়ের ছলে পেছন থেকে মাফলার দিয়ে নওফেলের গলা পেঁচিয়ে ধরে। মাফলারটি তার গলায় আগে থেকেই ছিল। নওফেলের গলায় শক্ত করে মাফলার পেঁচিয়ে ধরে সে। একপর্যায়ে অচেতন হয়ে যায় নওফেল। মৃত্যু নিশ্চিত করতে জঙ্গলে পড়ে থাকা একটি বাঁশের লাঠি দিয়ে মাথায় দুবার আঘাত করে ওই কিশোর। এরপর মরদেহ ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে একটি ঝোপে লুকিয়ে রাখে। 

এসপি আরও জানান, বন্ধুকে খুনের পর ওই দিনই ওই নারীর সঙ্গে দেখা করে কিশোর। দুপুরে বগুড়া শহরের সাতমাথা এলাকায় একটি দোকানে ৫ হাজার টাকায় নওফেলের ফোনটি বিক্রি করে। এরপর তারা গালাপট্টি এলাকার হোটেল টুইন ব্রাদার্সে একটি কক্ষ ভাড়া করে। ২ হাজার টাকায় কক্ষ ভাড়া নেয় তারা। সেখানে কিশোরের আরেক বন্ধুও আসে। সে-ও কিশোর। অভিযুক্ত কিশোর ওই তরুণীকে ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে হোটেল ছেড়ে চলে যায়। 

পুলিশ সুপার বলেন, ২০ জুন নওফেলের মরদেহ উদ্ধারের পর থেকেই তদন্ত শুরু করা হয়। প্রথমে ফোন উদ্ধার এবং ওই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ঢাকার টঙ্গী থেকে ১৬ বছরের ওই কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মাফলার উদ্ধার করা হয়েছে। নওফেলের মরদেহ যেখান থেকে উদ্ধার করা হয়, সেখান থেকে মাফলারটিও উদ্ধার করা হয়েছে। 

এসপি সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘ওই নারী বর্তমানে কারাগারে আছেন। অভিযুক্ত কিশোরকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতিহাস দরজায় কড়া নেড়ে বলছে, ১৯৭১ থেকে পাকিস্তান কি শেখেনি কিছুই

‘আমাদের মরদেহ বাড়িতে নিয়ো না’

কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের খামারবাড়ি অবরোধের ঘোষণা

মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মীর পিঠে পাড়া দিয়ে অটোরিকশায় শহর ঘোরাল ছাত্রদল, সঙ্গে উচ্চ স্বরে গান

যশোরে আত্মগোপনে থাকা আ.লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বাড়িতে পুলিশের অভিযান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত