Ajker Patrika

সড়ক দখল করে পার্ক

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২২, ০৯: ১৮
Thumbnail image

বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের বাই লেন দখল করে পার্ক নির্মাণ করেছে সিটি করপোরেশন (বিসিসি)। ইতিমধ্যে সড়ক বিভাজক ভেঙে কাজ চালানো হচ্ছে। সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ৭ জানুয়ারি তাঁর মায়ের নামে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহান আরা বেগম’ পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। সড়ক ও জনপথ বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাতীয় মহাসড়ক দখল করে পার্ক নির্মাণের বিষয়ে সওজের অনুমতি নেয়নি বিসিসি। তাঁদের মতে, জাতীয় এ মহাসড়কের ওপর নির্মাণ হতে যাওয়া এ পার্ক ঝুঁকিপূর্ণ। এতে বাধাগ্রস্ত হবে মহাসড়কটি ফোর লেনে উন্নীত প্রক্রিয়া। এদিকে নির্মাণাধীন পার্কের কারণে স্থানীয় অর্ধশত পরিবারের যাতায়াত বন্ধের উপক্রম হলেও ভয়ে মুখ খুলছেন না তাঁরা।

সরেজমিন দেখা গেছে, নগরী-সংলগ্ন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের লেকের উত্তর পাড় থেকে কাজীপাড়া সড়কের মুখ পর্যন্ত মহাসড়কের বাই লেনের প্রায় দেড় শ গজ দখল করে শিশুপার্ক নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন শ্রমিকেরা। ৭ জানুয়ারি থেকে মূল মহাসড়ক ও বাই লেনের মাঝে স্থাপিত ডিভাইডার ভেঙে ফেলেছে সিটি করপোরেশন।

বরিশাল সওজ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে পার্কের স্থানের দূরত্ব মাত্র দেড় কিলোমিটার। সওজের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা মহাসড়কের ওপর অনুমতিহীন এ পার্ক নির্মাণের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। এদিকে বিসিসি দাবি করছে, সওজের অনুমতি নিয়েই পার্ক হচ্ছে।

জাতীয় মহাসড়ক দখল করে এভাবে ঝুঁকিপূর্ণ পার্ক নির্মাণ শুরু হলেও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না সওজের বরিশালের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু হেনা মো. তারেক ইকবাল এবং নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন। বার বার চেষ্টা করেও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশল রফিকুল ইসলাম বলেন, সওজের রাস্তায় পার্ক করার কোনো অনুমতি দেননি তাঁরা। তিনি নির্বাহী প্রকৌশলীকে বিষয়টি অবহিত করেছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখেছেন যে এলাকাবাসী এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ।

বরিশাল মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগের তথ্যমতে, নগরীর ব্যস্ততম নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে সিঅ্যান্ডবি সড়ক হয়ে রূপাতলী বাস টার্মিনাল পর্যন্ত মহাসড়কের অংশটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। বিএমপির ট্রাফিক পরিদর্শক বিদ্যুৎ চন্দ্র দে বলেন, দুর্ঘটনা এড়াতে তাঁরা চলাচলের অনুপযোগী বাই লেন দিয়েই যাতায়াতে বাধ্য করতেন থ্রি হুইলার চালকদের। কিন্তু পার্ক নির্মাণের জন্য কাজীপাড়ার মুখ থেকে ডিভাইডার ভেঙেছেন শ্রমিকেরা। তিনি বলেন, মহাসড়কের ওপর পার্ক নির্মাণের মতো ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়টি ট্রাফিক বিভাগকে অবহিত করেনি বিসিসি।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল হায়াত এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল বাশারের কাছে মহাসড়কের ওপর পার্ক করার বৈধতা জানতে চাইলে তিনিও মন্তব্য করেননি। তবে বিসিসির স্থাপত্য প্রকৌশলী হাসিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বাধিক বিবেচনায় নিয়ে পার্কের নকশা করা হয়েছে।’

সড়ক ও জনপথ বিভাগের জরিপকারী মো. আরিফুর রহমান বলেন, ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের বরিশাল নগর অংশে সওজের অধিগ্রহণ করা ১২০ থেকে ১৫০ ফুট জমি আছে। এর মধ্যে পার্ক করার সুযোগ নেই। দাপ্তরিকভাবে তাদের কাছে এ-সংক্রান্ত নির্দেশও আসেনি। সড়ক ও জনপথ বিভাগের ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট আব্দুল রাজ্জাক জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসডি এবং এসওকে অবহিত করেছেন। তাঁরা কিছুই এ বিষয়ে জানেন না। যে স্থানে পার্ক করা হচ্ছে, সেটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের মহাসড়ক। সিটি করপোরেশন অনুমতি না নিয়ে কীভাবে মহাসড়কে পার্ক করে?

স্থানীয় ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিছুর রহমান দুলাল বলেন, পার্ক করার বিষয়ে বিসিসি কর্তৃপক্ষ তাঁর সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি।

সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দা মো. মনোয়ার হোসেন হাওলাদার অভিযোগ করেন, মহাসড়ক লাগোয়া দেড় শতাংশ জমি নিয়ে বিসিসির সঙ্গে তাঁর আদালতে মামলা চলমান। জমির ওপর নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। ওই বিরোধীয় জমিও পার্কের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। অপর বাসিন্দা কৃষি কর্মকর্তা আবুল বাশার বলেন, তাঁদের আবাসিক এলাকায় ১০টির বেশি বহুতল ভবন আছে। অর্ধশতাধিক পরিবার বাস করে। বাড়ি থেকে তাঁদের দু-তিন মিনিটে সিঅ্যান্ডবি রোডে পৌঁছার প্রধান সড়কটি আটকে দিয়ে পার্ক করা হচ্ছে। প্রতিকার না পেয়ে সহ্য করে যাচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক হোসেন বলেন, শিশুপার্ক নির্মাণে বিসিসি সওজের সঙ্গে আলোচনা করেছে। তারা দেখে গেছে, সেখানে শিশুপার্ক করলে নিরাপত্তার বিষয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হবে না।

তবে সওজ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ফিরোজ আলম খান জানান, তিনি মহাসড়কের ডিভাইডার ভাঙচুর করতে দেখেছেন। শুনেছেন সিটি করপোরেশন সেখানে পার্ক করবে। সওজকে বিষয়টি জানানো হয়নি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলে লিখিতভাবে জানানো হবে। মহাসড়কের পাশে যেকোনো স্থাপনা করতে হলে সীমানা থেকে ৫ ফুট দূরে যেতে হবে। পার্কটি করা হচ্ছে মহাসড়কের ওপর।

এ ব্যাপারে জানতে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু বলেন, তিনি বিষয়টি জানেন না। এই প্রথম শুনেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত