Ajker Patrika

সাজাপ্রাপ্ত ৮ খুনির হদিস নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২২, ০৮: ৪৪
Thumbnail image

সাতচল্লিশ বছর আগে, ১৯৭৫ সাল। দিনটি ছিল ৩ নভেম্বর। সেদিন মধ্যরাতে বেআইনিভাবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করে খুনিদের একটি দল। কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে তারা নৃশংসভাবে হত্যা করে জাতীয় চার নেতা–সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে। তদানীন্তন শাসকগোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ ছত্রছায়ায় এই নৃশংস খুন হয়েছিল। আজ কলঙ্কের সেই দিন।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে সেই হত্যাকাণ্ডের বিচারের চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে, ২০১৩ সালে।

তিনজনের হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় আটজনকে। কিন্তু সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনের মধ্যে ১০ জন এখনো পলাতক। এই মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ২০২০ সালে তার ফাঁসি কার্যকর হয়।

পলাতকদের মধ্যে মোসলেহ উদ্দীন, দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার আবুল হাসেম মৃধা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত। আর খন্দকার আবদুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী, আহমেদ শরিফুল হোসেন, কিসমত হাশেম ও নাজমুল হোসেন আনসারের হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তাঁদের মধ্যে ছয়জন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায়ও দণ্ডিত ছিলেন।

আসামির মধ্যে কেবল যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কর্নেল (অব.) এমবি নূর চৌধুরী কানাডায় এবং লে. কর্নেল (অব.) এএম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে আছেন বলে জানা গেছে। বাকি আট আসামির কে কোথায় আছেন সে বিষয়ে কোনো তথ্য নেই সরকারের কাছে।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও জেলহত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সব ব্যক্তির সন্ধানে সক্রিয় আছে বাংলাদেশের সব দূতাবাস ও মিশনসমূহ। 
নূর চৌধুরী ও রাশেদ চৌধুরীকে ফেরাতে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তদবির করে চলেছে সরকার ২০০৯ সাল থেকে।

সর্বশেষ, নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর জন্য বিকল্প পথ খুঁজতে কানাডাকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। মঙ্গলবার সচিবালয়ে কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মন্ত্রী তাঁকে এই অনুরোধ জানান।

জেল হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন কারা উপমহাপরিদর্শক কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করলেও তার বিচার বন্ধ ছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে হত্যাকাণ্ডের মামলাটি সচল করে ১৯৯৮ সালে। ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর বিচারিক আদালত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর হাইকোর্টে গেলে ২০০৮ সালে তিন আসামির মধ্যে একজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। খালাস পান যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বশেষ আপিল বিভাগের রায়ে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড ও আটজনের যাবজ্জীবন সাজা হয়।

এদিকে জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন সংগঠন। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের সর্বত্র দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো পতাকা উত্তোলন।

সকাল ৭টায় ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ।

সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে বনানী কবরস্থানে জাতীয় চার নেতার কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

একইভাবে রাজশাহীতে জাতীয় নেতা কামারুজ্জামানের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

এ ছাড়া জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত