Ajker Patrika

১ আগস্ট থেকে কানাডার ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে: ট্রাম্প

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৫, ১১: ৩৩
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

আগামী ১ আগস্ট থেকে কানাডা থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করবে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল বৃহস্পতিবার এ ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কানাডা যদি কোনো প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেয়, তাহলে শুল্কহার আরও বাড়ানো হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

নিজ মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনিকে উদ্দেশ্য করে লেখা এক চিঠি প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। গত সোমবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেসব বাণিজ্যিক হুমকি সংবলিত চিঠি পাঠিয়ে আসছেন, বৃহস্পতিবারের চিঠিটি ছিল তারই সর্বশেষ উদাহরণ। এ নিয়ে চিঠির সংখ্যা দাঁড়াল ২০টিরও বেশি। বিশ্বের বহু অর্থনীতির বিরুদ্ধে ট্রাম্পের চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের হুমকির অংশ হিসেবেই এগুলো পাঠানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবারের চিঠিটি এমন এক সময়ে এল, যখন ট্রাম্প ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনির মধ্যে সম্পর্ক কিছুটা উষ্ণ হয়ে উঠেছিল। গত ৬ মে কারনি হোয়াইট হাউসে গিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে ওভাল অফিসে এক সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠক করেন। এরপর গত মাসে কানাডায় অনুষ্ঠিত জি৭ সম্মেলনেও তাঁদের আবার সাক্ষাৎ হয়। ওই সম্মেলনে অন্য নেতারা ট্রাম্পকে তাঁর কঠোর বাণিজ্যনীতি থেকে সরে আসার আহ্বান জানান।

তবে এনবিসি নিউজকে বৃহস্পতিবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, যেসব বাণিজ্যিক অংশীদার দেশ এখনো এমন চিঠি পায়নি, তারাও শিগগিরই শুল্কের আওতায় পড়বে। ট্রাম্প বলেন, ‘সবাইকে চিঠি পাঠাতে হবে এমন নয়। সব দেশকেই শুল্ক দিতে হবে—হয় ২০ শতাংশ, নয়তো ১৫ শতাংশ। পরিমাণ নির্ধারণে কাজ করছি আমরা।’

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। একই সঙ্গে তামার ওপর বসানো হয়েছে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ও বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েন বাড়তে পারে। এতে বিশ্ব অর্থনীতিতেও অস্থিরতা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদেরা।

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা ২১ জুলাইয়ের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আলোচনায় অগ্রগতি না হলে ওই সময়সীমার মধ্যে চুক্তি হওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। আর এতে প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে উত্তর আমেরিকার বহুল আলোচিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ইউএসএমসিএ। ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক শুল্ক হুমকি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক সূত্র।

মেক্সিকো ও কানাডা, দুই দেশই এখন ট্রাম্পের মন জুগিয়ে চলার চেষ্টা চালাচ্ছে, যাতে তিন দেশের মধ্যে বিদ্যমান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিটি আবার কার্যকর করা যায়।

উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্সির প্রথম মেয়াদে ২০২০ সালের জুলাইয়ে পুরোনো নাফটা চুক্তি বাতিল করে নতুন যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তি (ইএসএমসিএ) চালু করেন ট্রাম্প। এই চুক্তির পর্যালোচনার সময়সীমা ছিল আগামী বছরের জুলাই। তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করায় তিন দেশের মধ্যে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি।

শুরুতেই কানাডা ও মেক্সিকো থেকে পণ্য আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের অভিযোগ— যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের ঢল আর ভয়ংকর ফেন্টানিল মাদকের পাচার রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না এ দুই প্রতিবেশী। পরে পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল হয়। ইউএসএমসিএ চুক্তির আওতায় যেসব পণ্য আমদানি হয়, সেগুলোর একটি বড় অংশকে শুল্ক থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বিশেষ করে সার উৎপাদনে ব্যবহৃত পটাশের ওপর কম শুল্ক আরোপ করা হয়।

তবে চলমান শুল্ক হুমকি এবং ট্রাম্পের কড়া অবস্থানের কারণে প্রশ্ন উঠেছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বাণিজ্য আলোচনা সফল হবে কি না। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের হঠাৎ ঘোষিত শুল্কনীতি এবং শাসকসুলভ আচরণ এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও কূটনৈতিক ভারসাম্যকে ব্যাহত করতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত