Ajker Patrika

করেরহাটে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও পাহাড় কেটে চলছে অবৈধ বসতি স্থাপন

প্রতিনিধি, রামগড় (খাগড়াছড়ি)
আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২১, ১৭: ২৪
করেরহাটে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও পাহাড় কেটে চলছে অবৈধ বসতি স্থাপন

খাগড়াছড়ির লাগোয়া করেরহাট রেঞ্জের প্রায় ২৮ হাজার একর সংরক্ষিত বনাঞ্চল বেদখল হয়ে যাচ্ছে। সংরক্ষিত বাগানের প্রাচীন এই শাল, সেগুন, গামারী, গর্জন, মেহগনি বাগানে এক সময় দিনের বেলায় ও প্রবেশ দুঃসাধ্য ছিল। গাছের সবুজ পাতার ছাউনিতে দিনের বেলায় বনে আলো-আঁধারির সৃষ্টি হতো। কালক্রমে এর পরিবর্তন ঘটছে। সংরক্ষিত বনাঞ্চল যেমন বৃক্ষশূণ্য হয়ে ন্যাড়া পাহাড়ে পরিণত হচ্ছে, অপরদিকে সংরক্ষিত বনভূমিও দিন দিন অবৈধ দখলদারদের অধীনে চলে যাচ্ছে। ভুক্তভোগী গ্রামবাসীর অভিযোগ স্থানীয় দখলদার এবং প্রভাবশালীরা বন বিভাগের লোকজনের যোগসাজশে "সেভেন স্টার" নামের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ খুলে এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।  

জানা যায়, রামগড়-বারৈয়ারহাট মহাসড়ক লাগোয়া করেরহাট বন বিভাগের আওতাধীন আঁধারমানিক, হেয়াকো, কয়লা বিট এলাকা সমূহতে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে নির্বিচারে পাহাড় এবং গাছ কেটে নির্মিত হচ্ছে অবৈধ বসতি। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় বিট সমূহের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী এই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। অবৈধ বসতি নির্মাণকারীদের কাছ থেকে ঘর প্রতি মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে বৃক্ষ নিধন, পাহাড় কাটা ও বসতি নির্মাণের সুযোগ করে দিচ্ছেন। 

সরেজমিনে আধারমানিক, কয়লা ও হেয়াকো বিট এলাকা ঘুরে এবং স্থানীয় কয়েক জন লোকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আঁধার মানিক বনবিট প্রায় চার হাজার ৬৩৬ একর হলেও বর্তমানে সিকিভাগও নেই বন বিভাগের দখলে। অবাধে চলছে বনাঞ্চল ধ্বংস ও জায়গা দখল। পাশাপাশি নানা প্রজাতির গাছ কেটে বিক্রি করে রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছে একশ্রেণির দালালচক্র। 

আঁধার মানিক রুসুলপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায় পাহাড় কাটার ফলে বৈদ্যুতিক পিলার ধসে পড়েছে। যে কোন মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আঁধার মানিক বনবিটের মতো একইভাবে কয়লা, হেয়াকো বনবিটগুলো ও দখলদারদের হাতে চলে যাচ্ছে। বন দখল করে এসব এলাকা সমূহতে হাজারো বসতি গড়ে উঠছে। 

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক স্থানীয় বেশ কয়েকজন লোক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভূমিদস্যু চক্রের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে বন বিভাগের লোকজনের নির্লিপ্ততার কারণে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে একের পর এক নির্মিত হচ্ছে অবৈধ বসতি। ফলে দিন দিন অবৈধ দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বনভূমি। স্থানীয় দখলদার এবং প্রভাবশালীরা বন বিভাগের লোকজনের যোগসাজশে "সেভেন স্টার" নামের একটি গ্রুপ খুলে এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট গাছ ও বনভূমি উজাড় হওয়ার কারণে বন্য প্রাণী হুমকির মুখে পড়েছে। হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হেয়াকো এবং আঁধারমানিক বিট কর্মকর্তা নাইমুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে জানান, সংশ্লিষ্ট স্থানীয় দখলদাররা রাজনৈতিক ভাবে অত্যন্ত প্রভাবশালী। তারপরেও বন রক্ষা এবং দখলমুক্ত করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি। 

বৈদ্যুতিক পিলারের গোড়ায় নেই মাটি। পাহাড় কাটার ফলে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে এসব বৈদ্যুতিক পিলারকরেরহাট রেঞ্জ কর্মকর্তা জসিম উদ্দীন এলাহীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানান, গতকাল সোমবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আধারমানিক বিট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে নতুন করে অবৈধ বসতি স্থাপনের সময় নির্মাণ সামগ্রী জব্দ করা হয়েছে। পুরোনো যারা বসতি স্থাপন করেছেন তাঁদের উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযান চালু করার জন্য লিখিতভাবে আবেদন করা হয়েছে। 

চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ করেরহাটের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) জামিল মোহাম্মদ চান আজকের পত্রিকাকে বলেন, গাছ কেটে অবৈধ বসতি স্থাপন এবং পাহাড় কাটার সত্যতা তিনি পেয়েছেন। সংরক্ষিত বন উজাড় করার কোন নিয়ম নেই। এসব প্রতিহত করতে অভিযান পরিচালনা করা হবে। পাহাড় কাটা ও অবৈধ বসতি নির্মাণে বন বিভাগের কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত