Ajker Patrika

জেপি নেতা সালাম খুন: তরুণীর সঙ্গে স্বামীর সম্পর্ক নিয়ে যা জানালেন স্ত্রী নিগার

রাসেল মাহমুদ, ঢাকা
জেপি নেতা সালাম খুন: তরুণীর সঙ্গে স্বামীর সম্পর্ক নিয়ে যা জানালেন স্ত্রী নিগার

জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ সম্পাদক সালাম বাহাদুর ওরফে আব্দুস সালাম মিয়া (৬০) খুনের ঘটনার আগে এক সপ্তাহ মানসিকভাবে অস্থির ছিলেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে কথা বলা যেত না বলে জানিয়েছেন আব্দুস সালাম মিয়ার স্ত্রী কোহিনুর নিগার। 

গত ১০ মে কোহিনুর নিগার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আব্দুস সালামের সঙ্গে কামরুন নাহার চাঁদনী নামে এক নারীর সম্পর্ক ছিল। সেই নারী সম্পর্ক নিয়ে তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এরপর তারাই তাঁকে হত্যা করেছে।’ 

তিনি বলেন, ‘হত্যার এক সপ্তাহ আগে বেশ উৎকণ্ঠায় ছিলেন সালাম। তাঁকে ব্ল্যাকমেল করা হয়। এ সময় তাঁর অস্থিরতা এতটা বেড়েছিল যে তাঁর সঙ্গে কথাই বলা যেত না। যখন জানতে পারি তাঁকে মেরে ফেলেছে, তখনই আমার সন্দেহ হয়, ওই নারী ছাড়া আর কেউ তাঁকে মারেনি।’ 

মেয়েটিকে চিনতেন কিনা জানতে চাইলে কোহিনুর বলেন, ‘ঘটনার প্রায় দেড় বছর আগে কামরুন নাহার চাঁদনী একবার আমার বাসায় এসেছিল। নালিশ নিয়েই এসেছিল। কিন্তু আমি শুনতে চাইনি। তখন বোঝা গেছে, তার সঙ্গে সালামের সম্পর্ক ছিল। সালাম এসব বিষয় আমার সঙ্গে বলত না। আমি তাঁর ফোনও ধরতাম না। তবে ফোনে যখন কথা বলত তখন বুঝতে পারতাম।’ 

গত বছরের ১৫ জুলাই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে জাতীয় পার্টির (জেপি) নেতা সালাম বাহাদুর ওরফে আব্দুস সালাম মিয়ার (৬০) মরদেহ পাওয়া যায়। পরদিন রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের ছোট ভাই আব্দুল করিম খলিফা। এরপর তদন্তে নামে পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, সালাম বাহাদুরের কবজি ভাঙা ছিল। তাঁর পায়ে ও হাতে জখম ছিল। নির্যাতনেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। 

সালাম বাহাদুরকে হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে কামরুন নাহার চাঁদনী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তদন্ত কর্মকর্তা বলছেন, ঘটনায় জড়িত আসামি কামরুন নাহার চাঁদনী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, সালাম বাহাদুরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল। বিভিন্ন সময় তাঁকে বিরক্ত করতেন সালাম। ব্ল্যাকমেল করা শুরু করেছিলেন। পরে পরিকল্পনা করে বাড়িতে ডেকে নেন চাঁদনী। পরে তাঁকে এলাকার লোকজন নির্যাতন করে। 

তদন্ত কর্মকর্তা জানান, বয়সের কারণে শারীরিকভাবেও সালাম বাহাদুর দুর্বল ছিলেন। সালামের হাতের কবজি ভাঙা অবস্থায় পাওয়া গেছে। তাঁর পায়ে ও হাতে জখম ছিল। নির্যাতনের পর স্থানীয় এক পল্লি চিকিৎসককে ডেকে আনা হয়। এরপর সেখান থেকে সালামকে স্থানীয় এক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসকেরা ঢাকায় আনার পরামর্শ দেন। তবে ঢাকায় আনার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁরা সালামের লাশ গাড়িতে করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ফেলে পালিয়ে যান। 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কামরুন নাহার চাঁদনীর দুই ভাই। ৫–৬ বছর আগে তাঁরা মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার গাজীন্দায় জমি কিনে বাড়ি করেন। এলাকায় বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে তাঁদের চলাফেরা ছিল। 

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের ধল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম ভূইয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, চাঁদনীর বাসায় আসামি নয়নের যাতায়াত ছিল। তাঁর সঙ্গে নয়নের সম্পর্কের কথা শোনা যায়। পরিকল্পনা করেই সালাম বাহাদুরকে বাড়িতে ডেকে এনে নির্যাতন করা হয়। 

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৫ জুলাই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে রাস্তার ওপর পাওয়া যায় আব্দুস সালাম মিয়ার লাশ। লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তাঁকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে খুন করে হাসপাতালের সামনে রাখা হয়। সালাম বাহাদুরের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের ইন্দুরকানিতে। 

আদালত সূত্র জানায়, ঘটনার তিন দিন পরই কামরুন নাহার চাঁদনী ও তাঁর মা মোসা. মমতাজ বেগমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রায় তিন মাস পর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান তাঁরা। গত বছরের ২ আগস্ট মো. মোসলেম উদ্দিনকে এবং পরদিন মো. সাইদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ২৭ সেপ্টেম্বর মো. মোসলেম উদ্দিনকে ও ১৮ অক্টোবর মো. সাইদুল ইসলাম জজ কোর্ট থেকে জামিন পান। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি এই মামলায় আকাশ আহম্মেদ নয়ন ও মো. রুবেল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁরাও উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছে। ফলে এই মামলায় এখন আর কেউ গ্রেপ্তার নেই। আগামী ৩০ মে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত। এই নিয়ে নয়বার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। 

এদিকে ঘটনার ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে না পারার কারণ জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (নিরস্ত্র) আকতারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, তদন্তকাজ চলছে। কাজ শেষ হলেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। 

তবে মামলার বাদী আব্দুস সালামের ছোট ভাই আব্দুল করিম খলিফা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন পছন্দ না হলে বিকল্প পথ দেখব।’ 

মামলার তদন্তের বিষয়ে আব্দুস সালামের স্ত্রী কোহিনুর নিগার আজকের পত্রিকাকে বলেন, মামলার তদন্তের তেমন কিছুই জানি না। তদন্তের বিষয়ে পুলিশ তেমন কিছু বলেনি, আমাকে ডাকেও না। পুলিশের গাফিলতি রয়েছে। নয়তো তদন্ত শেষ হতো, তারাও ছাড়া পেত না। কার ওপর আস্থা রাখব! টাকা ছাড়া কিছু চলে না। আসামিরা টাকা দিয়ে বের হয়ে আসবে তা জানি। আমরা চাই একটি সুষ্ঠু বিচার হোক। 

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. আব্দুল্লাহ আবু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হত্যার ঘটনাটি দুই জায়গায় হওয়ায় হয়তো সময় লাগছে। যে কোনো মামলার তদন্তই যথাযথভাবে শেষ করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হয়। তদন্ত প্রতিবেদন যত দ্রুত দেওয়া যায় বিচারকার্যটাও তত দ্রুত শুরু করা যায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত