রিমন রহমান ও তৌসিফ কাইয়ুম
রাজশাহী: ‘দুঃখিত! রাবিতে নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্রলীগের সংখ্যাটা ১২৫ নয়, ২০-২৫ জন! বাকিটা ধান্দা!’—এটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান খান নাহিদের ফেসবুক স্ট্যাটাস। মেয়াদকালের শেষ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আবদুস সোবহানের নিয়োগ বাণিজ্য প্রসঙ্গে এভাবেই ক্ষোভ ঝেড়েছেন এই ছাত্রলীগ নেতা।
টানা দুই মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন শেষে গত বৃহস্পতিবার পুলিশ পাহারায় ক্যাম্পাস ছেড়ে যান অধ্যাপক ড. আবদুস সোবহান। তবে যাওয়ার আগের দিনই (বুধবার) অস্থায়ী ভিত্তিতে ১৪১ জনকে নিয়োগ দেন। যার মধ্যে ১২৫ জন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী রয়েছেন বলে গণমাধ্যমকে বলে যান তিনি।
তবে তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এক-তৃতীয়াংশ। ছাত্রলীগের একাংশের দাবি, বিদায় বেলায় ছাত্রলীগের মাথায় কাঠাল ভেঙ্গে গেছেন চতুর এই উপাচার্য। ছাত্রলীগের নাম বললেও মূলত বড় অংকের লেনদেনের মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্যই করে গেছেন তিনি।
নিয়োগ পেলেন যাঁরা: বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার মামুন-অর-রশিদ এডহক ভিত্তিতে ১৪১ জনের নিয়োগের কথা জানিয়েছেন গণমাধ্যমে। তবে তালিকায় দেখা গেছে, নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা ১৩৭ জন। এর মধ্যে শিক্ষক পদে নয়জন, সেকশন অফিসার (কর্মকর্তা) পদে ১৯ জন, উচ্চমান সহকারী (তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী) পদে ৮৫ জন এবং নিম্নমান সহকারী (চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী) পদে ২৪ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
নিয়োগ তালিকা যাচাই করে দেখা গেছে, সেখানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর সংখ্যা ৪৫ জনের কম। চাকরি পাওয়া উল্লেখযোগ্য ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে আছেন— রাবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাহফুজ আল আমিন, মো. রাসেল, বোরহান উদ্দিন, সরওয়ার হোসেন সানোয়ার, তৌহিদ মেরাশেদ, সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত, ফারুক হাসান, রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ইলিয়াস হোসেন, সাবেক ছাত্র বৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক টগর মো. সালেহ ছাত্রলীগ নেতা আতিকুর রহমান সুমন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রায়হান মাসুদ, তাজকিন পারভেজ সাতিল, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির রাবি শাখার সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান, শিবিরের হামলায় পা হারানো ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম প্রমুখ।
অ্যাডহকে নিয়োগ পাওয়াদের তালিকায় চারজন সাংবাদিকও আছেন। আছেন একজন সাংবাদিকের বোনও। নিয়োগ পাওয়া চার সাংবাদিক হলেন— দৈনিক ইত্তেফাকের রাজশাহীর স্টাফ রিপোর্টার মো. আনিসুজ্জামান, মোহনা টিভির ব্যুরো প্রধান মেহেদী হাসান, দৈনিক আমাদের সময়ের ব্যুরো প্রধান আমজাদ হোসেন শিমুল ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা উত্তরা প্রতিদিনের সাংবাদিক এনায়েত করিম। এদের মধ্যে আনিসুজ্জামান রাজশাহী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি। বর্তমানে তিনি রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের (আরইউজে) নির্বাহী সদস্য। মেহেদী হাসান শ্যামল রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আরটিজেএ) সভাপতি। এনায়েত করিম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (রাবিসাস) সভাপতি ছিলেন। আমজাদ হোসেন শিমুলও বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা করতেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সদস্য আনিসুজ্জামানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার করা হয়েছে। আর সাংবাদিক নেতা মেহেদী হাসান শ্যামলকে ঐতিহ্যবাহী বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া দৈনিক সমকাল ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ডিবিসির রাজশাহী ব্যুরো প্রধান সৌরভ হাবিবের ছোট বোন সোনিয়া তাসমিনও চাকরি পেয়েছেন সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে।
তালিকা পর্যালোচনায় দেখা যায়, সংগীত বিভাগে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ঋত্বিক মাহমুদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের খন্দকার ফরহাদ হোসেনের (অনিক মাহমুদ) ছেলে। ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে নিয়োগ পাওয়া ইন্দ্রানিল মিশ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. চিত্তরঞ্জন মিশ্র’র ছেলে। ক্রপ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক খাইরুল ইসলামের স্ত্রী ড. সাবিহা ইয়াসমিনকেও নিয়োগ দেয়া হয়েছে সেন্টার অব এক্সেলেন্স ইন টিচিং অ্যান্ড লার্নিংয়ের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে।
তাপসী রাবেয়া হলের আবাসিক শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ফারহানা একরাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক ও অধ্যাপক আব্দুল গণির স্ত্রী। একই হলের সহকারী আবাসিক শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন রিয়াজির স্ত্রী বুরুজ-ই জোবাইরা। অন্য যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন তাঁদের বিশেষ কোনো পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে না। এদের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নিম্নপদেও ছাত্রলীগ: নিম্ন পদেও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অনেককে চাকরি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ সাবেক ও বর্তমান নেতা–কর্মীরা। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নিয়োগ পাওয়া নেতারাও। নিয়োগ পেয়েও কেউ কেউ নিম্নমানের এই পদে যোগ দেননি। সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ পাওয়া ১৯ জনের মধ্যে ছাত্রলীগের মাত্র একজন রয়েছেন। নয়জন প্রভাষকের মধ্যে আছেন একজন। এ ছাড়া বাকি সবারই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সাদিকুল ইসলাম স্বপন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ করেন। তাকে নিম্নমান সহকারী পদে এডহকে নিয়োগ দেওয়ায় তিনি যোগদান করেননি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীদের সেকশন অফিসার হওয়ার যোগ্যতা থাকা স্বত্বেও উপাচার্য তাদের তৃতীয় শ্রেণির চাকরিতে নিয়োগ দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি ছাত্রলীগকে অপমান করেছেন। উপাচার্য তার স্বার্থ হাসিলের জন্য ছাত্রলীগকে ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
নিয়োগ পাওয়া রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘ছাত্রলীগের নাম ভাঙানো হয়েছে। এখানে সাধারণ লোকজনকে বেশি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীর নিয়োগ হয়নি।’ রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খালিদ হাসান বিপ্লব বলেন, ‘উপাচার্য শতাধিক ছাত্রলীগ নেতাকে চাকরি দেওয়ার যে দাবি করেছেন তা অসত্য। আমরা খোঁজ নিয়েছি সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে চল্লিশের কম নেতা–কর্মীর চাকরি হয়েছে।’ ছাত্রলীগের কথা বলে নন পলিটিক্যাল লোকজনকে চাকরি দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
এই নিয়োগ যেন না হয় তার জন্য ভিসির শেষ কর্মদিবসে ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। তখন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা তাঁদের ওপর চড়াও হয়েছিলেন। পুলিশের লাঠিচার্জ আর রাবি ছাত্রলীগের হামলায় মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে যেতেও বাধ্য হয়। নগর ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা বলছেন, ভিসি যে ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে বড় ব্যবসা করতে যাচ্ছেন, এটি তাঁরা আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। তাই নিয়োগ ভণ্ডুল করতে তাঁরা ক্যাম্পাসে যান। কিন্তু তাঁদের ওপর হামলা হয়।
শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে জানে না বিভাগ: অ্যাডহক তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আটটি বিভাগ ও একটি ইনস্টিটিউটে সর্বমোট নয়জন শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচটি বিভাগের সভাপতির সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার। তাঁরা জানান, বিভাগের অ্যাডহকে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে তাঁরা অবহিত নন। ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদা খাতুন বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে শুনেছি আমাদের বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে বিভাগের পক্ষ থেকে শিক্ষক চাওয়া হয়নি। এখন ক্যাম্পাস বন্ধ। আমাদের শিক্ষকও লাগছে না।’ একই সুরে কথা বললেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের সভাপতি দীনবন্ধু পাল।
নিয়োগ দিতে পদে পদে অনিয়ম
বিদায় বেলায় ভিসির দেয়া এই নিয়োগের পদে পদে অনিয়ম করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখলেও ভিসি সোবহান নিজের গায়ের জোরেই নিয়োগ দিয়ে গিয়েছেন। এই নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভাও হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারও নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করেননি। সূত্র জানায়, ভিসি সোবহান নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর দেয়ার জন্য রেজিস্ট্রার আবদুস সালামকে চাপ দেন। কিন্তু আবদুস সালাম তা এড়িয়ে যান। পরে একজন ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে দিয়ে নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেন ভিসি। পরদিনই তিনি ক্যাম্পাস ছাড়েন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মো. হাবীবুর রহমান বলেন, ‘এই নিয়োগের জন্য সিন্ডিকেটের অনুমোদন দরকার। কিন্তু সিন্ডিকেট সভা তো হয়নি। এই নিয়োগের বৈধতা পাওয়ার কথা না।’ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার মখলেসুর রহমান বলেন, ‘এডহকে নিয়োগ হয় ছয়মাসের জন্য। যাঁরা চাকরি পেয়েছেন তাঁরা ছয়মাস পর আবার আবেদন করবেন। বিশ্ববিদ্যালয় যদি মনে করে তাঁদের দরকার, তাহলে রাখবে। আর তা না হলে ওই ছয়মাস পরই চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।’
ভিসির এই নিয়োগ অনিয়ম করেই দেওয়া হয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয় বলেছে, গত ১০ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ে এক চিঠিতে প্রশাসনিক কারণ উল্লেখ করে রাবিতে সকল ধরনের নিয়োগ বন্ধে উপাচার্যকে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু রাবি উপাচার্য তাঁর শেষ কর্মদিবসে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে বিভিন্ন পদে অবৈধ ও বিধিবহির্ভূতভাবে জনবল নিয়োগ দিয়েছেন। বিদায়ী উপাচার্য কর্তৃক জনবল নিয়োগের বৈধতা পাওয়ার সুযোগ নেই বলে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সুপারিশসহ আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শামীমা বেগম এক চিঠিতে জানিয়েছেন, পরবর্তী উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা।
সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে গতকাল দুপুরে সদ্য বিদায়ী ভিসি আবদুস সোবহানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে দীর্ঘক্ষণ ব্যস্ত পাওয়া যায়। এক পর্যায়ে কল ঢুকলে সেটি কেটে দেয়া হয়। আবদুস সোবহান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসা ছেড়ে রাবি সংলগ্ন চৌদ্দপাই এলাকায় শিক্ষকদের বিশ্ববিদ্যালয় হাউজিং সোসাইটির (বিহাস) বাসায় উঠেছেন। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই বিহাসে প্রবেশের মূল ফটকে পুলিশের পাহারা বসানো হয়েছে। অপরিচিত কাউকে সেখানে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। শুক্রবার দুপুরেও সেখানে পুলিশের পাহারা ছিল।
এ বিষয়ে নিয়ে জানতে চাইলে নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএসএম সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘ওনার (ভিসি) একটু সমস্যা হতে পারে। তাই পুলিশ পাহারা দেওয়া হয়েছে। এটা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত থাকবে।’ ওসি জানান, বৃহস্পতিবার বিহাসের ফটকে অন্তত ১৫ জন পুলিশ রাখা হয়। শুক্রবার থেকে একজন উপ-পরিদর্শকের (এসআই) নেতৃত্বে চারজন কনস্টেবল থাকছেন।
অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান ফলিত রাবির পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। তিনি ২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি ২০১৭ সালে আবারও ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পান। দ্বিতীয় মেয়াদে ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালেই শিক্ষকতা থেকে অবসর নেন। নানা অনিয়মের কারণে বরাবরই আলোচিত তিনি। তবে গত বৃহস্পতিবার শেষ কর্মদিবসের আগের দিন তাঁর গণহারে চাকরি দিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে।
রাজশাহী: ‘দুঃখিত! রাবিতে নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্রলীগের সংখ্যাটা ১২৫ নয়, ২০-২৫ জন! বাকিটা ধান্দা!’—এটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান খান নাহিদের ফেসবুক স্ট্যাটাস। মেয়াদকালের শেষ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আবদুস সোবহানের নিয়োগ বাণিজ্য প্রসঙ্গে এভাবেই ক্ষোভ ঝেড়েছেন এই ছাত্রলীগ নেতা।
টানা দুই মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন শেষে গত বৃহস্পতিবার পুলিশ পাহারায় ক্যাম্পাস ছেড়ে যান অধ্যাপক ড. আবদুস সোবহান। তবে যাওয়ার আগের দিনই (বুধবার) অস্থায়ী ভিত্তিতে ১৪১ জনকে নিয়োগ দেন। যার মধ্যে ১২৫ জন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী রয়েছেন বলে গণমাধ্যমকে বলে যান তিনি।
তবে তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এক-তৃতীয়াংশ। ছাত্রলীগের একাংশের দাবি, বিদায় বেলায় ছাত্রলীগের মাথায় কাঠাল ভেঙ্গে গেছেন চতুর এই উপাচার্য। ছাত্রলীগের নাম বললেও মূলত বড় অংকের লেনদেনের মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্যই করে গেছেন তিনি।
নিয়োগ পেলেন যাঁরা: বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার মামুন-অর-রশিদ এডহক ভিত্তিতে ১৪১ জনের নিয়োগের কথা জানিয়েছেন গণমাধ্যমে। তবে তালিকায় দেখা গেছে, নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা ১৩৭ জন। এর মধ্যে শিক্ষক পদে নয়জন, সেকশন অফিসার (কর্মকর্তা) পদে ১৯ জন, উচ্চমান সহকারী (তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী) পদে ৮৫ জন এবং নিম্নমান সহকারী (চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী) পদে ২৪ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
নিয়োগ তালিকা যাচাই করে দেখা গেছে, সেখানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর সংখ্যা ৪৫ জনের কম। চাকরি পাওয়া উল্লেখযোগ্য ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে আছেন— রাবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাহফুজ আল আমিন, মো. রাসেল, বোরহান উদ্দিন, সরওয়ার হোসেন সানোয়ার, তৌহিদ মেরাশেদ, সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত, ফারুক হাসান, রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ইলিয়াস হোসেন, সাবেক ছাত্র বৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক টগর মো. সালেহ ছাত্রলীগ নেতা আতিকুর রহমান সুমন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রায়হান মাসুদ, তাজকিন পারভেজ সাতিল, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির রাবি শাখার সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান, শিবিরের হামলায় পা হারানো ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম প্রমুখ।
অ্যাডহকে নিয়োগ পাওয়াদের তালিকায় চারজন সাংবাদিকও আছেন। আছেন একজন সাংবাদিকের বোনও। নিয়োগ পাওয়া চার সাংবাদিক হলেন— দৈনিক ইত্তেফাকের রাজশাহীর স্টাফ রিপোর্টার মো. আনিসুজ্জামান, মোহনা টিভির ব্যুরো প্রধান মেহেদী হাসান, দৈনিক আমাদের সময়ের ব্যুরো প্রধান আমজাদ হোসেন শিমুল ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা উত্তরা প্রতিদিনের সাংবাদিক এনায়েত করিম। এদের মধ্যে আনিসুজ্জামান রাজশাহী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি। বর্তমানে তিনি রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের (আরইউজে) নির্বাহী সদস্য। মেহেদী হাসান শ্যামল রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আরটিজেএ) সভাপতি। এনায়েত করিম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (রাবিসাস) সভাপতি ছিলেন। আমজাদ হোসেন শিমুলও বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা করতেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সদস্য আনিসুজ্জামানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার করা হয়েছে। আর সাংবাদিক নেতা মেহেদী হাসান শ্যামলকে ঐতিহ্যবাহী বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া দৈনিক সমকাল ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ডিবিসির রাজশাহী ব্যুরো প্রধান সৌরভ হাবিবের ছোট বোন সোনিয়া তাসমিনও চাকরি পেয়েছেন সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে।
তালিকা পর্যালোচনায় দেখা যায়, সংগীত বিভাগে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ঋত্বিক মাহমুদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের খন্দকার ফরহাদ হোসেনের (অনিক মাহমুদ) ছেলে। ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে নিয়োগ পাওয়া ইন্দ্রানিল মিশ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. চিত্তরঞ্জন মিশ্র’র ছেলে। ক্রপ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক খাইরুল ইসলামের স্ত্রী ড. সাবিহা ইয়াসমিনকেও নিয়োগ দেয়া হয়েছে সেন্টার অব এক্সেলেন্স ইন টিচিং অ্যান্ড লার্নিংয়ের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে।
তাপসী রাবেয়া হলের আবাসিক শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ফারহানা একরাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক ও অধ্যাপক আব্দুল গণির স্ত্রী। একই হলের সহকারী আবাসিক শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন রিয়াজির স্ত্রী বুরুজ-ই জোবাইরা। অন্য যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন তাঁদের বিশেষ কোনো পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে না। এদের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নিম্নপদেও ছাত্রলীগ: নিম্ন পদেও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অনেককে চাকরি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ সাবেক ও বর্তমান নেতা–কর্মীরা। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নিয়োগ পাওয়া নেতারাও। নিয়োগ পেয়েও কেউ কেউ নিম্নমানের এই পদে যোগ দেননি। সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ পাওয়া ১৯ জনের মধ্যে ছাত্রলীগের মাত্র একজন রয়েছেন। নয়জন প্রভাষকের মধ্যে আছেন একজন। এ ছাড়া বাকি সবারই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সাদিকুল ইসলাম স্বপন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ করেন। তাকে নিম্নমান সহকারী পদে এডহকে নিয়োগ দেওয়ায় তিনি যোগদান করেননি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীদের সেকশন অফিসার হওয়ার যোগ্যতা থাকা স্বত্বেও উপাচার্য তাদের তৃতীয় শ্রেণির চাকরিতে নিয়োগ দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি ছাত্রলীগকে অপমান করেছেন। উপাচার্য তার স্বার্থ হাসিলের জন্য ছাত্রলীগকে ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
নিয়োগ পাওয়া রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘ছাত্রলীগের নাম ভাঙানো হয়েছে। এখানে সাধারণ লোকজনকে বেশি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীর নিয়োগ হয়নি।’ রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খালিদ হাসান বিপ্লব বলেন, ‘উপাচার্য শতাধিক ছাত্রলীগ নেতাকে চাকরি দেওয়ার যে দাবি করেছেন তা অসত্য। আমরা খোঁজ নিয়েছি সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে চল্লিশের কম নেতা–কর্মীর চাকরি হয়েছে।’ ছাত্রলীগের কথা বলে নন পলিটিক্যাল লোকজনকে চাকরি দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
এই নিয়োগ যেন না হয় তার জন্য ভিসির শেষ কর্মদিবসে ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। তখন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা তাঁদের ওপর চড়াও হয়েছিলেন। পুলিশের লাঠিচার্জ আর রাবি ছাত্রলীগের হামলায় মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে যেতেও বাধ্য হয়। নগর ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা বলছেন, ভিসি যে ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে বড় ব্যবসা করতে যাচ্ছেন, এটি তাঁরা আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। তাই নিয়োগ ভণ্ডুল করতে তাঁরা ক্যাম্পাসে যান। কিন্তু তাঁদের ওপর হামলা হয়।
শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে জানে না বিভাগ: অ্যাডহক তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আটটি বিভাগ ও একটি ইনস্টিটিউটে সর্বমোট নয়জন শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচটি বিভাগের সভাপতির সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার। তাঁরা জানান, বিভাগের অ্যাডহকে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে তাঁরা অবহিত নন। ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদা খাতুন বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে শুনেছি আমাদের বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে বিভাগের পক্ষ থেকে শিক্ষক চাওয়া হয়নি। এখন ক্যাম্পাস বন্ধ। আমাদের শিক্ষকও লাগছে না।’ একই সুরে কথা বললেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের সভাপতি দীনবন্ধু পাল।
নিয়োগ দিতে পদে পদে অনিয়ম
বিদায় বেলায় ভিসির দেয়া এই নিয়োগের পদে পদে অনিয়ম করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখলেও ভিসি সোবহান নিজের গায়ের জোরেই নিয়োগ দিয়ে গিয়েছেন। এই নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভাও হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারও নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করেননি। সূত্র জানায়, ভিসি সোবহান নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর দেয়ার জন্য রেজিস্ট্রার আবদুস সালামকে চাপ দেন। কিন্তু আবদুস সালাম তা এড়িয়ে যান। পরে একজন ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে দিয়ে নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেন ভিসি। পরদিনই তিনি ক্যাম্পাস ছাড়েন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মো. হাবীবুর রহমান বলেন, ‘এই নিয়োগের জন্য সিন্ডিকেটের অনুমোদন দরকার। কিন্তু সিন্ডিকেট সভা তো হয়নি। এই নিয়োগের বৈধতা পাওয়ার কথা না।’ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার মখলেসুর রহমান বলেন, ‘এডহকে নিয়োগ হয় ছয়মাসের জন্য। যাঁরা চাকরি পেয়েছেন তাঁরা ছয়মাস পর আবার আবেদন করবেন। বিশ্ববিদ্যালয় যদি মনে করে তাঁদের দরকার, তাহলে রাখবে। আর তা না হলে ওই ছয়মাস পরই চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।’
ভিসির এই নিয়োগ অনিয়ম করেই দেওয়া হয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয় বলেছে, গত ১০ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ে এক চিঠিতে প্রশাসনিক কারণ উল্লেখ করে রাবিতে সকল ধরনের নিয়োগ বন্ধে উপাচার্যকে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু রাবি উপাচার্য তাঁর শেষ কর্মদিবসে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে বিভিন্ন পদে অবৈধ ও বিধিবহির্ভূতভাবে জনবল নিয়োগ দিয়েছেন। বিদায়ী উপাচার্য কর্তৃক জনবল নিয়োগের বৈধতা পাওয়ার সুযোগ নেই বলে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সুপারিশসহ আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শামীমা বেগম এক চিঠিতে জানিয়েছেন, পরবর্তী উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা।
সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে গতকাল দুপুরে সদ্য বিদায়ী ভিসি আবদুস সোবহানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে দীর্ঘক্ষণ ব্যস্ত পাওয়া যায়। এক পর্যায়ে কল ঢুকলে সেটি কেটে দেয়া হয়। আবদুস সোবহান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসা ছেড়ে রাবি সংলগ্ন চৌদ্দপাই এলাকায় শিক্ষকদের বিশ্ববিদ্যালয় হাউজিং সোসাইটির (বিহাস) বাসায় উঠেছেন। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই বিহাসে প্রবেশের মূল ফটকে পুলিশের পাহারা বসানো হয়েছে। অপরিচিত কাউকে সেখানে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। শুক্রবার দুপুরেও সেখানে পুলিশের পাহারা ছিল।
এ বিষয়ে নিয়ে জানতে চাইলে নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএসএম সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘ওনার (ভিসি) একটু সমস্যা হতে পারে। তাই পুলিশ পাহারা দেওয়া হয়েছে। এটা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত থাকবে।’ ওসি জানান, বৃহস্পতিবার বিহাসের ফটকে অন্তত ১৫ জন পুলিশ রাখা হয়। শুক্রবার থেকে একজন উপ-পরিদর্শকের (এসআই) নেতৃত্বে চারজন কনস্টেবল থাকছেন।
অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান ফলিত রাবির পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। তিনি ২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি ২০১৭ সালে আবারও ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পান। দ্বিতীয় মেয়াদে ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালেই শিক্ষকতা থেকে অবসর নেন। নানা অনিয়মের কারণে বরাবরই আলোচিত তিনি। তবে গত বৃহস্পতিবার শেষ কর্মদিবসের আগের দিন তাঁর গণহারে চাকরি দিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে।
সারা দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৬৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ৯৭২ জন ও অন্যান্য ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬৯৩ জন। আজ সোমবার পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য জানান।
৮ দিন আগেরাজধানীর মিরপুরে ছিনতাইয়ের ঘটনায় ইমরান খান সাকিব ওরফে শাকিল (৩৫) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে মিরপুর মডেল থানা-পুলিশ। ডিএমপি জানায়, শাকিল পেশাদার ছিনতাইকারী। গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টা ১৫ মিনিটের দিকে গাজীপুরের পুবাইল থানার কুদাব পশ্চিমপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়...
১৮ এপ্রিল ২০২৫রাজধানীর খিলগাঁওয়ের তালতলায় ‘আপন কফি হাউসে’ তরুণীকে মারধরের ঘটনায় কফি হাউসের ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) আল আমিন ও কর্মচারী শুভ সূত্রধরকে এক দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাকিবুল হাসান এ আদেশ দেন।
১৫ এপ্রিল ২০২৫ক্যামেরার লেন্সে ধরা পড়ল অমানবিক দৃশ্য— মেয়েটিকে বেশ কিছুক্ষণ ধমকানো হলো। এরপর ঘাড় ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়। সে যেন মানুষ নয়, পথের ধুলো। এর মধ্যেই এক কর্মচারী হঠাৎ মোটা লাঠি নিয়ে আঘাত করে তাঁর ছোট্ট পায়ে। শিশুটি কাতরাতে কাতরাতে পাশের দুটি গাড়ির ফাঁকে আশ্রয় নেয়। কিন্তু নির্যাতন থামে না, সেই লাঠি আব
১৪ এপ্রিল ২০২৫