Ajker Patrika

বাজারে গ্যাস্ট্রিকের নকল ওষুধ, গ্রেপ্তার ২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২২, ১৬: ০৫
Thumbnail image

অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল, ভাজাপোড়া, ফাস্টফুড, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া এবং অধিকাংশ সময় খালি পেটে থাকাসহ নানা কারণে মানুষের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়ছে। উপায়ন্তর না পেয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে অনেককেই। কিন্তু তাতেও নিস্তার মিলছে না। অসাধু নকল ওষুধ প্রস্তুতকারী চক্রের বানানো ওষুধের পাল্লায় পড়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এমনই এক নকল ওষুধ প্রস্তুতকারী চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ। 

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার। চুয়াডাঙ্গা, চকবাজার ও ফকিরাপুলে অভিযান চালিয়ে চক্রের মূল হোতা গিয়াস উদ্দিন আহমেদ ও মো. আলী আক্কাস শেখ নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। 

চুয়াডাঙ্গার নকল ওষুধ তৈরির মূল কারখানা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে নকল ১০ লাখ ৩৪ হাজার ২৮০ পিস পেনটোনিক্স ২০ ট্যাবলেট, ১৮ হাজার পিস মোনাস ১০ ট্যাবলেট, নকল ট্যাবলেট তৈরির পূর্ণাঙ্গ ডায়াস ও ৩৪ কেজি ফয়েল পেপার। জব্দকৃত ওষুধের বাজারমূল্য প্রায় ১ কোটি টাকা বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। 

গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘গিয়াস উদ্দিন আহমেদ ওয়েস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস নামে আয়ুর্বেদী ব্যবসার আড়ালে বিভিন্ন নামীদামি কোম্পানির নকল ওষুধ তৈরি করতেন। এসব নকল ওষুধ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতেন।’ তিনি জানান, বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অক্ষরজ্ঞানহীন ও স্বল্প শিক্ষিত মানুষ মূলত এদের টার্গেট। 

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানে ওষুধে যে উপাদানগুলো থাকা প্রয়োজন, এসব নকল ওষুধে তা থাকে না জানিয়ে ডিবির প্রধান বলেন, ‘এসব ওষুধ সাধারণত আটা-ময়দা ও অন্যান্য নিম্নমানের ক্ষতিকারক উপাদান দিয়ে তৈরি করে থাকে। এর মূল উপাদানগুলোই এতে থাকে না। অত্যন্ত নিম্নমানের মেইজ স্টার্চ ব্যবহার করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে স্টেরয়েড ও ডাই ব্যবহার করা হয়। এসব কেমিক্যাল বেশি দিন সেবনের ফলে মানুষের কিডনি, লিভার, হৃদ্‌যন্ত্র ও শ্বাসনালিতে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।’ 

আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে হাফিজ আক্তার বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় একটি দোতলা বিল্ডিংয়ের নিচতলায় তাঁদের নকল ওষুধ তৈরির কারখানা। তাঁরা একমি, ইনসেপ্টাসহ বিভিন্ন ব্র‍্যান্ডের বহুল প্রচলিত বিভিন্ন ওষুধের নকল তৈরি করে বাজারে ছড়িয়ে দিতেন। তাঁদের সঙ্গে রনি, মাখন, রানা, শাওন, রফিকসহ আরও কয়েকজন পলাতক আছেন। তাঁরা কুরিয়ারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব নকল ওষুধ বাজারজাত করতেন। তাঁদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন তিনি। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে চকবাজার থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়েছে। 

এসব নকল ওষুধ ব্যবহারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান হাফিজ আক্তার। তিনি আরও বলেন, ‘যারা ওষুধ বিক্রি করে তাদের একটা নৈতিক দায়িত্ব আছে। যারা কিনছে, তাদেরও কেনার সময় আরও সতর্ক হয়ে ভালোভাবে দেখে ওষুধ কিনতে হবে। আমাদের কাজ অপরাধ দমন ও আসামিদের আইনের আওতায় আনা। বাজারে ভেজাল ওষুধ যাচাই করার জন্য বিভিন্ন সংস্থা আছে।’ 

পুলিশ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের চিকিৎসক শেখ সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘এসব নকল ওষুধে অনেক ক্ষতিকর উপাদান থাকে। এগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে গ্যাস্ট্রিকের চেয়ে আরও ভয়ংকর রোগ হতে পারে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত