Ajker Patrika

যে অস্ত্রভান্ডারের সলিলসমাধি

কামরুল হাসান
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২২, ০৮: ৪৯
যে অস্ত্রভান্ডারের সলিলসমাধি

সবে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। গভীর সমুদ্রে নিয়মিত কাজে ব্যস্ত নৌবাহিনীর টহল জাহাজ এস আর আমিন। সেই জাহাজ থেকে আবছা আলোয় দূরে দেখা যাচ্ছিল বড় আকারের একটি ট্রলারের পাশে দুটি ছোট ট্রলার। ক্যাপ্টেন দুরবিন দিয়ে দেখতে পান, বড় ট্রলার থেকে বাক্সের মতো কিছু জিনিস নামানো হচ্ছিল ছোট ট্রলারে। ক্যাপ্টেনের সন্দেহ হলো। তিনি সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করলেন, কী হচ্ছে সেখানে। এরপর আদেশ দিলেন জাহাজের মুখ ঘুরিয়ে ট্রলারের কাছে যেতে।

নৌবাহিনীর জাহাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিল নৌযানগুলোর দিকে। কিন্তু যত কাছে যাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল বাক্সগুলো ট্রলারে তোলার গতি কমে যাচ্ছে। একপর্যায়ে দেখা গেল, বড় ট্রলার থেকে ছোট ট্রলারে না তুলে বাক্স ফেলা হচ্ছে পানিতে। এস আর আমিন যখন নৌযানগুলো ঘিরে ফেলল, ততক্ষণে সব শেষ। তিন ট্রলারে আর কোনো মালপত্রই অবশিষ্ট নেই। সব সাগরে তলিয়ে গেছে।

কী ছিল সেই জাহাজে? কেউ কিছু বলেন না। নৌবাহিনীর কর্মকর্তাদের সন্দেহ, বড় ট্রলারটি বিদেশি মালিকানার। ছোট ট্রলার দুটি দেশি—একটির নাম খিজির-১, অন্যটি খিজির-২। তিনটি নৌযানের সবাইকে নামিয়ে আনা হলো। গুনে দেখা গেল, সাকল্যে ২৮ জন। প্রথমে তাঁরা কেউ কিছুই বললেন না। পরে একজনকে সন্দেহ করে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই স্বীকার করলেন, তাঁর নাম মোহাম্মদ, তিনি পাকিস্তানি। ট্রলারে কী ছিল? তাঁর পরিষ্কার উত্তর, অস্ত্রের বাক্স ছিল। নৌবাহিনীর টহল জাহাজ দেখে ভয়ে সব অস্ত্র সাগরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। কত অস্ত্র ছিল? তার কোনো হিসাব নেই তাঁদের কাছে। তাঁরা শুধু জানেন, ট্রলারে আড়াই বাক্স অস্ত্র ছিল।

এ ঘটনা ২০০০ সালের ১৭ ডিসেম্বরের। গভীর সাগর থেকে নৌযান তিনটি আটক করা হলো। ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করে আনা হলো পতেঙ্গা থানায়। তৎপর হয়ে উঠল গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। মোহাম্মদকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হলো। তিনি স্বীকার করলেন, আরশাদ নামের এক ব্যক্তির কথামতো তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁর দায়িত্ব ছিল বাক্সগুলো আনোয়ারার গহিরা উপকূলে পৌঁছে দেওয়া। কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেল, ছোট আকারের ট্রলার দুটির মালিক গহিরার জলিল কোম্পানি। বড় ট্রলারের কাগজপত্রে পাওয়া গেল ইলিয়াস নামের এক ব্যক্তির নাম।

গোয়েন্দারা খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারলেন, আরশাদ নামের সেই ব্যক্তি ১৪ ও ১৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের সেন্টমার্টিন হোটেলে ছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর বেলা দুইটার দিকে চট্টগ্রামের ব্রিজঘাটা থেকে খিজির-১ ও খিজির-২ নামের নৌযান দুটি নিয়ে গভীর সাগরে রওনা হন। মোহাম্মদ গোয়েন্দাদের বলেছিলেন, আরশাদ তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন বাক্সগুলো গহিরায় পৌঁছে দিতে। বলা হয়েছিল, বাক্সগুলো গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারলে মোটা অঙ্কের অর্থ দেওয়া হবে তাঁকে। দুটি ছোট নৌযানের একটিতে ছিল ১২ জন, অন্যটিতে ১৬ জন। যে ট্রলারে করে বাক্সগুলো আনা হয়েছিল, সেটির ক্যাপ্টেন ছিলেন গুজরাটি। মোহাম্মদ ট্রলারে উঠে সংকেত দেওয়ার পরই বাক্সগুলো খালাসের অনুমতি দেন ক্যাপ্টেন। সেই সংকেত আরশাদ তাঁকে শিখিয়ে দিয়েছিলেন। ট্রলারের প্রতিটি বাক্সের ওজন ছিল ২০-২৫ কেজি।

মনে হয়, সে সময় ঘটনাটি নিয়ে ভালো প্রতিবেদন করেছিলেন চট্টগ্রামের সাংবাদিক মোয়াজ্জেমুল হক। সাগরে অস্ত্র ফেলে দেওয়ার ঘটনা নিয়ে সে সময় সরকারি মহলে ব্যাপক হইচই পড়েছিল। বিভিন্ন সংস্থা অনুসন্ধানও শুরু করেছিল একজোট হয়ে। কিন্তু তারা খুব বেশি এগোতে পারেনি। অস্ত্র ডুবিয়ে দেওয়ার ঘটনাস্থল ছিল এলিফ্যান্ট পয়েন্ট থেকে ৯৮ নটিক্যাল মাইল দূরে। সেখানে সাগরের গভীরতা ৯০ মিটারের মতো। নৌবাহিনীর জাহাজ শৈবাল অনেক চেষ্টা করেও কোনো বাক্সের হদিস করতে পারেনি। ছোট দুটি ট্রলার থেকে যাঁদের আটক করা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে একটির মাঝি ছিলেন ইউসুফ, অন্যটির সৈয়দ। তাঁরা বলেছিলেন, দুজনেই সেই ট্রলারে নতুন। কাউকে তাঁরা চেনেন না। ফিশারিঘাটের শফি কেরানি তাঁদের ওই ট্রলারে নিয়োগ দিয়েছিলেন। ট্রলারের বাকি লোকেরাও কথা বলেছিলেন একই সুরে। এঁদের সবাইকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হলে আদালত তাঁদের সাত দিনের রিমান্ড (জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজত) মঞ্জুর করেন। যেহেতু তাঁদের কাছ থেকে কোনো কিছুই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি, সে কারণে পাকিস্তানি মোহাম্মদ ছাড়া সবাইকে কিছুদিন পর মুক্তি দেওয়া হয়। কয়েক মাস জেল খেটে মোহাম্মদও ছাড়া পেয়ে দেশ ছাড়েন। ধীরে ধীরে সবাই ভুলতে থাকেন সাগরে অস্ত্র ফেলে দেওয়ার সেই ঘটনা। এ নিয়ে আর কোনো অনুসন্ধানও হয়নি।

এ ঘটনার চার বছর আগে ১৯৯৬ সালের ২৪ মার্চ কক্সবাজার শহর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তরে, মহেশখালীর পূর্ব পাশে চৌফলদণ্ডীতে ধরা পড়েছিল এক জাহাজভর্তি অস্ত্রের চালান। সেই চালানটি ধরেছিলেন কক্সবাজারের তৎকালীন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল হান্নান। পরে তিনি ডিবির (গোয়েন্দা শাখা) ডিসি (উপকমিশনার) হিসেবে অবসরে যান। মোহাম্মদ আবদুল হান্নান আমাকে বলেছিলেন, সাগরে ডুবিয়ে দেওয়া সেই অস্ত্রের চালান ছিল ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ উলফার। সে সময় তারা অস্ত্রগুলো কিনেছিল কম্বোডিয়ার খেমার রুজ গেরিলাদের কাছ থেকে। সেই চালান কেনার অস্ত্র জুগিয়েছিল পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই।

২০০৩ সালের ২৭ জুন বগুড়ার কাহালুতে নাগর নদের পাশে একটি ইটভাটায় পাওয়া গিয়েছিল আনারসভর্তি ট্রাকের ভেতরে চায়নিজ রাইফেলের এক লাখ গুলি এবং উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ১৭৪ কেজি বিস্ফোরক। সে সময় পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) সেই ট্রাকচালককে আটক করেছিল। চালক স্বীকার করেছিলেন, চালানটি এসেছিল হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের টিপরা বস্তি থেকে। তেলিয়াপাড়া চা-বাগানের ভেতরে ট্রাকে তোলা হয়েছিল ওগুলো। চা-বাগানটির মালিক ছিল বিএনপি আমলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খানের পরিবার। গুলি ও বিস্ফোরকের চালানটি পাঠিয়েছিল ত্রিপুরার বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এনএলএফটি।

এরপর ২০০৪ সালে ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান ধরা পড়ে চট্টগ্রাম থেকে। ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান নিয়ে তদন্তে বেরিয়ে আসে, সেই চালানের জন্যও অর্থ জুগিয়েছিল আইএসআই। আর তাদের হয়ে চালানের মূল্য বাবদ অর্থ অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানিকে পরিশোধ করেছিলেন দুবাইয়ের এআরওয়াই টিভির মালিক আবদুল রাজ্জাক ইয়াকুব।

কিছুদিন আগে দেখলাম, আসামের গোয়াহাটিতে বসবাসরত সাবেক উলফা নেতা অনুপ চেটিয়া বাংলাদেশের সময় টিভিকে বলছেন, ১০ ট্রাক অস্ত্রও ছিল উলফার। সেগুলো আসামে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তিনি একবারও বললেন না, অবৈধ অস্ত্রের চালান এনে একটি স্বাধীন দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেওয়ার অপচেষ্টার দায় তাঁরা এড়াতে পারেন না। তাঁদের গোষ্ঠীগত স্বার্থের জন্য বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করায় প্রতিবেশী দুটি দেশের যে টানাপোড়েন ছিল, সেই দায়ও নিলেন না তিনি।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

সন্ধ্যা থেকে বন্ধ থাকবে নির্বাচন ভবনের আশপাশের ব্যবসা কার্যক্রম

কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জরুরি অবতরণও করা যাবে না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

সন্ধ্যা থেকে বন্ধ থাকবে নির্বাচন ভবনের আশপাশের ব্যবসা কার্যক্রম

কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জরুরি অবতরণও করা যাবে না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

সন্ধ্যা থেকে বন্ধ থাকবে নির্বাচন ভবনের আশপাশের ব্যবসা কার্যক্রম

কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জরুরি অবতরণও করা যাবে না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

সন্ধ্যা থেকে বন্ধ থাকবে নির্বাচন ভবনের আশপাশের ব্যবসা কার্যক্রম

কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জরুরি অবতরণও করা যাবে না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১০
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।

গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।

সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।

এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র‍্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।

তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।

অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

সন্ধ্যা থেকে বন্ধ থাকবে নির্বাচন ভবনের আশপাশের ব্যবসা কার্যক্রম

কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জরুরি অবতরণও করা যাবে না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত