Ajker Patrika

মাঝরাতে ববিতা কেন থানায়

কামরুল হাসান
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২২, ১৩: ০২
মাঝরাতে ববিতা কেন থানায়

ভারতীয় সিনেমার চিরসবুজ নায়ক দেব আনন্দের ব্যাপারে বোম্বের (মুম্বাই) আদালতের একটি অদ্ভুত নির্দেশনা ছিল, তিনি কালো পোশাক পরে পথে বেরোতে পারবেন না। কারণ, কালো পোশাক পরলে তাঁকে দুর্দান্ত দেখাত। এমনিতেই স্মার্ট, সুপুরুষ তিনি। তার ওপর গায়ের উজ্জ্বল রং আরও ফুটত কালো রঙের বৈপরীত্যে। চোখের সামনে এ রকম ঝকঝকে চেহারা দেখে নারীকুল আকসার দুর্ঘটনা ঘটাত। নিজেকে সামলাতে না পেরে বাড়ির ছাদ অথবা বারান্দা থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন, এমন নজিরও ছিল। সেই জনপ্রিয়তার লহর ঠেকাতে শেষ পর্যন্ত আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল।

এ তো গেল ওপারে দেব আনন্দের গল্প। এপারে, বাংলাদেশে, এক নায়িকাকেও কম নাকাল হতে হয়নি। এক পাগল ভক্তের উপদ্রব থেকে নিজেকে রক্ষা করতে কিছুদিন তিনি আড়ালে চলে যান, এরপর গোপনে চলাফেরা শুরু করেন। এতেও কাজ না হওয়ায় নিজের বাড়ি ছেড়ে দিয়ে ওঠেন ভাড়া বাড়িতে। তারপরও নিস্তার নেই, শেষ পর্যন্ত সেই ভক্তের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে তাঁকে জেলে পাঠান।

আসলে তারকাখ্যাতির বিড়ম্বনাও অনেক। তাঁরা কোথায় যাচ্ছেন, কী করছেন, সেসব নিয়ে কোনো কোনো ভক্তের আগ্রহ সীমা ছাড়িয়ে যায়। তারকাদের ব্যক্তিগত জীবনের ছোট-বড় বহু ঘটনাও তখন চলে আসে সবার সামনে। যাঁকে নিয়ে এতক্ষণের এই অবতারণা, তিনি আর কেউ নন, এপারের কিংবদন্তি নায়িকা, সত্যজিৎ রায়ের অনঙ্গ বউ ববিতা।

আজকের গল্পটা শুরুর আগে ববিতার ঠিকুজিটা একটু ঝালাই করে নিই। তাঁর পুরো নাম ফরিদা আক্তার পপি। জন্ম ১৯৫৩ সালের ৩০ জুলাই, যশোরে। কিন্তু বড় হয়েছেন পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায়। বাবা নিজামুদ্দীন আতাউর ছিলেন সরকারি চাকুরে, মা বেগম জাহানারা চিকিৎসক। ১৯৬৮ সালে পপির অভিনয়জীবনের শুরু। বড় বোন সুচন্দার স্বামী চলচ্চিত্র নির্মাতা জহির রায়হানের উৎসাহে ‘সংসার’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিনয় জগতে নাম লেখানো। সেই ছবিতে নায়করাজ রাজ্জাক ছিলেন তাঁর বাবা আর বোন সুচন্দা অভিনয় করেন মায়ের ভূমিকায়। ‘সংসার’ ছবির পর জহির রায়হান ‘শেষ পর্যন্ত’ সিনেমায় নায়িকা করেন পপিকে। ১৯৬৯ সালের ১৪ আগস্ট সিনেমাটি মুক্তি পায়। ওই দিনই পপির মা মারা যান। তখনো তিনি ববিতা হয়ে ওঠেননি, পরিচিতি পপি নামেই। ‘সংসার’-এর বছর দুয়েক পর জহির রায়হানের পরের সিনেমা ‘জ্বলতে সুরজ কি নিচে’-এর প্রযোজক আফজাল চৌধুরী আর তাঁর স্ত্রী মিলে সিনেমার নায়িকার নাম দেন ববিতা। এরপর দিনে দিনে তিনি হয়ে ওঠেন হার্টথ্রব নায়িকা, বাংলা সিনেমার প্রাণশক্তি।

জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকার সময় ববিতা চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ইফতেখার আলমকে বিয়ে করেন। তাঁদের ঘর আলো করে আসে একমাত্র ছেলে অনিক। ১৯৯৩ সালে অনিকের বয়স যখন ৩, তখনই স্বামী ইফতেখার আলম মারা যান। সেই থেকে ছেলে অনিককে ঘিরে পাক খায় ববিতার জীবন। অনিক এখন কানাডায় ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। ববিতা বছরের বেশির ভাগ সময় কানাডায় কাটান, ছেলের সঙ্গে।

সেই ববিতা ২০০১ সালের ২৮ অক্টোবর রাতে গুলশান থানায় এলেন এক ভক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে। গুলশান থানার ওসি ছিলেন শরিফুল হক সিদ্দিকী। রাতের বেলা ববিতাকে থানায় দেখে তিনি ভূত দেখার মতো চমকে উঠলেন। ববিতা একটি লিখিত অভিযোগ দিয়ে তাঁকে বললেন, এস এম জহিরুল আলম নামের এক ভক্ত তাঁর জীবন বিষিয়ে তুলেছেন। দিনে-রাতে লোকটি তাঁকে ফলো করছেন। বাড়ির আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকছেন, সময়-অসময়ে ফোন করে উল্টোপাল্টা কথা বলছেন। গৃহকর্মীদের ডেকে দামি উপহার পাঠাচ্ছেন। তাঁর অত্যাচারে বাসায় কোনো গৃহকর্মীও থাকতে পারছে না।

ববিতার সেই অভিযোগের একটি কপি পরদিন আমার হাতেও আসে। তাতে ববিতা বলেন, দুই বছর ধরে লোকটার সঙ্গে তাঁর পরিচয়। প্রথমে ভক্ত পরিচয় দিয়ে বাসায় ফোন করেন। শুরুতে ববিতা মনে করেছিলেন আর দশজন ভক্তের মতোই। কিন্তু ধীরে ধীরে লোকটি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। একদিন ফোন করে ববিতাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। ববিতা তা প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর লোকটি ববিতার ছোট বোন চম্পার স্বামী সহিদুল ইসলাম জিন্নার সঙ্গে দেখা করেন। তাঁর কাছে গিয়েও বিয়ের প্রস্তাব দেন। এতেও কাজ হয়নি। একপর্যায়ে ববিতার ভাই পাইলট ইকবালের সঙ্গে দেখা করেন। পুরো পরিবারে এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর লোকটি একটি দৈনিকে সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেন, ববিতার সঙ্গে তাঁর বিয়ে পাকাপাকি হয়ে গেছে। তিনি ববিতার সঙ্গে কলকাতা বেড়াতে যাচ্ছেন। বিদেশে ঘোরাঘুরির খরচের জন্য ববিতাকে ১০ লাখ টাকাও দিয়েছেন তিনি।

ববিতা তাঁর অভিযোগে আরও বলেন, লোকটা এখন তাঁর বাসার পাশের রাস্তায় দিনরাত লোকজন নিয়ে বসে থাকছেন। বাড়ি থেকে বের হলেই তাঁকে ফলো করছেন। লোকটার অত্যাচারে তিনি নিজের বাসা ছেড়ে অন্য একটি ভাড়া বাসায় উঠেছেন। এরপর ববিতার নিজস্ব খালি বাসাটি ভাড়া নেওয়ার জন্য লোকটি নানা ফন্দি আঁটতে থাকেন। পরে ববিতা অনেক কৌশলে বাসাটি ইউএনডিপিকে ভাড়া দেন। তারপরও লোকটি পিছু ছাড়েননি। এমনকি আজ তিনি থানায় আসার সময় দেখেন, লোকটাও থানার একটু দূরে দাঁড়িয়ে। ববিতার সেই অভিযোগের ভিত্তিতে নারী নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয় গুলশান থানায়।

মামলাটির তদন্ত করছিলেন গুলশান থানার সেকেন্ড অফিসার মকফুবার রহমান সুইট। তিনি এখন এসপিবিএনে গণভবনে কর্মরত। সুইট একদিন আমাকে বললেন, ববিতার ভক্ত এবং এই মামলার আসামি এস এম জহিরুল আলম সাধারণ কেউ নন, তিনি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের পরিচালক। এর আগে তিনি শিল্প ঋণ সংস্থায় বড় পদে ছিলেন। লোকটি তিন সন্তানের জনক, তাঁর অনেক সহায়সম্পদও আছে। আমার মনে খটকা লাগল, এ রকম একজন মানুষ কেন এই কাণ্ড করতে যাবেন!

সুইটের কাছ থেকে আসামির হদিস জানার পর গেলাম সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে। সেখানকার কর্মকর্তারা বললেন, জহিরুল তিন দিন ধরে অফিসে আসছেন না। তাঁর পিয়নের কাছ থেকে নম্বর নিয়ে গেলাম লালমাটিয়ায়, জহিরুল আলমের বাসায়। তিনি বাসাতেই ছিলেন। পরিচয় পেয়ে কথাও বললেন। নিজের পড়াশোনা, পেশা, পরিবার নিয়ে কথা বললেন। জহিরুল আলমের বাড়ি শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে। ঢাকায় বেশ কয়েকটি বাড়ির মালিক। তিন মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন লালমাটিয়ায় নিজের বাড়িতে। তিনি এমনভাবে কথা বলছেন, যেন কোনো কিছুই হয়নি। আমাকে বারবার বললেন, ববিতাকে বিয়ে করার ব্যাপারে তাঁর প্রথম স্ত্রী অনুমতি দিয়েছেন। সেটা কাগজে লেখাও আছে। আমি বললাম, এটা নিয়ে ববিতার সঙ্গে আপনার আদৌ কোনো কথা হয়েছে? তিনি বললেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর ববিতা একাই থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমার ভালোবাসার কাছে হেরে গিয়ে বিয়ে করতে রাজি হয়েছেন।’ চার বছর ধরে তাঁদের পরিচয়, কমপক্ষে ২০ বার দেখাও করেছেন। এর মধ্যে এক সপ্তাহ আগে লোক পাঠিয়ে ১০ লাখ টাকাও নিয়েছেন ববিতা। জহিরুল আলম এমনভাবে বলছেন যে সত্য-মিথ্যার ফারাক বোঝা কঠিন।

যাহোক, ৩ নভেম্বর (২০০১) জহিরুল আলমকে গুলশান থানা-পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাঁকে রিমান্ডেও নেওয়া হয়। আমাকে তিনি যা বলেছিলেন, রিমান্ডে এসে সেই একই কথা বলেন। রিমান্ডে থাকার সময় একবার আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলাম। দেখলাম, তিনি খুব স্বাভাবিক, তাঁর কথায় কোনো নড়চড় নেই।

জহিরুলকে কারাগারে পাঠানো হলো। কিছুদিন পর তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রও দেওয়া হয়। সেই মামলার তদন্তকারী সুইটের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার কথা হলো, সুইট বললেন, জহিরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাদী ববিতা কোনো দিন আদালতে যাননি। বাদীর অনুপস্থিতিতে মামলা থেকে অব্যাহতি পান জহিরুল। এরপর জহিরুলের আর কোনো খোঁজ জানেন না সুইট। লোকটা কত দিন জেলে ছিলেন, তা-ও আর বলতে পারলেন না।

সেই ঘটনার রিপোর্ট করতে গিয়ে আমি দুবার ববিতার সঙ্গে কথা বলেছিলাম। বৃহস্পতিবার আবার যোগাযোগের চেষ্টা করে শুনলাম, তিনি কানাডায় ছেলের কাছে আছেন।

অনেক দিন পর সেই ঘটনা নিয়ে লিখতে গিয়ে একটা মজার অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল। সেদিন লোকটার সঙ্গে কথা বলে লালমাটিয়ার বাসা থেকে বেরিয়ে আসার সময় তিনি আমার হাত ধরে খুব কাকুতি-মিনতি করে বললেন, ‘ভাই, আমি সত্যিই ববিতাকে খুব ভালোবাসি। এর জন্য জেল হলেও সেটা মেনে নেব।’

জহিরুল আলমকে আমার খুব অদ্ভুত মনে হয়েছিল, কিছুটা বেয়াড়াও। আজ এত বছর পর মনে হলো, মানুষের মন বড় বিচিত্র, বড়ই নিয়ন্ত্রণহীন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা ভাঙে আবার জোড়া লাগে। সেই মন কখন, কোন দিকে বাঁক নেয়, তা বোধ হয় সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কেউই জানেন না।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খুনের পর মোবাইল, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট, ‘গৃহকর্মী আয়েশা’র পরিচয় মেলেনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৭
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।

স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।

মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।

মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সৌদি আরবে অপহরণ, ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি দেশে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।

গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুলিশের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ২৫
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’

কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।

পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’

যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’

গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’

ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।

নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।

সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অতি লোভে তাঁতি নষ্ট: ৬০০ কোটি টাকা হারালেন নওগাঁর ৮০০ জন!

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ১৮: ৩৪
বুধবার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার মো. নাজিম উদ্দিন তনু। ছবি: সিআইডি
বুধবার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার মো. নাজিম উদ্দিন তনু। ছবি: সিআইডি

‘অতি লোভে তাঁতি নষ্ট’— প্রচলিত প্রবাদ যে হুবহু বাস্তবে ঘটতে পারে, তার প্রমাণ মিলল উত্তরাঞ্চলের জেলা নওগাঁয়। এই জেলার ৮০০ জনের বেশি মানুষকে অতি মুনাফার ফাঁদে ফেলে ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে।

বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অন্যতম হোতা মো. নাজিম উদ্দিন তনুকে (৩৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ—সিআইডি। গতকাল বুধবার সকালে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় রাজধানী ঢাকার দক্ষিণখান এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সিআইডির পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার মো. নাজিম উদ্দিন তনুর বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার জগৎসিংহপুরে। প্রায় এক বছর আগে ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর নওগাঁ সদর থানায় নাজিম উদ্দিনসহ কয়েকজনের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা করেছিলেন এক ব্যক্তি। মামলাটি বর্তমানে সিআইডির নওগাঁ জেলা ইউনিট পরিচালনা করছে।

মামলার তদন্তে জানা যায়, প্রতি মাসে ১ লাখ টাকার বিপরীতে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের টাকা নেয় ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ নামের একটি এনজিও। এনজিওটির কার্যালয় নওগাঁ সদরের অফিসপাড়া এলাকায়। পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন তনু।

প্রথম দিকে পরিচালকদের মনোনীত কিছু গ্রাহককে এই হারে লভ্যাংশ দেয় বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন। পরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকেরা সুকৌশলে প্রচার করা শুরু করেন। তাঁদের এই ফাঁদে পড়ে বহু সাধারণ মানুষ বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনে গ্রাহক হিসেবে বিনিয়োগে আগ্রহী হন। মামলার বাদী নিজেই ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের পর থেকে বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনে আর্থিক লেনদেনে অস্বচ্ছতা দেখা দেয়। ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা সে সময় থেকে তাঁদের জমাকৃত কিংবা ঋণের অর্থ ঠিকঠাক উত্তোলন করতে পারছিলেন না। বিষয়টি নিয়ে অভিযাগ জানালে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে গ্রাহকদের কাছে কিছুটা সময় চেয়ে নেন পরিচালক তনু।

কিন্তু গত বছরের নভেম্বরে আও বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে গিয়ে বাদীসহ অন্য ভুক্তভোগীরা নিজেদের অর্থ ফেরত চাইলে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন টালবাহানা ও সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। একপর্যায়ে গ্রাহকদের অর্থ দেওয়া হবে না মর্মে জানিয়ে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

এই ঘটনার পর বাদী নওগাঁ সদর থানায় মামলা (মামলা নম্বর ২০, তারিখ ১২-১১-২০২৪, ধারা-৪০৬/৪২০ পেনাল কোড-১৮৬০) করেন। বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন যে ভুক্তভোগীদের প্রায় ১৫০ কোটি টাকা প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল।

তবে সিআইডি জানায়, এ পর্যন্ত আট শতাধিক ভুক্তভোগী ৬০০ কোটির বেশি টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় মো. নাজিম উদ্দিন তনুসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত