Ajker Patrika

গার্মেন্টস পণ্য চুরির টাকায় বিলাসবহুল বাড়ি শাহেদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮: ১১
গার্মেন্টস পণ্য চুরির টাকায় বিলাসবহুল বাড়ি শাহেদের

প্রায় শতকোটি টাকা মূল্যের রপ্তানিযোগ্য গার্মেন্টস পণ্যসহ সংঘবদ্ধ চোর চক্রের মূল হোতা শাহেদ ওরফে সাঈদ ওরফে বদ্দাকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। 

শাহেদ চক্র দেড় যুগ ধরে গার্মেন্টস পণ্য চুরির ২ হাজার ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তাঁর চক্রে বাস-ট্রাকের চালক, হেলপার এবং গোডাউন মালিক জড়িত। 

র‍্যাব জানায়, গাজীপুরের কারখানা থেকে কাভার্ড ভ্যানে করে পোশাকের একটি চালান ব্রাজিলে রপ্তানির উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানো হয়। পরদিন ৮৯৮ কার্টন ভর্তি সোয়েটার চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। ক্রেতা-মনোনীত শিপিং প্রতিষ্ঠান ১ লাখ ২৫ হাজার ডলারের বেশি মূল্যের চালানটি গ্রহণ করে ব্রাজিলে পাঠায় এবং সেই মোতাবেক বন্দর থেকে চালান বহনকারী জাহাজটি রওনা দেওয়ার পরপরই ক্রেতা পুরো অর্থ পরিশোধ করে। তবে গত ৬ জানুয়ারি ব্রাজিলের ক্রেতার কাছ থেকে পাওয়া ভিডিও দেখে হতবাক হয়ে যান গার্মেন্টস মালিকপক্ষ। 

সেখানে দেখা যায়, কিছু কার্টন সম্পূর্ণ খালি এবং অনেকগুলো কার্টন থেকে কিছু পণ্য খোয়া গেছে। এই হারানো পণ্যের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা দিতে হয় মালিকপক্ষকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ ২ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের গাছা থানায় চুরির ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। 

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল শুক্রবার রাতে র‍্যাব-৪–এর পৃথক অভিযানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও মৌলভীবাজার, গোপালগঞ্জসহ দেশের গার্মেন্টস পণ্য চোর চক্রের মূল হোতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন চক্রের মূল হোতা শাহেদ ওরফে সাঈদ ওরফে বদ্দা (৫২), মো. ইমারত হোসেন সজল (৩৭), শাহজাহান ওরফে রাসেল ওরফে আরিফ (৩০) ও মো. হৃদয় (২৮)। এ সময় উদ্ধার করা হয় সেই চুরির পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত একটি কাভার্ড ভ্যান। 

আজ শনিবার দুপুরে কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। 

তিনি বলেন, শাহেদ ওরফে সাঈদ ওরফে বদ্দার ছত্রচ্ছায়ায় দেশের প্রায় অধিকাংশ গার্মেন্টস পণ্য চুরি হয়। ৪০-৫০ জনের এই চক্রে রয়েছে ড্রাইভার, হেলপার, গোডাউন মালিক, গোডাউন এলাকার আশ্রয়দাতা, দক্ষ কুলি সর্দারসহ একদল শ্রমিক। 

গত বছরের ২৯ অক্টোবর গাজীপুর থেকে গার্মেন্টস পণ্য কাভার্ড ভ্যানে লোড করে সন্ধ্যার সময় চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করে। গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ ড্রাইভার শাহজাহানের কাছে স্যাম্পল হিসেবে কিছু সোয়েটার দেয়। শাহজাহান স্যাম্পলের ছবি তুলে মূল হোতা শাহেদের কাছে পাঠান। শাহেদ তখন চুরির ঘটনা বাস্তবায়নকারী তাওহীদুল ওরফে কাওছার ওরফে বড় কাওছারের কাছে পাঠান। এরপর পণ্যের গুণগত মান ও বাজারমূল্য বিবেচনা করে চালানটি চুরির নির্দেশ দেন শাহেদ। ৩০-৩৫ শতাংশ পণ্য সরিয়ে আবার প্যাকেজিংয়ের পর বন্দরের পাঠিয়ে দেন তাঁরা। 

এই চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাওছার, নাজিম ও মাসুম ওরফে মাসুদকে রাজধানীর ডেমরা থেকে গত ২৪ ডিসেম্বর র‍্যাব-৪ অন্য একটি গার্মেন্টসের পণ্য চুরির ঘটনায় হাতেনাতে আটক করে। 

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, চট্টগ্রামে থাকাকালে ১৯৯৬ সালে দুটি ট্রাক কিনে ব্যবসা শুরু শাহেদের। ২০০৪ সালে ট্রাক দুটি বিক্রি করে চারটি কাভার্ড ভ্যান কিনে গার্মেন্টস পণ্য পরিবহন শুরু করেন। ২০১৮ সাল পর্যন্ত সশরীরে উপস্থিত থেকে চুরির কার্যক্রম চালিয়ে যান। 

শাহেদের ২০ কোটি টাকার বাড়ি, মাছের খামার
শাহেদ ২০১৮ সালের পর পর্দার আড়ালে থেকে চুরির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন। দেড় যুগের বেশি সময় ধরে এই অপরাধ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। মৌলভীবাজার শহরে শাহেদের ১৫-২০ কোটি টাকা মূল্যের একটি বাড়ি রয়েছে। মৌলভীবাজারের দুর্লভপুরে প্রায় ২০ একর জমির ওপর রয়েছে মাছের খামারসহ দুটি হাঁস-মুরগির বিশাল খামার। বর্তমানে তাঁর চারটি কাভার্ড ভ্যানসহ সহযোগীর আরও ১৫টি কাভার্ড ভ্যান রয়েছে। 

শাহেদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৭-১৮টি গার্মেন্টস পণ্য চুরির মামলা রয়েছে এবং যার অধিকাংশ মামলায় কারাভোগ করেছেন। বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে ছয়টি মামলা বিচারাধীন। 

র‍্যাব কর্মকর্তা খন্দকার মঈন জানান, সাহেদ অষ্টম শ্রেণি পাস। দুটি বিয়ে করেছেন। সন্তানদের বিদেশে পড়াশোনা করাচ্ছেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত