Ajker Patrika

কবরীও কেঁদেছিলেন তাঁর মৃত্যুতে

কামরুল হাসান
আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭: ১৭
কবরীও কেঁদেছিলেন তাঁর মৃত্যুতে

সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ সিনেমায় জরিনার চরিত্রের জন্য মায়াবী মুখের একজন অভিনেত্রী চাই। সেই অডিশন দিতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এলেন মিনা পাল। সিনেমার স্ক্রিপ্ট লিখেছেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। মেয়েটিকে দেখেই নাম বদলে রাখলেন ‘কবরী’, সেটা ১৯৬৪ সালে। এরপর পাহাড়সম জনপ্রিয়তা নিয়ে পাখির মতো উড়তে থাকেন কবরী। এই মিষ্টি মেয়ে ১৯৭৮ সালে এক পীরের আস্তানায় গিয়ে ধর্মান্তরিত হন, সেখানেই বিয়ে করেন নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের চাচা, ব্যবসায়ী সফিউদ্দীন সারওয়ার বাবুকে। পীরের নাম মজিবর রহমান চিশতি।

সেই পীর যেদিন খুন হলেন, সেদিন সকাল থেকে দুপুর অবধি আমি কবরী সারওয়ারকে মোহাম্মদপুরে পীরের আস্তানায় বসে কাঁদতে দেখেছি। তবে কবরী সারওয়ারের সঙ্গে পীরের এত সুসম্পর্ক বাইরের লোকেরা খুব কমই জানতেন। মজিবর রহমান চিশতি সম্পর্কে প্রচলিত ছিল, তিনি পাকিস্তানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর পীর।

সাংবাদিকতা জীবনের শুরুতে চলনে-বলনে মহাক্ষমতাধর এই পীর নিয়ে অনেক সত্য-মিথ্যা শুনেছি। এমন পীর দেখে নিজের চোখ জুড়ানোর ইচ্ছেও বার কয়েক উঁকি দিয়েছে মনে। কিন্তু যাব-যাচ্ছি করে শেষমেশ আর যাওয়া হয়নি। যেদিন গেলাম, সেদিন গিয়ে দেখি, দোতলায় বাথরুমের মেঝেতে তাঁর জবাই করা লাশ উপুড় হয়ে পড়ে আছে।

পুলিশের ঢাকা নগর বিশেষ শাখার (সিটিএসবি) এসএস ছিলেন মো. ইমামুল হোসেন। আমরা ডাকতাম ফিরোজ ভাই বলে। চাকরি থেকে অবসর নিয়ে অনেক দিন হাইকোর্টে ওকালতিও করেছিলেন। সেই ফিরোজ ভাই ২০০০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে ফোন করে ঘুম ভাঙালেন পীর খুনের খবর দিয়ে। তড়িঘড়ি তৈরি হয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখি, উত্তর বিভাগের ডিসি মোস্তাক আহমেদ দলবল নিয়ে আগেই হাজির। সিআইডির একটি দল এসেছে। তারা ঘুরে ঘুরে ‘অপরাধের চিহ্ন’ খুঁজছে।

মোহাম্মদপুরে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পেছনে এখন যেখানে মা ও শিশু হাসপাতাল, তার ঠিক উত্তর দিকের দেয়াল ঘেঁষে যে সড়ক চলে গেছে, তারই নাম শের শাহ সুরি রোড। এই সড়ক ধরে একটু এগোতেই একটি পুরোনো দোতলা বাড়ির নাম ‘বাগদাদি মহল’। এটাই পীর মজিবর রহমানের আস্তানা। বাড়িটি ছিল পরিত্যক্ত সম্পত্তি। এরশাদের আমলে চিশতি সেটা বরাদ্দ পান। এ বাড়ির নিচতলায় ৪টি এবং ওপরের তলায় ৫টি কক্ষ। নিচতলায় নুরে মদিনা আজমেরী দরবার, ওপরে চিশতির খাসকামরা ও ইবাদতখানা। দোতলায় একটি কক্ষে থাকেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের পদস্থ কর্মকর্তা হুমায়ুন চৌধুরীর স্ত্রী রিজিয়া চৌধুরী। অন্য কক্ষে এতিমখানা ও মাদ্রাসার মালামাল। সরু বারান্দার পাশে চিশতির থাকার ঘর। মেঝেতে ভেলভেটের কার্পেটের ওপর বিঘত-পুরু গদির ধবধবে সাদা বিছানা।

ক্রাইম রিপোর্ট লেখার ক্ষেত্রে একটি প্রচলিত সহজ পদ্ধতি হলো, শুরুতেই অকুস্থলের আদ্যোপান্ত পাঠককে জানিয়ে দেওয়া, যাতে পাঠক পরিবেশ-পরিস্থিতিটা ভালোভাবে বুঝতে পারেন। এ বাড়ির বাসিন্দা মোট তিনজন। চিশতি ছাড়াও দোতলায় একটি কক্ষে থাকেন রিজিয়া চৌধুরী।

নিচতলায় থাকেন পীরের কাজের ছেলে আলমগীর। তিনতলা থেকে দোতলায় আসার একটিমাত্র সিঁড়ি। সিঁড়ি থেকে চিশতির খাসকামরায় আসতে ৪টি লোহার গেট। অনুমতি ছাড়া বহিরাগত কারও ভেতরে আসা দুঃসাধ্য। সব গেটের চাবি থাকত আলমগীরের কাছে।

মোহাম্মদপুর থানার ওসি মহসিন উজ্জামান ততক্ষণে আলমগীরকে পাকড়াও করে গাড়িতে বসিয়ে রেখেছেন। ওসির অনুমতি নিয়ে আলমগীরের কাছে জানতে চাইলাম, রাতে কী হয়েছিল? আলমগীর বললেন, বৃহস্পতিবারের বিশেষ প্রার্থনার পর ১৫-১৬ জন লোক খাওয়াদাওয়া করেন। তাঁরা চলে যাওয়ার পর আসেন চিশতির খালাতো ভাই আমান ও তাঁর বন্ধু এরশাদ। রাতে খাওয়াদাওয়া শেষে তাঁরা চিশতির সঙ্গে বসে গল্প করতে থাকেন। এসব দেখে তিনি ঘুমাতে যান। সকালে উঠে দেখেন, আমান ও এরশাদ নেই, দরজায় বাইরে থেকে তালা দেওয়া। ভেতরে উঁকি মেরে দেখেন রক্তের দাগ। এরপর রিজিয়া চৌধুরীকে ডাকেন।

রিজিয়া চৌধুরী খুবই শক্ত মানুষ। সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলবেন না। আমার সামনে পুলিশকে বললেন, এ ঘটনা দেখে তিনি বাইরে গিয়ে সাবেক ব্যাংকার মঞ্জুরুল বারী, ভালুকার তৎকালীন এমপি আবদুল্লাহ চৌধুরী ও ব্যারিস্টার মনসুরকে ফোন করেন। এরপর পুলিশকে ফোন করেন। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে দেখে, বাথরুমের ভেতরে পড়ে আছে জবাই করা মরদেহ।

মজিবর রহমান চিশতির বয়স তখন ৫০-৫২ হবে, তিনি ছিলেন অবিবাহিত। তাঁর বাবা আনিস রহমান জয়পুরহাট জেলার চকবরকত গ্রামের সাধারণ কৃষক। তিন ভাই আর দুই বোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। তাঁর বড় ভাই আফাজ উদ্দিন ১৯৮৫ সালে ক্যানসারে মারা যান। মেজ ভাই শেখ সাদি ১৯৮৭ সালের ৫ জুলাই জয়পুরহাটে জমিজমা নিয়ে বিরোধে খুন হয়। চিশতির দুই বোন রহিমা ও মোমেনা ঢাকায় থাকেন। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে চিশতির কোনো পারিবারিক সম্পর্ক ছিল না। তিনি একাই মোহাম্মদপুরের আস্তানায় থাকতেন। মোহাম্মদপুরের সেই দরবার ছাড়াও মিরপুর ও ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকায় তাঁর আরও দুটি বাড়ি ছিল। আর জয়পুরহাটে ছিল কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি। মিরপুরের বাড়িতে একসময় এরশাদ ও জিনাত অভিসারে যেতেন। ঢাকা সেনানিবাসের একটি বাড়ি নিয়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল নাসিম আপত্তি জানিয়েছিলেন।  

এই লেখার শুরুতে আমি পীর মজিবর রহমানকে অত্যন্ত ‘ক্ষমতাধর’ লোক হিসেবে উল্লেখ করেছিলাম। সেটা এবার বলি। পীর মজিবর রাজশাহী ও নাটোরের দুটি মাদ্রাসায়  কয়েক বছর পড়েছিলেন। তবে সেটাও শেষ করতে পারেননি। গ্রামের লোকজনের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে ষাটের দশকে আজমির শরিফে গিয়ে বছরখানেক কাটান। ফিরে এসে নিজের নামের সঙ্গে চিশতি শব্দটি জুড়ে দেন। গ্রামে দরবার খুলে বসেন। স্বাধীনতার পর চলচ্চিত্র পরিচালক ইবনে মিজান একবার সেই আস্তানায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। ফিরে আসার পর সে বছর ইবনে মিজানের একটি ছবি ব্যবসাসফল হয়। এরপর চলচ্চিত্রের লোকজন দলে দলে তাঁর আস্তানায় ভিড় করতে থাকেন। সেই জোয়ারে কবরী সারওয়ারও মুরিদ হন।

এরপর ঢাকায় এসে মজিবর রহমান আস্তানা গাড়েন। ১৯৭৫ সালের দিকে কোতোয়ালির একটি আস্তানা থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। শোনা যায়, সে সময় তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর সে কথা ছড়িয়ে পড়লে তিনি ‘কামেল পীর’ খ্যাতি পেয়ে যান। এরপর জিয়াউর রহমানের সরকার ক্ষমতায় এসে তাঁকে মুক্তি দেন। ১৯৯৩ সালে তিনি সাদ্দাম হোসেনের আমন্ত্রণে ইরাক সফরে যান, সেখান থেকে ফেরার পথে ইসরায়েল ভ্রমণ করেন। ইসরায়েল থেকে দেশে ফেরার সময় ইমিগ্রেশন পুলিশ তাঁকে দেশে ঢুকতে না দিয়ে আবার ফেরত পাঠায়। পরে বেশ কিছুদিন বাইরে কাটিয়ে দেশে ফেরেন। ২০০০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আমেরিকা যাওয়ার সময় পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) তাঁর পাসপোর্ট আটক করে। এসবির কাছে খবর ছিল, একটি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করতে তিনি আমেরিকায় যাচ্ছেন। সেই থেকে তিনি আর বিদেশ যেতে পারেননি।

পীর মজিবর রহমান একবার সাপ্তাহিক বিচিত্রায় একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। তাতে বলেছিলেন, রিয়াজ আহমদ নামের তাঁর এক পাকিস্তানি মুরিদ ছিলেন, যাঁর ভাই জেনারেল ইমতিয়াজ ছিলেন পাকিস্তানি সেনা গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রধান। আইএসআই প্রধানের মাধ্যমে তিনি পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর আস্তানায় দাওয়াত করেছিলেন। সেই দাওয়াত কবুল করতে ১৯৮৯ সালের ১ অক্টোবর ৪৩ ঘণ্টার বাংলাদেশ সফরে এসে জয়পুরহাটে তাঁর আস্তানায় যান বেনজির। তিনি সেখানে ১০-১২ মিনিট অবস্থান করেন। শোনা যায়, সে সময় তিনি বেনজিরকে নিয়েও ভবিষ্যদ্বাণী করেন। বেনজির বাংলাদেশ থেকে চলে যাওয়ার পর মজিবর রীতিমতো ‘তারকা’ পীরে পরিণত হন। দেশের বিভিন্ন সংস্থা, বাহিনী ও সরকারি পদস্থ লোকেরা তাঁর আস্তানায় ভিড় করতে থাকেন। ধানমন্ডিতে সে সময় শের এ খাজা নামে আরেকজন বিখ্যাত হয়ে উঠছিলেন। তিনি একবার আমাকে বলেছিলেন, মজিবর রহমান হলেন ঢাকায় পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার ‘সেন্টার পয়েন্ট’।

এত কিছু শোনার পর প্রশ্ন উঠতেই পারে, এমন ক্ষমতাধর মানুষ খুন হলেন কী করে, কারাই-বা তাঁকে খুন করল। মজিবর রহমান খুনের ঘটনায় বাদী হয়ে মামলা করেছিলেন তাঁর মুরিদ আমানুল্লাহ চৌধুরী। সেই মামলা এখনো সিআইডি তদন্ত করছে। এত বছরেও তদন্ত শেষ হয়নি। ২০০৬-০৭ এর দিকে আমার সন্দেহ হয়, এই খুনে জেএমবি জঙ্গিদের হাত থাকতে পারে। কিন্তু জেএমবির প্রধান শায়খ আবদুর রহমান, আতাউর রহমান সানি ও বাংলা ভাইয়ের জবানবন্দি আমি তন্নতন্ন করে খুঁজেছি। অন্য অনেক পীর খুনের কথা বললেও তাঁরা কোথাও মজিবর খুনের কথা স্বীকার করেননি।

এখন একটাই আফসোস! যে পীর দুনিয়ার তাবৎ বড় বড় মানুষের ভবিষ্যদ্বাণী করে গেলেন, তিনি শুধু নিজের পরিণতির কথাটাই বুঝতে পারেননি।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১০
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।

গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।

সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।

এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র‍্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।

তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।

অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত