উপসম্পাদকীয়

চারদিকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। বাদশার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন তাঁর আপন ভাইপো। অভিবাদন জানাতে কাছাকাছি হতেই বাদশাকে লক্ষ্য করে ছুড়ে দিলেন অগ্নিতপ্ত বুলেট। রক্তাক্ত দেহে লুটিয়ে পড়লেন, নিহত হলেন সৌদি আরবের বাদশা ফয়সাল। সৌদি রাজ প্রসাদের সেই বিষণ্ন দিনটি ছিল ২৫ মার্চ ১৯৭৫। বাদশা ফয়সালের মতো একই প্রতিপক্ষের

আত্মহত্যা। সকল মৃত্যুই বেদনা জাগানিয়া হলেও কেউ আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে—এমনটা দেখলে বা শুনলে নিজের অজান্তেই জীবনপাত্রে কেমন যেন এক ভাটার টান পড়ে সকলেরই। আবার আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া সেই ব্যক্তি যদি বিখ্যাত কেউ হন, তবে সেই অপঘাতের ময়নাতদন্ত চলতেই থাকে মুখে মুখে, মনে মনে অথবা কাগজে-কলমে। 

খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দেশে ক্যানসার-আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১৫ লাখ। প্রতি বছর গড়ে অন্তত দেড় লাখ রোগী মারা যাচ্ছেন এই ব্যাধিতে। গেল দুই বছরে আমরা করোনা মহামারির সঙ্গে নিজেদের সবটুকু দিয়ে লড়ে যাচ্ছি। করোনা মোকাবিলায় কত শ পদক্ষেপ নিচ্ছি আমরা। কিন্তু যদি সংখ্যার হিসাবটা কষি, তবে ক্যানসারের মৃ

আমরা এখন আছি সুখবাদী এক ব্যবস্থায়, যেখানে জিডিপি বাড়লে স্তুতির নহর বয়ে যায়। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হলেও শোনা লাগে, ‘এ আর এমন কী!’ সুখী হওয়া এখানে ‘লাইনে’ আসার মতো। ভাতের কষ্ট এখানে অচ্ছুতের হট্টগোল।

তিনি যখন তাদের কাছে গেলেন, কেমন যেন অপার্থিব এক দৃশ্যের অবতারণা হলো! ওরা যেন মুখিয়ে ছিল কেউ একজন এসে তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে কিছু একটা বলুক, একটু মায়ার স্পর্শ দিক। মা-বাবার মতো আদরমাখা চাহনি দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলুক, ‘মারে, আর কষ্ট দিস না নিজেকে।

এ দেশে পদ সব সময়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কাজের বিকেন্দ্রীকরণ যেহেতু শুধু মুখে আছে, কাজে নেই—ফলে পদ হয়ে উঠেছে সব ক্ষমতার মূল। ঘাস কাটতেও তাই পদে থাকা ব্যক্তির অনুমোদন লাগে। তাতেই কি পদের প্রতি মোহ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে?

আইনস্টাইন যখন বিশেষ অপেক্ষবাদ প্রস্তাব করেন, তখন হ্যানস ইজরায়েল, এরিখ রুখেবার ও রুডলফ ওয়াইনম্যানের নেতৃত্বে ১০০ বিজ্ঞানী একটি বই লিখেছিলেন—কেন আইনস্টাইন ভুল! আইনস্টাইন বলেছিলেন, তিনি যদি ভুলই হয়ে থাকেন, তাহলে ১০০ জন কেন লাগবে, এক জনই তো যথেষ্ট হওয়ার কথা।

এখন রাত দুইটা বাজে। একটু আগে টেলিফোন বেজে উঠেছে। গভীর রাতে টেলিফোন বেজে উঠলে বুকটা ধক করে উঠে, তাই টেলিফোনটা ধরেছি। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র ফোন করেছে। পত্রপত্রিকার খবর থেকে জানি, সেখানে ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলন করছে।

এ দেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সৃষ্টি ও তাতে শরিক হওয়ার ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। সেই ইতিহাস আদতে বাংলাদেশের জন্মের চেয়েও পুরনো। ইতিহাসবিদেরা প্রায়ই বলে থাকেন, ছাত্র আন্দোলনের কারণেই এ দেশের স্বাধীকার সংগ্রাম গতি পেয়েছিল। আর এমন ঐতিহ্য থাকা এক দেশেই এখন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী পেটানোর ছবি সংবাদমাধ্যমের পাতায় বড়

ডিম হোক বা ডিমের কুসুম—তা ভাগাভাগি নিয়ে পরিবারে ছোটদের মধ্যে মন-কষাকষি হয়নি এমন পরিবার মনে হয় এই বাংলাদেশে কমই আছে। আজকের দিনে ডিম ভাগাভাগির তুচ্ছ গল্প কিশোরদের কাছে বড়ই বেমানান, কিছুটা সেকেলেও। ডিম এখন বাজারের সহজলভ্য ও সস্তা পণ্য। ফুটপাত থেকে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর—সর্বত্র ডিমের ছড়াছড়ি। গেরস্তের ঘরে

ভেবে দেখার সময় এসেছে যে, নারী নির্যাতনের সাফাই গাওয়া আমাদের অস্বস্তিকর সামাজিক প্রবণতা জাতীয় জীবনেও প্রবেশ করছে কি না। যদি তা-ই হয়, তবে হয়তো সামনের বছরের শেষেও সহস্রাধিক ধর্ষণের পরিসংখ্যান নিয়ে সালতামামি লিখে যেতে হবে। সংখ্যা তখন ধর্ষণের পরিমাণ জানাবে ঠিকই, কিন্তু আপনাকে-আমাকে আর বদলাতে পারবে না; বর

সরকারি চাকরিজীবীদের সিংহভাগই নাকি সম্পদের হিসাব জমা দিচ্ছেন না। অথচ সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য পাঁচ বছর পরপর সম্পদের হিসাব দেওয়ার নিয়ম করা হয়েছে ৪২ বছর আগে। কিন্তু কেউ সেই নিয়ম মানেন না। 

দেশে একসময় শুধু ‘জি’ ছিল। এরপর জি-র সংখ্যা ক্রমে বেড়েছে। টু থেকে থ্রি, থ্রি থেকে ফোর। এবার এল ফাইভ। কিন্তু সংখ্যার ক্রম বাড়লেও আমাদের মোবাইলে ইন্টারনেটের গতি কি বাড়ল? নাকি আক্ষরিক উন্নয়নের বদলে শুধু সংখ্যার মিনার বানানোতেই আনন্দ? 

বাংলাদেশের বয়স এখন ৫০। চলতি বছর বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি আমরা। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি হানাদাররা আত্মসমর্পণ করে।

জাতিসংঘ কর্তৃক যে ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা গৃহীত হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য লক্ষ্য হচ্ছে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রদান করা। প্রতিবছর ১২ ডিসেম্বর জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সবার জন্য সমান ও টেকসই স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য

দোষী একজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও দোষ চিহ্নিত করা হয়নি। তবে মন্ত্রী মশাই যে ‘উল্টো–পাল্টা’ করেছেন, তা মোটামুটি নিশ্চিত। নইলে কি আর এ দেশে কাউকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ আসে? কিন্তু তাতেই কি সব মুরোদওয়ালা সোজা হয়ে যাবে? 

আজ কিছুক্ষণ আগে নিম্ন আদালতে আবরার হত্যা মামলার রায় হলো। গত রাতে ঘুম হয়নি ঠিকঠাক। ভোর থেকে অনিশ্চয়তার দোলাচল মনে নিয়েই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম। হত্যা তো কতই হচ্ছে, হিসাব রাখা কঠিন।